পাতা:গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১১৯: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
Ahad.a007 (আলোচনা | অবদান)
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh||পণরক্ষা|৬২৯}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{gap}}গােপালের বাপ আসিয়া অনেক বলিয়া-কহিয়া রসিককে বাড়িতে লইয়া আসিল।
পপরক্ষা ৬২৯
রসিক সেখানে প্রবেশ করিয়াই মুহূর্তকালের জন্য দেখিতে পাইল, সৌরভী সেই
গোপালের বাপ আসিয়া অনেক বলিয়া-কহিয়া রসিককে বাড়িতে লইয়া আসিল । রসিক সেখানে প্রবেশ করিয়াই মহোতকালের জন্য দেখিতে পাইল, সৌরভী সেই তাহার চিত্রিত কাঁথায় মোড়া কী-একটা জিনিস অতি যত্নে রোয়াকের দেয়ালে ঠেসান দিয়া রাখিতেছে। প্রাঙ্গণে লোকসমাগমের শব্দ পাইবামায়ই সে ছটিয়া ঘরের মধ্যে অন্তহিত হইল। রসিক কাছে আসিয়াই বুঝিতে পারিল, এই কাঁথায় মোড়া পদার্থটি একটি নতন বাইসিকল। তৎক্ষণাৎ তাহার অথ" বুঝিতে আর বিলম্ব হইল না। একটা বক-ফাটা কান্না বক্ষ ঠেলিয়া তাহার কণ্ঠের কাছে পাকাইয়া পাকাইয়া উঠিতে লাগিল এবং চোখের জলের সমস্ত রাস্তা যেন ঠাসিয়া বন্ধ করিয়া ধরিল।
তাহার চিত্রিত কাঁথায় মােড়া কী-একটা জিনিস অতি যত্নে রোয়াকের দেয়ালে ঠেসান
রসিক চলিয়া গেলে বংশী দিনরাত্রি অবিশ্রাম খাটিয়া সৌরভীর পণ এবং এই বাইসিকল কিনিবার টাকা সঞ্চয় করিয়াছিল। তাহার এক মহত আর-কোনো চিন্তা ছিল না। ক্লান্ত ঘোড়া যেমন প্রাণপণে ছটিয়া গম্য স্থানে পে'ছিয়াই পড়িয়া মরিয়া যায়, তেমনি যেদিন পণের টাকা পণ করিয়া বংশী বাইসিক্যুলটি ভি. পি. ডাকে পাইল সেইদিনই আর তাহার হাত চলিল না, তাহার তাঁত বন্ধ হইয়া গেল ; গোপালের পিতাকে ডাকিয়া তাহার হাতে ধরিয়া সে বলিল, “আর-একটি বছর রসিকের জন্য অপেক্ষা করিয়ো—এই তোমার হাতে পণের টাকা দিয়া গেলাম। আর ষেদিন রসিক আসিবে তাহাকে এই চাকার গাড়িটি দিয়া বলিয়ো, দাদার কাছে চাহিয়াছিল, তখন হতভাগ্য দাদা দিতে পারে নাই, কিন্তু তাই বলিয়া মনে যেন সে রাগ না রাখে।"
দিয়া রাখিতেছে। প্রাঙ্গণে লােকসমাগমের শব্দ পাইবামাত্রই সে ছুটিয়া ঘরের মধ্যে
দাদার টাকার উপহার গ্রহণ করিবে না, একদিন এই শপথ করিয়া রসিক চলিয়া গিয়াছিল। বিধাতা তাহার সেই কঠোর শপথ শুনিয়াছিলেন। আজ যখন রসিক ফিরিয়া আসিল তখন দেখিল, দাদার উপহার তাহার জন্য এতদিন পথ চাহিয়া বসিয়া আছে, কিন্তু তাহা গ্রহণ করিবার বার একেবারে রন্ধ। তাহার দাদা যে-তাতে আপনার জীবনটি বুনিয়া আপনার ভাইকে দান করিয়াছে, রসিকের ভারি ইচ্ছা করিল, সব ছাড়িয়া সেই তাঁতের কাছেই আপনার জীবন উৎসগ করে। কিন্তু হায়, কলিকাতা শহরে টাকার হাড়কাঠে চিরকালের মতো সে আপনার জীবন বলি দিয়া আসিয়াছে।
অন্তর্হিত হইল। রসিক কাছে আসিয়াই বুঝিতে পারিল, এই কাঁথায় মােড়া পদার্থটি
পৌষ ১৩১৮
একটি নূতন বাইসিকল। তৎক্ষণাৎ তাহার অর্থ বুঝিতে আর বিলম্ব হইল না।
$$.
একটা বুক-ফাটা কান্না বক্ষ ঠেলিয়া তাহার কণ্ঠের কাছে পাকাইয়া পাকাইয়া উঠিতে
লাগিল এবং চোখের জলের সমস্ত রাস্তা যেন ঠাসিয়া বন্ধ করিয়া ধরিল।
<br>
{{gap}}রসিক চলিয়া গেলে বংশী দিনরাত্রি অবিশ্রাম খাটিয়া সৌরভীর পণ এবং এই
বাইসিকল কিনিবার টাকা সঞ্চয় করিয়াছিল। তাহার এক মুহূর্ত আর-কোনাে চিন্তা
ছিল না। ক্লান্ত ঘােড়া যেমন প্রাণপণে ছুটিয়া গম্য স্থানে পৌঁছিয়াই পড়িয়া মরিয়া
যায়, তেমনি যেদিন পণের টাকা পূর্ণ করিয়া বংশী বাইসিকলটি ভি. পি. ডাকে
পাইল সেইদিনই আর তাহার হাত চলিল না, তাহার তাঁত বন্ধ হইয়া গেল; গােপালের
পিতাকে ডাকিয়া তাহার হাতে ধরিয়া সে বলিল, “আর-একটি বছর রসিকের জন্য
অপেক্ষা করিয়াে—এই তােমার হাতে পণের টাকা দিয়া গেলাম। আর যেদিন রসিক
আসিবে তাহাকে এই চাকার গাড়িটি দিয়া বলিয়ো, দাদার কাছে চাহিয়াছিল, তখন
হতভাগ্য দাদা দিতে পারে নাই, কিন্তু তাই বলিয়া মনে যেন সে রাগ না রাখে।”
<br>
{{gap}}দাদার টাকার উপহার গ্রহণ করিবে না, একদিন এই শপথ করিয়া রসিক চলিয়া
গিয়াছিল। বিধাতা তাহার সেই কঠোর শপথ শুনিয়াছিলেন। আজ যখন রসিক ফিরিয়া
আসিল তখন দেখিল, দাদার উপহার তাহার জন্য এতদিন পথ চাহিয়া বসিয়া আছে,
কিন্তু তাহা গ্রহণ করিবার দ্বার একেবারে রুদ্ধ। তাহার দাদা যে-তাঁতে আপনার
জীবনটি বুনিয়া আপনার ভাইকে দান করিয়াছে, রসিকের ভারি ইচ্ছা করিল, সব
ছাড়িয়া সেই তাঁতের কাছেই আপনার জীবন উৎসর্গ করে। কিন্তু হায়, কলিকাতা
শহরে টাকার হাড়কাঠে চিরকালের মতাে সে আপনার জীবন বলি দিয়া আসিয়াছে।
<br>
<br>
{{gap}}পৌষ ১৩১৮

০৩:১২, ৩০ জুন ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পণরক্ষা
৬২৯

 গােপালের বাপ আসিয়া অনেক বলিয়া-কহিয়া রসিককে বাড়িতে লইয়া আসিল। রসিক সেখানে প্রবেশ করিয়াই মুহূর্তকালের জন্য দেখিতে পাইল, সৌরভী সেই তাহার চিত্রিত কাঁথায় মােড়া কী-একটা জিনিস অতি যত্নে রোয়াকের দেয়ালে ঠেসান দিয়া রাখিতেছে। প্রাঙ্গণে লােকসমাগমের শব্দ পাইবামাত্রই সে ছুটিয়া ঘরের মধ্যে অন্তর্হিত হইল। রসিক কাছে আসিয়াই বুঝিতে পারিল, এই কাঁথায় মােড়া পদার্থটি একটি নূতন বাইসিকল। তৎক্ষণাৎ তাহার অর্থ বুঝিতে আর বিলম্ব হইল না। একটা বুক-ফাটা কান্না বক্ষ ঠেলিয়া তাহার কণ্ঠের কাছে পাকাইয়া পাকাইয়া উঠিতে লাগিল এবং চোখের জলের সমস্ত রাস্তা যেন ঠাসিয়া বন্ধ করিয়া ধরিল।
 রসিক চলিয়া গেলে বংশী দিনরাত্রি অবিশ্রাম খাটিয়া সৌরভীর পণ এবং এই বাইসিকল কিনিবার টাকা সঞ্চয় করিয়াছিল। তাহার এক মুহূর্ত আর-কোনাে চিন্তা ছিল না। ক্লান্ত ঘােড়া যেমন প্রাণপণে ছুটিয়া গম্য স্থানে পৌঁছিয়াই পড়িয়া মরিয়া যায়, তেমনি যেদিন পণের টাকা পূর্ণ করিয়া বংশী বাইসিকলটি ভি. পি. ডাকে পাইল সেইদিনই আর তাহার হাত চলিল না, তাহার তাঁত বন্ধ হইয়া গেল; গােপালের পিতাকে ডাকিয়া তাহার হাতে ধরিয়া সে বলিল, “আর-একটি বছর রসিকের জন্য অপেক্ষা করিয়াে—এই তােমার হাতে পণের টাকা দিয়া গেলাম। আর যেদিন রসিক আসিবে তাহাকে এই চাকার গাড়িটি দিয়া বলিয়ো, দাদার কাছে চাহিয়াছিল, তখন হতভাগ্য দাদা দিতে পারে নাই, কিন্তু তাই বলিয়া মনে যেন সে রাগ না রাখে।”
 দাদার টাকার উপহার গ্রহণ করিবে না, একদিন এই শপথ করিয়া রসিক চলিয়া গিয়াছিল। বিধাতা তাহার সেই কঠোর শপথ শুনিয়াছিলেন। আজ যখন রসিক ফিরিয়া আসিল তখন দেখিল, দাদার উপহার তাহার জন্য এতদিন পথ চাহিয়া বসিয়া আছে, কিন্তু তাহা গ্রহণ করিবার দ্বার একেবারে রুদ্ধ। তাহার দাদা যে-তাঁতে আপনার জীবনটি বুনিয়া আপনার ভাইকে দান করিয়াছে, রসিকের ভারি ইচ্ছা করিল, সব ছাড়িয়া সেই তাঁতের কাছেই আপনার জীবন উৎসর্গ করে। কিন্তু হায়, কলিকাতা শহরে টাকার হাড়কাঠে চিরকালের মতাে সে আপনার জীবন বলি দিয়া আসিয়াছে।

 পৌষ ১৩১৮