পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যিনি আসিয়াছিলেন, তাহার পরিচ্ছদ সচরাচর বাঙ্গালী ভদ্রলোকের মত ; বিশেষ পারিপাট্য, অথবা পারিপাট্যের বিশেষ অভাবও কিছু ছিল না, কিন্তু তাহার অঙ্গুলিতে একটি হীরকাঙ্গুরীয় ছিল, তাহ দেখিয়া, রাধারাণীর কৰ্ম্মকারকগণ অবাক হইয়া তৎপ্রতি চাহিয়৷ রহিল, এত বড় হীরা তাহারা কখন অজুরীয়ে দেখে নাই। তাহার সঙ্গে কেহ লোক ছিল ন, এজন্ত তাহারা জিজ্ঞাসা করিতে পারিল না যে, কে ইনি ? মনে করিল, বাৰু স্বয়ং পরিচয় দিবেন। কিন্তু বাৰু কোন পরিচয় দিলেন না। তিনি রাধারাণীর দেওয়ানজির সহিত সাক্ষাৎ করিয়া তাহার হস্তে একখানি পত্র দিলেন। বলিলেন, “এই পত্র আপনার মুনিবের কাছে পাঠাইয়া দিয়া, আমাকে উত্তর আনিয়া দিন।” দেওয়ানজি বলিলেন, “আমার মুনিব স্ত্রীলোক, আবার অল্পবয়স্ক। এজন্য তিনি নিয়ম করিয়াছেন যে, কোন অপরিচিত লোকে পত্র আনিলে আমরা তাহা না পড়িয় তাহার. . কাছে পাঠাইব না।” _ আগন্তুক বলিল, “আপনি পড়ুন।” দেওয়ানজী পত্র পড়িলেন— “প্রিয় ভগিনি । এ ব্যক্তি পুরুষ হইলেও ইহার সহিত গোপনে সাক্ষাৎ করিও—ভয় করিও না। যেমত যেমত ঘটে, আমাকে লিখিও । শ্ৰীমতী বসন্তকুমারী।” কামাখ্যা বাবুর কন্যার স্বাক্ষর দেখিয়া, কেহ আর কিছু বলিল না। পত্র অন্তঃপুরে গেল । অন্তঃপুর হইতে পরিচারিকা, পত্রবাহক বাবুকে লইতে আসিল । আর কেহ সঙ্গে যাইতে পাইল না—হুকুম নাই। পরিচারিক, বাবুকে লইয়া এক মুসজ্জিত গৃহে বসাইলেন। রাধারাণীর অন্তঃপুরে সেই প্রথম পুরুষ মানুষ প্রবেশ করিল। দেখিয়া এক জন পরিচারিকা রাধারাণীকে ডাকিতে গেল, আর এক জন অন্তরালে থাকিয়া আগন্তুককে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। দেখিল যে, তাহার বর্ণটুকু গেীর, ফুটিত মল্লিকারাশির মত গৌর ; তাহার শরীর দীর্ঘ, ঈষৎ স্থূল ; কপাল