পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

श्रेझ्नोश् দেখিল, শান্ত মুখের উপর যেন একখানা অশান্তির স্বল্প জাল পড়িয়া আছে ; কপালের উপর যে কয়েকটা রেখা পড়িয়াছে, এক বৎসর পূর্বেও সেখানে সে-সকল দাগ ছিল না। সমস্ত মুখের চেহারাটাই আজ যেন তাহার মনে হইল, কিসের গোপন ব্যথায় শ্রান্ত, পীড়িত। সে নি:শব্দে আসিয়াছিপ, নি:শব্দেই চলিয়া যাইতে চাহিয়াছিল ; কিন্তু পিকদানিটা পায়ে ঠেকিয় যেটুকু শৰ হুইল তাহাতেই মহিম চোখ মেলিয়া চাহিল। অচলা অপ্রস্তুত হইয়া কহিল, এখন ঘুমাচ্চো যে? অম্বখ করেনি ত ? মহিম চোখ রগড়াইয়া উঠিয়া বসিয়া বলিল, কি জানি, অস্থখ না হওয়াই ত আশ্চৰ্য্য । অচলা আর দ্বিতীয় প্রশ্ন না করিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । খাওয়া-দাওয়ার পরেই মরেশ যাত্রার জন্য প্রস্তুত হটতেছিল, মহিম অদূরে একখানা চৌকির উপর বসিয়া তাহার সহিত কথাবাৰ্ত্ত কহিতেছিল ; অচলা দ্বারের নিকটে আসিয়া বিন ভূমিকায় বলিয়া উঠিল, কাল আমিও যাচ্ছি। স্থবিধে হলে বাবার সঙ্গে দেখা করবেন। * সুরেশ বিস্ময় প্রকাশ করিয়া কহিল, তাই নাকি ? বলিয়াই মহিমের মুখের প্রতি চোখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, বৌঠানকে তুমি কালই কলকাতা পাঠাচ্ছ নাকি মহিম ? স্ত্রীর এই গায়ে-পড়া বিরুদ্ধতায় মহিমের ভিতরটা যেন জলিয়া উঠিল ; কিন্তু সে মুখের ভাব প্রসন্ন রাখিয়াই মৃদু হাসিয়া বলিল, আর কোন বাধা ছিল না, কিন্তু আমাদের এই পল্লীগ্রামের গৃহস্থঘরে নাটক তৈরী করার রীতি নেই। কালই বা কেন, আজই ত তোমার সঙ্গে পাঠিয়ে দিতে পারতুম। সুরেশের মুখ লজ্জায় আরক্ত হইয়া উঠিল ; অচলা চক্ষের পলকে তাহা লক্ষ্য করিয়া জোর করিয়া হাসিয়া বলিল, স্বরেশবাবু, আমাদের সহরে বাড়ি বলে লঙ্গিত হবার কারণ নেই। অমুস্থ বাপ-মাকে দেখতে যাওয়া যদি পাড়াগায়ের রীতি না হয়, আমি ত বলি আমাদের সহরের নাটকই ঢের ভাল। আপনি না হয় আজকের দিনটেও থেকে যান না, কাল না হয় একসঙ্গেই যাবো! তাহার অপরিসীম ঔদ্ধত্যে স্বরেশের মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল। সে মাখা হেঁট করিয়া বলিতে লাগিল, না, না, আমার আর থাকবার জো নেই বৌঠান । তোমার ইচ্ছে হলে কাল যেয়ে, কিন্তু আমি আজই চললুম। বলিতে বলিতেই সে তীব্র উত্তেজনায় হঠাৎ ব্যাগটা হাতে করিয়া উঠিয়া দাড়াইল । তাহার উত্তেজনার আবেগ অচলাকেও একবার যেন মূল হইতে নাড়িয়া দিল। 3 s >