পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/১৩৩: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
Mohaguru (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh||একরাত্রি|১২৯}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
একরাত্রি কৃষ্ণবর্ণ উন্মত্ত মৃত্যুতে গর্জন করিয়া ছুটিয়া চলিল।
একরাত্রি ১২৯

কৃষ্ণবর্ণ উন্মত্ত মৃত্যুক্সোত গর্জন করিয়া ছুটিয়া চলিল ।
আজ সমস্ত বিশ্বসংসার ছাড়িয়া সুরবালা আমার কাছে আলিম্বী দাড়াইয়াছে। আজ আমি ছাড়া মুরবালার আর কেহ নাই। কবেকার সেই শৈশবে স্বরবাল, কোন-এক জন্মাস্তুর, কোন-এক পুরাতন রহস্তান্ধকার হইতে ভাসিয়া, এই স্বৰ্ষচন্দ্রালোকিত লোকপরিপূর্ণ পৃথিবীর উপরে আমারই পার্থে আসিয়া সংলগ্ন হইয়াছিল ; আর, আজ কত দিন পরে সেই আলোকময় লোকময় পৃথিবী ছাড়িয়া এই ভয়ংকর জনশূন্ত প্রলয়ান্ধকারের মধ্যে স্বরবাল একাকিনী আমারই পার্শ্বে আসিয়া উপনীত হইয়াছে। জন্মস্রোতে সেই নবকলিকাকে আমার কাছে আনিয়া ফেলিয়াছিল, মৃত্যুম্রোতে সেই বিকশিত পুষ্পটিকে আমারই কাছে আনিয়া ফেলিয়াছে— এখন কেবল আর-একটা ঢেউ আসিলেই পৃথিবীর এই প্রাস্তটুকু হইতে, বিচ্ছেদের এই বৃন্তটুকু হইতে, খসিয়া আমরা দুজনে এক হইয়া যাই ।
{{gap}}আজ সমস্ত বিশ্বসংসার ছাড়িয়া সুরবালা আমার কাছে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে। আজ আমি ছাড়া সুরবালার আর কেহ নাই। কবেকার সেই শৈশবে সুরবাল, কোন্‌-এক জন্মান্তর, কোন্‌-এক পুরাতন রহস্যাকার হইতে ভাসিয়া, এই সূর্যচন্দ্রালােকিত লােকপরিপূর্ণ পৃথিবীর উপরে আমারই পার্শ্বে আসিয়া সংলগ্ন হইয়াছিল ; আর, আজ কত দিন পরে সেই আলােকময় লােকময় পৃথিবী ছাড়িয়া এই ভয়ংকর জনশূন্য প্রলয়ান্ধকারের মধ্যে সুরবালা একাকিনী আমারই পার্শ্বে আসিয়া উপনীত হইয়াছে। জন্মস্রোতে সেই নবকলিকাকে আমার কাছে আনিয়া ফেলিয়াছিল, মৃত্যুস্রোতে সেই বিকশিত পুষ্পটিকে আমারই কাছে আনিয়া ফেলিয়াছে- এখন কেবল আর-একটা ঢেউ আসিলেই পৃথিবীর এই প্রান্তটুকু হইতে, বিচ্ছেদের এই বৃন্তটুকু হইতে, খসিয়া আমরা দুজনে এক হইয়া যাই।

সে ঢেউ না আস্থক। স্বামীপুত্র গৃহধনজন লইয়া স্বরবালা চিরদিন মুখে থাকুক। আমি এই এক রাত্রে মহাপ্রলয়ের তীরে দাড়াইয়া অনস্ত আনন্দের আস্বাদ পাইয়াছি।
{{gap}}সে ঢেউ না আসুক। স্বামীপুত্র গৃহধনজন লইয়া সুরবালা চিরদিন সুখে থাকুক। আমি এই এক রাত্রে মহাপ্রলয়ের তীরে দাড়াইয়া অনন্ত আনন্দের আস্বাদ পাইয়াছি।
রাত্রি প্রায় শেষ হইয়া আসিল— ঝড় থামিয়া গেল, জল নামিয়া গেল— সুরবালা কোনো কথা না বলিয়া বাড়ি চলিয়া গেল, আমিও কোনো কথা না বলিয়া আমার ঘরে গেলাম ।

ভাবিলাম, আমি নাজিরও হই নাই, সেরেস্তাদারও হই নাই, গারিবালডিও হই নাই, আমি এক ভাঙা স্কুলের সেকেও, মাস্টার, আমার সমস্ত ইহজীবনে কেবল ক্ষণকালের জন্য একটি অনস্তরাত্রির উদয় হইয়াছিল— আমার পরমায়ুর সমস্ত দিনরাত্রির মধ্যে সেই একটিমাত্র রাত্রিই আমার তুচ্ছ জীবনের একমাত্র চরম সার্থকতা ।

জ্যৈষ্ঠ ১২৯৯
{{gap}}রাত্রি প্রায় শেষ হইয়া আসিল— ঝড় থামিয়া গেল, জল নামিয়া গেল— সুরবালা কোনাে কথা না বলিয়া বাড়ি চলিয়া গেল, আমিও কোনাে কথা না বলিয়া আমার ঘরে গেলাম।

{{gap}}ভাবিলাম, আমি নাজিরও হই নাই, সেরেস্তাদারও হই নাই, গারিবাল্‌ডিও হই নাই, আমি এক ভাঙা স্কুলের সেকেণ্ড্‌ মাস্টার, আমার সমস্ত ইহজীবনে কেবল ক্ষণকালের জন্য একটি অনন্তরাত্রির উদয় হইয়াছিল— আমার পরমায়ুর সমস্ত দিনরাত্রির মধ্যে সেই একটিমাত্র রাত্রিই আমার তুচ্ছ জীবনের একমাত্র চরম সার্থকতা।


{{gap}}জ্যৈষ্ঠ ১২৯৯

২০:৪৯, ২৪ মে ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একরাত্রি
১২৯

একরাত্রি কৃষ্ণবর্ণ উন্মত্ত মৃত্যুতে গর্জন করিয়া ছুটিয়া চলিল।

 আজ সমস্ত বিশ্বসংসার ছাড়িয়া সুরবালা আমার কাছে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে। আজ আমি ছাড়া সুরবালার আর কেহ নাই। কবেকার সেই শৈশবে সুরবাল, কোন্‌-এক জন্মান্তর, কোন্‌-এক পুরাতন রহস্যাকার হইতে ভাসিয়া, এই সূর্যচন্দ্রালােকিত লােকপরিপূর্ণ পৃথিবীর উপরে আমারই পার্শ্বে আসিয়া সংলগ্ন হইয়াছিল ; আর, আজ কত দিন পরে সেই আলােকময় লােকময় পৃথিবী ছাড়িয়া এই ভয়ংকর জনশূন্য প্রলয়ান্ধকারের মধ্যে সুরবালা একাকিনী আমারই পার্শ্বে আসিয়া উপনীত হইয়াছে। জন্মস্রোতে সেই নবকলিকাকে আমার কাছে আনিয়া ফেলিয়াছিল, মৃত্যুস্রোতে সেই বিকশিত পুষ্পটিকে আমারই কাছে আনিয়া ফেলিয়াছে- এখন কেবল আর-একটা ঢেউ আসিলেই পৃথিবীর এই প্রান্তটুকু হইতে, বিচ্ছেদের এই বৃন্তটুকু হইতে, খসিয়া আমরা দুজনে এক হইয়া যাই।

 সে ঢেউ না আসুক। স্বামীপুত্র গৃহধনজন লইয়া সুরবালা চিরদিন সুখে থাকুক। আমি এই এক রাত্রে মহাপ্রলয়ের তীরে দাড়াইয়া অনন্ত আনন্দের আস্বাদ পাইয়াছি।


 রাত্রি প্রায় শেষ হইয়া আসিল— ঝড় থামিয়া গেল, জল নামিয়া গেল— সুরবালা কোনাে কথা না বলিয়া বাড়ি চলিয়া গেল, আমিও কোনাে কথা না বলিয়া আমার ঘরে গেলাম।

 ভাবিলাম, আমি নাজিরও হই নাই, সেরেস্তাদারও হই নাই, গারিবাল্‌ডিও হই নাই, আমি এক ভাঙা স্কুলের সেকেণ্ড্‌ মাস্টার, আমার সমস্ত ইহজীবনে কেবল ক্ষণকালের জন্য একটি অনন্তরাত্রির উদয় হইয়াছিল— আমার পরমায়ুর সমস্ত দিনরাত্রির মধ্যে সেই একটিমাত্র রাত্রিই আমার তুচ্ছ জীবনের একমাত্র চরম সার্থকতা।


 জ্যৈষ্ঠ ১২৯৯