পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

श्रृंश्माश् মুখের ওপরেই বলচি, তোমাকে আমি যত ভালবেসেচি, তুমি তার অৰ্দ্ধেকও পারনি। তুমি গ্রাহ্য কর না বটে, কিন্তু তোমার এতটুকু ক্লেশও আমি কোনদিন সইতে পারি না। ছেলেবেলায় এই নিয়ে কত ঝগড় হয়ে গেছে, একবার মনে ক’রে দেখ । এখন এতকাল পরে যার জন্য আমাকেও পরিত্যাগ করচ মহিম, তাকে নিয়েই জীবনে স্বর্থী হবে যদি নিশ্চয়ই জানতাম, আমার সমস্ত দুঃখ আমি হাসিমুখে সহ্য করতে পারতাম, কখনও একটা কথা কইতাম না । মহিম কহিল, তাকে নিয়ে সুখী হতে পারি, কিন্তু তোমাকে ত্যাগ করব কেমন করে জানলে ? তুমি কর বা না কর, আমি তোমাকে ত্যাগ করব। কেন ? আমি ত তোমার ব্রাহ্ম-বন্ধু হতেও পারতাম ! না, কোনমতেই না । ব্রাহ্মদের আমি দু’চক্ষে দেখতে পারি না—আমার ব্রহ্ম-বন্ধু একটিও নেই । -- তাদের দেখতে পার না কেন ? অনেক কারণ আছে । একটা এই যে, যারা আমাদের সমাজকে মন্দ ব’লে ফেলে গেছে, তাদের ভাল বলে আমি কোনমতেই কাছে টানতে পারি না। তুমি ত জান, আমাদের সমাজের প্রতি আমার কত মমতা । সে সমাজকে যার দেশের কাছে, বিদেশের কাছে, সকলের কাছে হেয় বলে প্রতিপন্ন করতে চায়, তাদের ভাল তাদের থাক, আমার তারা শত্ৰু । মহিম মনে মনে অসহিষ্ণু হইয়া উঠিতেছিল ; কহিল, এখন কি করতে বল তুমি ? সুরেশ কহিল, তাই ত এতক্ষণ ধরে ক্রমাগত বলচি । অ|চ্ছ। আর ও একবার বল । এই যুবতীটির মোহ তোমাকে যেমন করে হোক কাটাতে হবে। অন্ততঃ একটা মাস দেখা করতে পারবে না । কিন্তু তাতেও যদি না কাটে । যদি মোহের বড় আরও কিছু থাকে ? স্কুরেশ ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া কহিল, ও-সব আমি বুঝি না, মহিম । আমি বুঝি, তোমাকে ভালবাসি ; এবং আরও কত বেশি তালবাসি আমার আপনার সমাজকে । তবে একটিবার ভেবে দেখ, তোমার ছেলেবেলার সেই বসন্তের কথাটা, আর মুঙ্গেরের গঙ্গায় নৌকা ডুবে যখন দুজনেই মরতে বসেছিলেম। বিশ্বত কাহিনী স্মরণ করিয়ে দিলাম বলে আমাকে মাপ করে মহিম । আমার আর কিছু বলবার নেই, আমি চললাম। বলিয়া মুরেশ অকস্মাৎ দ্রুতবেগে পিছন ফিরিয়া চলিয়া গেল ।