পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কেদারবাবু বলিলেন, তুমি চাওনি সত্য, কিন্তু আমার ত দেওয়া উচিত। এতদিন যে দিইনি, সেই আমার যথেষ্ট অন্যায় হয়ে গেছে স্বরেশ ; কাগজখানা তুমি পকেটে তুলে রাখে । বুড়ো হয়েচি, হঠাৎ যদি মরে যাই, টাকাটার গোল হতে পারে । মরেশ আবেগের সহিত জবাব দিল, কেদারবাৰু, স্বরেশ আর যাই করুক, সে টাকা নিয়ে কখনো কারোর সঙ্গে গোল করে না। তা ছাড়া আপনি নিজেও বেশ জানেন, এ টাকা আমি চাইনে—এ আমি আমার বন্ধুকে যৌতুক দিয়েচি । কেদারবাবু বলিলেন, তা হলে সে তোমার বন্ধুকে দিয়ে, আমাকে নয়। আমি যা নিয়েচি, সে আমারই ঋণ । * স্বরেশ কহিল, বেশ আমার বন্ধুকেই দেবে, বলিয়া কাগজখান টেবিল হইতে তুলিয়া লইয়া দুই পা পিছাইয়া গিয়া অচলার সম্মুখে দাড়াইবামাত্রই, কেদারবাৰু অগ্ন গুপাতের ন্যায় প্রজলিত হইয়া উঠিলেন। চীৎকার করিয়া বলিলেন, খবরদার, স্বরেশ ! কাল থেকে অনেক অপমান আমি নিঃশব্দে সহ করেচি, কিন্তু আমার মেয়েকে আমার চোখের সামনে তুমি টাকা দিয়ে যাবে, সে আমার কিছুতেই সইবে না বলে দিচ্ছি। বলিয়া কাপিতে কঁাপিতে র্তাহার আরাম-কেদারায় ধপ, করিয়া বলিয়া পড়িলেন। প্রথমটা স্বরেশ চমকিয়া কেদারবাবুর প্রতি নির্নিমেষ-দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল। তিনি ওইরূপে বসিয়া পড়িলে সে তাহার বিবৰ্ণ মুখ অচলার প্রতি ফিরাইয় দেখিল, সে এক মুহূর্তে যেন পাষাণ হইয়া গিয়াছে। প্রবল চেষ্টায় একবার স্বরেশ কি একটা বলিতেও গেল ; কিন্তু তাহার শুষ্ক কণ্ঠ হইতে একটা অব্যক্ত ধ্বনি ভিন্ন স্পষ্ট কিছুই বাহির হইল না। আবার ফিরিয়া দেখিল, কেদারবাবু দুই করতল মুখের উপর চাপিয়া ধরিয়া তেমনি পড়িয়া আছেন। আর সে কোন কথা বলিবার চেষ্টাও করিল না, শুধু আড়ষ্টের মত আরও মিনিট-খানেক স্তব্ধভাবে থাকিয়া অবশেষে নিঃশব্দে ধীরে ধীরে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । সে চলিয়া গেল, কিন্তু কন্যা ও পিতা ঠিক তেমনি একভাবে বসিয়া রহিলেন ; এবং দেয়ালের গায়ে বড় ঘড়িটার টিক্ টক্‌ শৰ ছাড়া সমস্ত কক্ষ ব্যাপিয়া কেবল একটা নিষ্ঠুর নীরবতা বিরাজ করিতে লাগিল। নীচে স্বরেশের রবার টায়ারের গাড়িখানা যে ফটক পার হইয়া গেল, তাহা ঘোড়ার খুরের শব্দে বুঝিতে পারা গেল এবং পরক্ষণেই বেয়ার ঘরে ঢুকিয়া ভাকিল, বাৰু। কেদারবাবু চোখ তুলিয়া দেখিলেন, তাহার হাতে একখও ছিন্ন কাগজ । আর কিছু বলিতে হইল না, তিনি লাফাইয়া উঠিয়া তাহার প্রতি দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত ֆ**