পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দেখিতে পাইল । অচলা যে কি ইঙ্গিত করিয়াছে, আর বুঝিতে বিলম্ব হইল না। সেটুকু হাতের মধ্যে লইয়া মহিম বিছানার উপর বসিয়া শূন্ত দৃষ্টিতে বাহিরের অন্ধকারে চাহিয়া চুপ করিয়া রহিল । যেমন করিয়া সে প্রথম দিনটিতে আসিয়াছিল, যেভাবে সে চলিয়া গিয়াছিল, সতীন বলিয়া সে অচলাকে যত পরিহাস করিয়াছে— একটি একটি করিয়। তাহার সমস্ত মনে পড়িতে লাগিল। পল্লীগ্রামের এইসকল বৃহস্তালাপের সহিত যে মেয়ে পরিচিত নয়, প্রতিদিন তাহার যে কিরূপ বিধিয়াছে, এবং সে নিজেও যখন কোনদিন এই পরিহাসে খোলা মনে যোগ দিতে পারে নাই, বরঞ্চ স্ত্রীর সম্মুখে লঙ্গ পাইয়া বারংবার বাধা দিবার চেষ্টা করিয়াছে—তাহার সেই লজ্জা যদি এই উচ্চশিক্ষিতা বুদ্ধিমতী রমণীর ধারণায় অপরাধীর সত্যকার লজ্জা বলিয়া ধীরে ধীরে বদ্ধমূল হইরা উঠিয় থাকে ত আজ তাহার মূলোচ্ছেদ করিবে সে কি দিয়া ? বাহিরের অন্ধকারের ভিতর হইতেই আজ অনেক সত্য তাহাকে দেখা দিতে লাগিল ; কেমন করিয়া অচলার হৃদয় ধীরে ধীরে সরিয়া গিয়াছে, কেমন করিয়া স্বামীর সঙ্গ দিনের পর দিন বিষাক্ত হইয়াছে, কেমন করিয়া স্বামীর আশ্রয় প্রতিমুহূর্তে কারাগার হইয়া উঠিয়াছে, সমস্তই সে যেন স্পষ্ট দেখিতে লাগিল । এই প্রাণান্তকর অবরোধের মধ্য হইতে পরিত্রাণ পাইবার সেই যে আকুল প্রার্থনা সুরেশের কাছে তখন উচ্ছসিত হইয়া উঠিয়াছিল—সে যে তাহার অস্তরের কোন অন্তরতম দেশ হইতে উত্থিত হইয়াছিল, তাহাও আজ মহিমের মনশ্চক্ষের সম্মুখে প্রচ্ছন্ন বুহিল না । অচলাকে সে যথার্থই সমস্ত হৃদয় দিয়া ভালবাসিয়াছিল । সেই অচলার এতদিন এত কাছে থাকিয়াও, তাহার এত বড় মনোবেদনার প্রতি চোখ বুজিয়া থাকাটাকে সে গভীর অপরাধ বলিয়া গণ্য করিল। কিন্তু এমন করিয়া আর ত একটা মুহূৰ্ত্তও চলিবে না। স্ত্রীর হৃদয় ফিরিয়া পাইবার উপায় আছে কি না, তাহা কোথায় কত দূরে সরিয়া গিয়াছে, অহমান করাও আজ দুঃসাধ্য। কিন্তু অনেক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়াও স্বামী বলিয়া যাহাকে সে একদিন আশ্রয় করিয়াছিল, তাহারই কাছে অপমান এবং লাঞ্ছনা পাইয় যে আজ তাহাকে ফিরিতে হইতেছে, এত বড় ভুল ত তাহাকে জানানো চাই। মহিম ধীরে ধীরে উঠিয়া গিয়া অচলার দ্বারের সম্মুখে দাড়াইয়া দেখিল কবাট রুদ্ধ এবং ঠেলিয়া দেখিল, তাহ ভিতর হইতে বন্ধ । আস্তে আস্তে বার দুই ডাকিয়া যখন কোন সাড়া পাইল না, তখন শুধু যে জোর করিয়া শাস্তিভঙ্গ করিবারই তাহার প্রবৃত্তি হইল না তাহা নহে, একটা অতি কঠিন পরীক্ষার দায় হইতে আপাততঃ নিষ্কৃতি পাইয়া নিজেও যেন বাচিয়া গেল । মহিম ফিরিয়া আসিয়া শয্যায় গুইয়া পড়িল । কিন্তু যাহার অভাবে পার্থের স্থানটা আজ শূন্ত পড়িয়া রছিল, ও-ঘরে গে অনশনে মাটিতে পড়িয়া আছে মনে ծ աԵ