কড়ি ও কোমল/আকুল আহ্বান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Jonoikobangali (আলোচনা | অবদান)
{{BnHeader |title= আকুল আহ্বান |section = |previous = |next = |notes = |author =রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর... দিয়ে তৈরি পাতা
(কোনও পার্থক্য নেই)

০৮:০৯, ৫ এপ্রিল ২০১১ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

টেমপ্লেট:BnHeader

অভিমান ক'রে কোথায় গেলি,
       আয় মা ফিরে, আয় মা ফিরে আয়।
দিন রাত কেঁদে কেঁদে ডাকি
       আয় মা ফিরে, আয় মা ফিরে আয়।
সন্ধে হল, গৃহ অন্ধকার,
       মা গো, হেথায় প্রদীপ জ্বলে না।
একে একে সবাই ঘরে এল,
       আমায় যে মা, "মা' কেউ বলে না।
সময় হল বেঁধে দেব চুল,
       পরিয়ে দেব রাঙা কাপড়খানি।
সাঁজের তারা সাঁজের গগনে --
       কোথায় গেল, রানী আমার রানী!


ও মা, রাত হল, আঁধার করে আসে,
       ঘরে ঘরে প্রদীপ নিবে যায়।
আমার ঘরে ঘুম নেইকো শুধু --
       শূন্য শেজ শূন্যপানে চায়।
কোথায় দুটি নয়ন ঘুমে ভরা,
সেই নেতিয়ে-পড়া ঘুমিয়ে-পড়া মেয়ে।
       শ্রান্ত দেহ ঢুলে ঢুলে পড়ে,
তবু মায়ের তরে আছে বুঝি চেয়ে।


আঁধার রাতে চলে গেলি তুই,
আঁধার রাতে চুপি চুপি আয়।
কেউ তো তোরে দেখতে পাবে না,
       তারা শুধু তারার পানে চায়।
পথে কোথাও জনপ্রাণী নেই,
       ঘরে ঘরে সবাই ঘুমিয়ে আছে।
মা তোর শুধু একলা দ্বারে বসে,
       চুপি চুপি আয় মা, মায়ের কাছে।
আমি তোরে নুকিয়ে রেখে দেব,
       রেখে দেব বুকের মধ্যে করে --
থাক্‌, মা, সে তার পাষাণ হৃদি নিয়ে
       অনাদর যে করেছে তোরে।
মলিন মুখে গেলি তাদের কাছে --
তবু তারা নিলে না মা কোলে?
বড়ো বড়ো আঁখি দুখানি
       রইলি তাদের মুখের পানে তুলে?
এ জগৎ কঠিন -- কঠিন --
       কঠিন, শুধু মায়ের প্রাণ ছাড়া।
সেইখানে তুই আয় মা ফিরে আয় --
       এত ডাকি দিবি নে কি সাড়া?


হে ধরণী, জীবের জননী,
       শুনেছি যে মা তোমায় বলে।
তবে কেন তোর কোলে সবে
       কেঁদে আসে কেঁদে যায় চলে।
তবে কেন তোর কোলে এসে
       সন্তানের মেটে না পিপাসা।
কেন চায় -- কেন কাঁদে সবে,
       কেন কেঁদে পায় না ভালোবাসা।
কেন হেথা পাষাণ পরান
       কেন সবে নীরস নিষ্ঠুর!
কেঁদে কেঁদে দুয়ারে যে আসে
       কেন তারে করে দেয় দূর!
কেঁদে যে-জন ফিরে চলে যায়,
       তার তরে কাঁদিস নে কেহ --
এই কি মা জননীর প্রাণ!
       এই কি মা জননীর স্নেহ!


ফুলের দিনে সে যে চলে গেল,
       ফুল ফোটা সে দেখে গেল না।
ফুলে ফুলে ভরে গেল বন,
       একটি সে তো পরতে পেল না।
ফুল ফোটে, ফুল ঝরে যায় --
       ফুল নিয়ে আর সবাই পরে।
ফিরে এসে সে যদি দাঁড়ায়,
       একটিও রবে না তার তরে!
তার তরে মা কেবল আছে,
       আছে শুধু জননীর স্নেহ,
আছে শুধু মা'র অশ্রুজল --
       কিছু নাই, নাই আর কেহ।
খেলত যারা তারা খেলতে গেছে,
       হাসত যারা তারা আজও হাসে,
তার তরে কেহ ব'সে নেই,
       মা শুধু রয়েছে তারি আশে!


হায় বিধি, এ কি ব্যর্থ হবে!
       ব্যর্থ হবে মা'র ভালোবাসা!
কত জনের কত আশা পুরে,
       ব্যর্থ হবে মার প্রাণের আশা!

 
 
  বালক , আশ্বিন-কার্তিক, ১২৯২