পাতা:রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২৪

রাজর্ষি ২৩ রক্তস্রোত লইয়া রক্তসমুদ্রে গিয়া পড়ে না কেন ! ন ন মা, তুই প্রকাশ করিয়া বল— এ শিক্ষা মিথ্যা, এ শাস্ত্র মিথ্যা— আমার মাকে মা বলে না, সস্তানরক্তপিপাসু রাক্ষসী বলে, এ কথা আমি সহিতে পারিব না।” ] জয়সিংহের চক্ষু দয়া অশ্রু ঝরিয়া পড়িতে লাগিল— তিনি নিজের কথা লইয়া নিজেই ভাবিতে লাগিলেন। এত কথা ইতিপূর্বে কখনও র্তাহার মনে হয় নাই, রঘুপতি যদি তাহাকে নুতন শাস্ত্র শিক্ষা দিতে না আসিতেন তবে কখনোই তাহার এত কথা মনেই আসিত না । • রঘুপতি ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “তবে তো বলিদানের পালা একেবারে উঠাইয়া দিতে হয় ।” জয়সিংহ অতি শৈশবকাল হইতে প্রতিদিন বলিদান দেখিয়া আসিতেছেন । এইজন্য মন্দিরে যে বলিদান কোনো কালে বন্ধ হইতে পারে কিম্বা বন্ধ হওয়া উচিত এ কথা কিছুতেই তাহার মনে লাগে-লু। এমন-কি, এ কথা মনে করিতে র্তাহার হৃদয়ে আঘাত লাগে। এইজন্ত রঘুপতির কথার উত্তরে জয়সিংহ বলিলেন, “সে স্বতন্ত্র কথা । তাহার অন্ত কোনো অর্থ আছে। তাহাতে তো কোনো পাপ নাই । কিন্তু তাই বলিয়া ভাইকে ভাই হত্যা করিবে ! তাই বলিয়া মহারাজ গোবিন্দমাণিক্যকে— প্রভু, আপনার পায়ে ধরিয়া জিজ্ঞাসা করি, আমাকে প্রবঞ্চনা করিবেন না, সত্যই কি মা স্বপ্নে কহিয়াছেন রাজরক্ত নহিলে তার তৃপ্তি হইবে না ?” রঘুপতি কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া কহিলেন, “সত্য নহিলে কি মিথ্যা কহিতেছি ? তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস কর ?” - জয়সিংহ রঘুপতির পদধূলি লইয়া কহিলেন, “গুরুদেবের প্রতি আমার । বিশ্বাস শিথিল না হয় যেন । কিন্তু নক্ষত্ররায়েরও তে রাজকুলে জন্ম।” রঘুপুতি কহিলেন, “দেবতাদের স্বপ্ন ইঙ্গিতমাত্র ; সকল কথা শুনা ধা না, অনেকটা বুধিয়া লইতে হয়। স্পষ্টই দেখা যাইতেছে