পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৪২: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
(কোনও পার্থক্য নেই)

১৭:০২, ৩ নভেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার আশা, এই গ্রন্থে বিজ্ঞানীদের সে কাজে অনুপ্রাণিত করতে পারব। এখন সময় এসেছে ধর্মতত্ত্বকে পদার্থবিদ্যায় অন্তর্ভুক্ত করার। স্বর্গকে একটা ইলেকট্রনের মতই বাস্তবে পরিণত করার।"

 টিপলার তাঁর ‘ওমেগা পয়েন্ট’ তত্ত্বে বলেছেন, স্বর্গ আছে, আছেন ঈশ্বর, আছে পুনর্জন্মের ব্যবস্থা।

 এক ভারতীয় বিজ্ঞানীর কথা মনে পড়ে গেল। পুনর্জন্মে বেজায় বিশ্বাসী। তার প্রবলতর বিশ্বাস থেকে ধ্বনিত হয়েছে, “ঈশ্বর আছেন, প্রতিটি মানুষকে এই সত্যে একদিন-না-একদিন আসতেই হবে। এ জন্মে না হলে পরের জন্মে, না হলে তার পরের জন্মে। একজন্মে-না-একজন্মে তার ঈশ্বরে বিশ্বাস আসবেই।"

 বহুজন্ম ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাসের উপর পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ না চালিয়েই কী প্রত্যয়ী সিদ্ধান্ত বলুন তো! বিজ্ঞানীদের মধ্যেও এমন ডাকাবুকো অন্ধ বিশ্বাসী বিরল।

 এই বিরল প্রজাতির বিজ্ঞানীর নাম-বিধানরঞ্জন রায়। ডঃ রায় একজন খাদ্য বিজ্ঞানী; কলকাতার সেন্ট্রাল ফুড ল্যাবরেটরির প্রাক্তন ডিরেকটর। ইন্ডিয়ান অ্যাকাদেমি অব ফরেনসিক সায়েন্স-এর সভাপতি।

 ডঃ টিপলার সাহেবের পুনর্জন্ম ব্যাপারটা অবশ্য একটু আলাদা। তাঁর থিওরি মত এমন কম্‌প্যুটর ভবিষ্যতে তৈরি হবে, যে কম্‌প্যুটরকে একটি প্রাণীর তাবৎ উপাদানের ডিটেল ইনফরমেশন জানালে কম্‌প্যুটর প্রাণীটিকে ফের বানিয়ে দেবে। একটি প্রাণীর উপাদানের খুঁটিনাটি তথ্যসমূহ কে জানাবে? জানাবে ভবিষ্যতের একটি অত্যাধুনিক কম্‌প্যুটর? এভাবেই 'ওমেগা পয়েন্ট'-এ মৃত্যুর পর একদিন আবার আপনি আমি জন্ম নেব আধুনিক কম্‌প্যুটরের দয়ায়।

 ডঃ টিপলারের এজাতীয় তত্ত্বকে সাধারণ মানুষের মাথায় গ্রহণযোগ্য করে ঢুকিয়ে দিতে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম তড়িঘড়ি কাজে নেমে পড়েছে। দেশ পত্রিকা ‘৯৫-এর কলকাতা বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ সংখ্যায় 'ভাললাগা বই' হিসেবে টিপলারের বইটি দশ দশটি পাতা জুড়ে প্রবল বিক্রমে বিরাজ করছে। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য, “ধর্ম ও বিজ্ঞানের যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল গ্যালিলিওর সময়ে তা বোধহয় শেষ হচ্ছে এত দিনে। শেষ হচ্ছে জ্যোতিঃপদার্থ বিজ্ঞানী ফ্র্যাংক জে টিপলার-এর প্রচেষ্টায়।"

 একটি ঘটনার দিকে প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ম্যুনিখ-এর ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিট্যুটের তরফ থেকে একটি সেমিনারে জ্যোতিঃপদার্থের উপর বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ডঃ টিপলারকে। আমন্ত্রণ জানানো ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হওয়ার মাঝখানেই প্রকাশিত হয় “দি ফিজিক্স অব ইমমর্টালিটি’ বইটি। বইয়ে বিজ্ঞান বিরোধী বক্তব্য রাখার জন্য বাতিল করা হয় টিপলারকে জানানো বক্তৃতার আমন্ত্রণ। ফ্যাক্স পাঠিয়ে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়, কল্পনায় তিনি এতটাই দূরে চলে গিয়ে এমন সব উদ্ভট বক্তব্য রেখেছেন, যাতে বস্তুত বিজ্ঞানের সুনামই নষ্ট হতে পারে।

১৪২