পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

शृश्मांझ् তাহার আগ্রহ দেখিয়া মৃণাল হঠাৎ স্নান হইয়া গেল ; সে কি হয়, আমি থাকতে তুমি কি দুঃখে রান্নাঘরের ধুয়োর মধ্যে কষ্ট পেতে যাবে ভাই ? তাহার মুখের ভাব লক্ষ্য করিয়া অচলা জিদ করিয়া বলিল, তা হলে বামুন থাকতে তুমিই বা কেন কষ্ট কর ? এ-বেলা আমি নিশ্চয় রাধব । কেন যে তাহার এই আগ্রহ মৃণাল তাহার কিছুই বুঝিল না। সে হাসি চাপিয়া কৃত্রিম অভিমানের স্বরে ঘাড় নাড়িয়া বলিল, বা রে মেয়ে! একে একে বুঝি তুমি আমার সব কেড়েকুড়ে নিতে চাও? সবই ত নিয়েচ, দুটো দিন রোধে খাইয়ে যাবো তাও বুঝি সইচে না? এখন থেকে সতীনের হিংসে শুরু হ’ল বুঝি ? অচলার বুকের ভিতরটায় আবার ছ্যাক করিয়া উঠিল । মৃণালের শেষ কথাটা গিয়া তাহার ঈর্ষার ব্যথায় সজোরে ঘা দিল । সে এক মুহূর্তেই গম্ভীর হইয়া শুধু সংক্ষেপে কহিল, না, আজ আমি রণধব । এতক্ষণে মৃণাল দেখিতে পাইল, অচলা রাগ করিয়াছে তাই আর তর্কাতর্কি না করিয়া বিষঃ-মুখে একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, বেশ, তা হলে তুমিই রাধে গে। আচ্ছা চল, কোথায় কি আছে দেখিয়ে দিয়ে আসি । মমি যে এতক্ষণ ঘরেই ছিল, তাহা দুজনের কেহই জানিত না। সহসা তাহাকে সম্মুখে দেখিয়া উভয়েই অপ্রতিভ হইয়া গেল । মহিম অচলাকে উদ্দেশ্য করিয়া ধীরে ধীরে বলিল, মৃণাল যে ক'দিন আছে ওই রাধুক না । কেন যে সে আপত্তি করিতেছিল, মহিম তাহ জানিত । কিন্তু সে কথা ত খুলিয়া বলা চলে না । অচলা আরও জলিয়া উঠিল। কিন্তু রাগ চাপিয়া শুধু কহিল, না, আমি রাধতে যাচ্ছি। বলিয়াই বাদানুবাদের অপেক্ষামাত্র না করিয়া দ্রুতপদে সরিয়া গেল । অচলা জোর করিয়া রাধিতে গেল। রান্নার কাজে সে কাহারও চেয়েই খাটো ছিল না । কিন্তু এদিকে সে মন দিতেই পারিল না । বিগত দিনের সমস্ত কাহিনী নড়িতে-চড়িতে কেবলই থচ খচ, করিয়া বিধিতে লাগিল। তাহার মনে হইতে লাগিল, হয়ত মহিম কোনদিনই তাহাকে তেমন করিয়া ভালবাসিতে পারে নাই । তাহার বিবাহের অনতিকাল পূৰ্ব্বে স্বরেশকে লইয়া যে সংঘর্ষ উপস্থিত হইয়াছিল, সেইসকল কথা খুটিয়া খুটিয়া মনে করিয়া আজ সহসা সে যেন দেখিতে পাইল, মহিম তাহার প্রতি চিরদিনই উদাসীন , এমন কি পিতার অভিমতে পূৰ্ব্ব-সম্বন্ধ যখন একেবারে ভাঙ্গিয়া পড়িবার উপক্রম হইয়াছিল, তখনও মহিম যে কিছুমাত্র বিচলিত হয় নাই, ইহাতে তাহার যেন আর লেশমাত্র সংশয় রহিল না। - Պթ