পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৮: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
Mohaguru (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh|১৪৪|গল্পগুচ্ছ}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
হইবে। জীবরাজ্য হইতে আমি যে নির্বাসিত হইয়া আসিয়াছি আমি যে আমার প্রেতাত্মা।
S88 গল্পগুচ্ছ

হইবে । জীবরাজ্য হইতে আমি যে নির্বাসিত হইয়া আসিয়াছি— আমি যে আমার প্রেতাত্মা !"
তাই যদি না হইবে তবে সে এই অধরাত্রে শারদাশংকরের স্বরক্ষিত অস্তঃপুর হইতে এই দুর্গম শ্মশানে আসিল কেমন করিয়া । এখনও যদি তার অস্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ না হইয়া থাকে তবে দাহ করিবার লোকজন গেল কোথায়। শারদাশংকরের আলোকিত গৃহে তাহার মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত মনে পড়িল, তাহার পরেই এই বহুদূরবর্তী জনশূন্য অন্ধকার শ্মশানের মধ্যে আপনাকে একাকিনী দেখিয়া সে জানিল, “আমি এই পৃথিবীর জনসমাজের আর কেহ নহি— আমি অতি ভীষণ, অকল্যাণকারিণী ; আমি আমার
{{gap}}তাই যদি না হইবে তবে সে এই অর্ধরাত্রে শারদাশংকরের সুরক্ষিত অন্তঃপুর হইতে এই দুর্গম শ্মশানে আসিল কেমন করিয়া। এখনও যদি তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ না হইয়া থাকে তবে দাহ করিবার লােকজন গেল কোথায়। শারদাশংকরের আলােকিত গৃহে তাহার মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত মনে পড়িল, তাহার পরেই এই বহুদূরবর্তী জনশূন্য অন্ধকার শ্মশানের মধ্যে আপনাকে একাকিনী দেখিয়া সে জানিল, আমি এই পৃথিবীর জনসমাজের আর কেহ নহি আমি অতি ভীষণ, অকল্যাণকারিণী ; আমি আমার প্রেতাত্মা।

প্রেতাত্মা ?
এই কথা মনে উদয় হইবামাত্রই তাহার মনে হইল, তাহার চতুর্দিক হইতে বিশ্বনিয়মের সমস্ত বন্ধন যেন ছিন্ন হইয়া গিয়াছে। যেন তাহার অদ্ভুত শক্তি, অসীম স্বাধীনতা— যেখানে ইচ্ছা যাইতে পারে, যাহা ইচ্ছা করিতে পারে। এই অভূতপূর্ব নূতন ভাবের আবির্ভাবে সে উন্মত্তের মতো হইয়া হঠাৎ একটা দমকা বাতাসের মতো ঘর হইতে বাহির হইয়া অন্ধকার শ্মশানের উপর দিয়া চলিল— মনে লজ্জা-ভয়-ভাবনার লেশমাত্র রহিল না ।
{{gap}}এই কথা মনে উদয় হইবামাত্রই তাহার মনে হইল, তাহার চতুর্দিক হইতে বিশ্বনিয়মের সমস্ত বন্ধন যেন ছিন্ন হইয়া গিয়াছে। যেন তাহার অদ্ভুত শক্তি, অসীম স্বাধীনতা- যেখানে ইচ্ছা যাইতে পারে, যাহা ইচ্ছা করিতে পারে। এই অভূতপূর্ব নূতন ভাবের আবির্ভাবে সে উন্মত্তের মতাে হইয়া হঠাৎ একটা দমকা বাতাসের মতাে ঘর হইতে বাহির হইয়া অন্ধকার শ্মশানের উপর দিয়া চলিল— মনে লজ্জা-ভয়-ভাবনার লেশমাত্র রহিল না।

চলিতে চলিতে চরণ শ্রান্ত, দেহ দুর্বল হইয়া আসিতে লাগিল । মাঠের পর মাঠ আর শেষ হয় না— মাঝে মাঝে ধান্তক্ষেত্র, কোথাও বা এক-ইাটু জল দাড়াইয়া আছে যখন ভোরের আলো অল্প অল্প দেখা দিয়াছে তখন অদূরে লোকালয়ের বঁাশঝাড় হইতে দুটো-একটা পাখির ডাক শুনা গেল।
{{gap}}চলিতে চলিতে চরণ শ্রান্ত, দেহ দুর্বল হইয়া আসিতে লাগিল। মাঠের পর মাঠ আর শেষ হয় না— মাঝে মাঝে ধান্যক্ষেত্র, কোথাও বা এক-হাঁটু জল দাঁড়াইয়া আছে। যখন ভােরের আলো অল্প অল্প দেখা দিয়াছে তখন অদূরে লােকালয়ের বাঁশঝাড় হইতে দুটো-একটা পাখির ডাক শুনা গেল।
তখন তাহার কেমন ভয় করিতে লাগিল । পৃথিবীর সহিত জীবিত মঙ্গুষ্যের সহিত এখন তাহার কিরূপ নূতন সম্পর্ক দাডাইয়াছে সে কিছু জানে না। যতক্ষণ মাঠে ছিল, শ্মশানে ছিল, শ্রাবণরজনীর অন্ধকারের মধ্যে ছিল ততক্ষণ সে যেন নিৰ্ভয়ে ছিল, যেন আপন রাজ্যে ছিল । দিনের আলোকে লোকালয় তাহার পক্ষে অতি ভয়ংকর স্থান বলিয়া বোধ হইল। মানুষ ভূতকে ভয় করে, ভূতও মানুষকে ভয় করে ; মৃত্যুনদীর দুই পারে দুইজনের বাস ।

{{gap}}তখন তাহার কেমন ভয় করিতে লাগিল। পৃথিবীর সহিত জীবিত মনুষ্যের সহিত এখন তাহার কিরূপ নূতন সম্পর্ক দাঁড়াইয়াছে সে কিছু জানে না। যতক্ষণ মাঠে ছিল, শ্মশানে ছিল, শ্রাবণরজনীর অন্ধকারের মধ্যে ছিল ততক্ষণ সে যেন নির্ভয়ে ছিল, যেন আপন রাজ্যে ছিল। দিনের আলােকে লােকালয় তাহার পক্ষে অতি ভয়ংকর স্থান বলিয়া বােধ হইল। মানুষ ভূতকে ভয় করে, ভূতও মানুষকে ভয় করে ; মৃত্যুনদীর দুই পারে দুইজনের বাস।

{{nop}}

২১:২২, ২৫ মে ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
গল্পগুচ্ছ

হইবে। জীবরাজ্য হইতে আমি যে নির্বাসিত হইয়া আসিয়াছি আমি যে আমার প্রেতাত্মা।

 তাই যদি না হইবে তবে সে এই অর্ধরাত্রে শারদাশংকরের সুরক্ষিত অন্তঃপুর হইতে এই দুর্গম শ্মশানে আসিল কেমন করিয়া। এখনও যদি তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ না হইয়া থাকে তবে দাহ করিবার লােকজন গেল কোথায়। শারদাশংকরের আলােকিত গৃহে তাহার মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত মনে পড়িল, তাহার পরেই এই বহুদূরবর্তী জনশূন্য অন্ধকার শ্মশানের মধ্যে আপনাকে একাকিনী দেখিয়া সে জানিল, আমি এই পৃথিবীর জনসমাজের আর কেহ নহি আমি অতি ভীষণ, অকল্যাণকারিণী ; আমি আমার প্রেতাত্মা।

 এই কথা মনে উদয় হইবামাত্রই তাহার মনে হইল, তাহার চতুর্দিক হইতে বিশ্বনিয়মের সমস্ত বন্ধন যেন ছিন্ন হইয়া গিয়াছে। যেন তাহার অদ্ভুত শক্তি, অসীম স্বাধীনতা- যেখানে ইচ্ছা যাইতে পারে, যাহা ইচ্ছা করিতে পারে। এই অভূতপূর্ব নূতন ভাবের আবির্ভাবে সে উন্মত্তের মতাে হইয়া হঠাৎ একটা দমকা বাতাসের মতাে ঘর হইতে বাহির হইয়া অন্ধকার শ্মশানের উপর দিয়া চলিল— মনে লজ্জা-ভয়-ভাবনার লেশমাত্র রহিল না।

 চলিতে চলিতে চরণ শ্রান্ত, দেহ দুর্বল হইয়া আসিতে লাগিল। মাঠের পর মাঠ আর শেষ হয় না— মাঝে মাঝে ধান্যক্ষেত্র, কোথাও বা এক-হাঁটু জল দাঁড়াইয়া আছে। যখন ভােরের আলো অল্প অল্প দেখা দিয়াছে তখন অদূরে লােকালয়ের বাঁশঝাড় হইতে দুটো-একটা পাখির ডাক শুনা গেল।

 তখন তাহার কেমন ভয় করিতে লাগিল। পৃথিবীর সহিত জীবিত মনুষ্যের সহিত এখন তাহার কিরূপ নূতন সম্পর্ক দাঁড়াইয়াছে সে কিছু জানে না। যতক্ষণ মাঠে ছিল, শ্মশানে ছিল, শ্রাবণরজনীর অন্ধকারের মধ্যে ছিল ততক্ষণ সে যেন নির্ভয়ে ছিল, যেন আপন রাজ্যে ছিল। দিনের আলােকে লােকালয় তাহার পক্ষে অতি ভয়ংকর স্থান বলিয়া বােধ হইল। মানুষ ভূতকে ভয় করে, ভূতও মানুষকে ভয় করে ; মৃত্যুনদীর দুই পারে দুইজনের বাস।