পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৩১: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
Nasirkhan (আলোচনা | অবদান)
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান)
Content fix.
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
সে বিষয়ে কি কোন সন্দেহ থাকিতে পারে ? গঙ্গাগােবিন্দ সহস্রগুণে হিতৈষী বন্ধু হইলেও, এ হেন প্রিয়তমার মনস্কামনা পূর্ণ না করিলে, তাহার যে বিষম অনর্থ উপস্থিত হইত! যাহা হউক, হেংস্টিস দুই এক স্থান ভিন্ন, অধিকাংশ স্থলেই যে গঙ্গাগােবিন্দের দ্বারা উৎকোচ গ্রহণ করিতেন, তাহার যথেষ্ট প্রমাণ আছে।
সে বিষয়ে কি কোন সন্দেহ থাকিতে পারে? গঙ্গাগােবিন্দ সহস্রগুণে হিতৈষী বন্ধু হইলেও, এ হেন প্রিয়তমার মনস্কামনা পূর্ণ না করিলে, তাহার যে বিষম অনর্থ উপস্থিত হইত! যাহা হউক, হেংস্টিস দুই এক স্থান ভিন্ন, অধিকাংশ স্থলেই যে গঙ্গাগােবিন্দের দ্বারা উৎকোচ গ্রহণ করিতেন, তাহার যথেষ্ট প্রমাণ আছে।


{{gap}}যে কয়েকজন দেশীয় লােক হেস্টিংসের উৎকোচসংগ্রহে নিযুক্ত ছিল, তন্মধ্যে গঙ্গাগােবিন্দ ও কান্তবাবুই প্রধান। এই সকল লােকেরা ৯ লক্ষ টাকা উৎকোচ লয়। তন্মধ্যে পীড়াপীড়িতে কোম্পানীর কোষাগারে ৫lo লক্ষ প্রদান করার কথা জানা যায় ; অবশিষ্ট টাকা হেস্টিংস ও তাহার প্রিয় কর্মচারিগণ কর্তৃক যে আত্মসাৎ হইয়াছিল, তদ্বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকিতে পারে না।<ref>Debrett also Burke, Pt. II, p. 37.</ref>
{{gap}}যে কয়েকজন দেশীয় লােক হেস্টিংসের উৎকোচসংগ্রহে নিযুক্ত ছিল, তন্মধ্যে গঙ্গাগােবিন্দ ও কান্তবাবুই প্রধান। এই সকল লােকেরা ৯ লক্ষ টাকা উৎকোচ লয়। তন্মধ্যে পীড়াপীড়িতে কোম্পানীর কোষাগারে ৫lo লক্ষ প্রদান করার কথা জানা যায়; অবশিষ্ট টাকা হেস্টিংস ও তাহার প্রিয় কর্মচারিগণ কর্তৃক যে আত্মসাৎ হইয়াছিল, তদ্বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকিতে পারে না।<ref>Debrett also Burke, Pt. II, p. 37.</ref>


{{gap}}দেশীয় জমিদার ও ইজারদারদিগকে উৎকোচের জন্য জ্বালাতন করিয়া, গঙ্গাগােবিন্দ যে হেস্টিংসসাহেবের মনােরঞ্জনের চেষ্টা করিয়াছিলেন, ইহার যথাযথ বিবরণ আমরা পূর্বে প্রদান করিয়াছি। উৎকোচ গ্রহণ করিয়া, দিন দিন তাহার অর্থলালসা আরও বৃদ্ধি পাইতে থাকে। তাহারই বশবর্তী হইয়া, অবশেষে তাহাকে কোম্পানীর রাজস্বেও হস্তক্ষেপ করিতে হয়। পূর্বে যে তিন স্থান হইতে উৎকোচ লওয়ার বিবরণ উল্লিখিত হইয়াছে, সেই তিন স্থান অর্থাৎ দিনাজপুর, পাটনা ও নদীয়ার রাজস্বব্যাপারে দেওয়ানজীর নিকট অনেক টাকা পাওনা হইয়াছিল। কেবল নদীয়ার টাকা তিনি ক্রফটস সাহেবের হস্তে প্রদান করিয়াছেন বলিয়া অবগত হওয়া যায় । কিন্তু দিনাজপুরের হিসাবের ৯৭,৬৬৩ টাকা ও পাটনার ২১,৮০১ টাকা তিনি প্রত্যর্পণ করেন নাই। হেস্টিংসসাহেব ইহার জন্য গঙ্গাগােবিন্দের কৈফিয়ৎ তলব করিয়াছিলেন। দেওয়ানজী তাহার যে উত্তর প্রদান করেন, তাহাতে হেস্টিংসসাহেব সন্তোষ লাভ করিতে পারেন নাই বলিয়া প্রকাশ করেন। গঙ্গাগােবিন্দের নিকট ঐ সমস্ত টাকা পাওনাও রহস্যময়। কারণ হেস্টিংসসাহেব যখন জানিতে পারিয়াছিলেন যে, কোম্পানীর হিসাবপত্রে বাস্তবিকই গঙ্গাগােবিন্দের নামে যথেষ্ট টাকা পাওনা রহিয়াছে, তখন তিনি কেবল তাহার কৈফিয়ৎ তলব করিয়াই ক্ষান্ত হইয়াছিলেন এবং নিজেও যে তাহার উত্তরে সন্তুষ্ট হন নাই, তাহাও আমরা বলিয়াছি; তথাপি হেস্টিংসসাহেব সে টাকা আদায়ের জন্য কখনও গঙ্গাগােবিন্দকে পীড়াপীড়ি করেন নাই।<ref>Minutes of Evidence taken in W. H's Trial, pp. 1190-91.</ref> কোম্পানীর ক্ষতি করিয়া যে গঙ্গাগােবিন্দ রাজস্বের অর্থ আত্মসাৎ করিয়াছিলেন, সেই গঙ্গাগােবিন্দের নিকট হইতে স্বয়ং গবর্নর জেনারেল তাহা আদায়ের চেষ্টা করেন নাই কেন? সুতরাং সে বিষয়েও যে গঙ্গাগােবিন্দের সহিত তাহার বিশেষরূপ সম্বন্ধ ছিল, এ কথা বলা নিতান্ত অযৌক্তিক বলিয়া বােধ হয় না।
{{gap}}দেশীয় জমিদার ও ইজারদারদিগকে উৎকোচের জন্য জ্বালাতন করিয়া, গঙ্গাগােবিন্দ যে হেস্টিংসসাহেবের মনােরঞ্জনের চেষ্টা করিয়াছিলেন, ইহার যথাযথ বিবরণ আমরা পূর্বে প্রদান করিয়াছি। উৎকোচ গ্রহণ করিয়া, দিন দিন তাহার অর্থলালসা আরও বৃদ্ধি পাইতে থাকে। তাহারই বশবর্তী হইয়া, অবশেষে তাহাকে কোম্পানীর রাজস্বেও হস্তক্ষেপ করিতে হয়। পূর্বে যে তিন স্থান হইতে উৎকোচ লওয়ার বিবরণ উল্লিখিত হইয়াছে, সেই তিন স্থান অর্থাৎ দিনাজপুর, পাটনা ও নদীয়ার রাজস্বব্যাপারে দেওয়ানজীর নিকট অনেক টাকা পাওনা হইয়াছিল। কেবল নদীয়ার টাকা তিনি ক্রফটস সাহেবের হস্তে প্রদান করিয়াছেন বলিয়া অবগত হওয়া যায়। কিন্তু দিনাজপুরের হিসাবের ৯৭,৬৬৩ টাকা ও পাটনার ২১,৮০১ টাকা তিনি প্রত্যর্পণ করেন নাই। হেস্টিংসসাহেব ইহার জন্য গঙ্গাগােবিন্দের কৈফিয়ৎ তলব করিয়াছিলেন। দেওয়ানজী তাহার যে উত্তর প্রদান করেন, তাহাতে হেস্টিংসসাহেব সন্তোষ লাভ করিতে পারেন নাই বলিয়া প্রকাশ করেন। গঙ্গাগােবিন্দের নিকট ঐ সমস্ত টাকা পাওনাও রহস্যময়। কারণ হেস্টিংসসাহেব যখন জানিতে পারিয়াছিলেন যে, কোম্পানীর হিসাবপত্রে বাস্তবিকই গঙ্গাগােবিন্দের নামে যথেষ্ট টাকা পাওনা রহিয়াছে, তখন তিনি কেবল তাহার কৈফিয়ৎ তলব করিয়াই ক্ষান্ত হইয়াছিলেন এবং নিজেও যে তাহার উত্তরে সন্তুষ্ট হন নাই, তাহাও আমরা বলিয়াছি; তথাপি হেস্টিংসসাহেব সে টাকা আদায়ের জন্য কখনও গঙ্গাগােবিন্দকে পীড়াপীড়ি করেন নাই।<ref>Minutes of Evidence taken in W. H's Trial, pp. 1190-91.</ref> কোম্পানীর ক্ষতি করিয়া যে গঙ্গাগােবিন্দ রাজস্বের অর্থ আত্মসাৎ করিয়াছিলেন, সেই গঙ্গাগােবিন্দের নিকট হইতে স্বয়ং গবর্নর জেনারেল তাহা আদায়ের চেষ্টা করেন নাই কেন? সুতরাং সে বিষয়েও যে গঙ্গাগােবিন্দের সহিত তাহার বিশেষরূপ সম্বন্ধ ছিল, এ কথা বলা নিতান্ত অযৌক্তিক বলিয়া বােধ হয় না।


{{gap}}এইরূপে যখন সকল দিক হইতেই তঁাহার অর্থলালসা পরিতৃপ্তির চেষ্টা হইতে
{{gap}}এইরূপে যখন সকল দিক হইতেই তাঁহারা অর্থলালসা পরিতৃপ্তির চেষ্টা হইতে

১৪:১৬, ৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গঙ্গাগােবিন্দ সিংহ
৩২৫

সে বিষয়ে কি কোন সন্দেহ থাকিতে পারে? গঙ্গাগােবিন্দ সহস্রগুণে হিতৈষী বন্ধু হইলেও, এ হেন প্রিয়তমার মনস্কামনা পূর্ণ না করিলে, তাহার যে বিষম অনর্থ উপস্থিত হইত! যাহা হউক, হেংস্টিস দুই এক স্থান ভিন্ন, অধিকাংশ স্থলেই যে গঙ্গাগােবিন্দের দ্বারা উৎকোচ গ্রহণ করিতেন, তাহার যথেষ্ট প্রমাণ আছে।

 যে কয়েকজন দেশীয় লােক হেস্টিংসের উৎকোচসংগ্রহে নিযুক্ত ছিল, তন্মধ্যে গঙ্গাগােবিন্দ ও কান্তবাবুই প্রধান। এই সকল লােকেরা ৯ লক্ষ টাকা উৎকোচ লয়। তন্মধ্যে পীড়াপীড়িতে কোম্পানীর কোষাগারে ৫lo লক্ষ প্রদান করার কথা জানা যায়; অবশিষ্ট টাকা হেস্টিংস ও তাহার প্রিয় কর্মচারিগণ কর্তৃক যে আত্মসাৎ হইয়াছিল, তদ্বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকিতে পারে না।[১]

 দেশীয় জমিদার ও ইজারদারদিগকে উৎকোচের জন্য জ্বালাতন করিয়া, গঙ্গাগােবিন্দ যে হেস্টিংসসাহেবের মনােরঞ্জনের চেষ্টা করিয়াছিলেন, ইহার যথাযথ বিবরণ আমরা পূর্বে প্রদান করিয়াছি। উৎকোচ গ্রহণ করিয়া, দিন দিন তাহার অর্থলালসা আরও বৃদ্ধি পাইতে থাকে। তাহারই বশবর্তী হইয়া, অবশেষে তাহাকে কোম্পানীর রাজস্বেও হস্তক্ষেপ করিতে হয়। পূর্বে যে তিন স্থান হইতে উৎকোচ লওয়ার বিবরণ উল্লিখিত হইয়াছে, সেই তিন স্থান অর্থাৎ দিনাজপুর, পাটনা ও নদীয়ার রাজস্বব্যাপারে দেওয়ানজীর নিকট অনেক টাকা পাওনা হইয়াছিল। কেবল নদীয়ার টাকা তিনি ক্রফটস সাহেবের হস্তে প্রদান করিয়াছেন বলিয়া অবগত হওয়া যায়। কিন্তু দিনাজপুরের হিসাবের ৯৭,৬৬৩ টাকা ও পাটনার ২১,৮০১ টাকা তিনি প্রত্যর্পণ করেন নাই। হেস্টিংসসাহেব ইহার জন্য গঙ্গাগােবিন্দের কৈফিয়ৎ তলব করিয়াছিলেন। দেওয়ানজী তাহার যে উত্তর প্রদান করেন, তাহাতে হেস্টিংসসাহেব সন্তোষ লাভ করিতে পারেন নাই বলিয়া প্রকাশ করেন। গঙ্গাগােবিন্দের নিকট ঐ সমস্ত টাকা পাওনাও রহস্যময়। কারণ হেস্টিংসসাহেব যখন জানিতে পারিয়াছিলেন যে, কোম্পানীর হিসাবপত্রে বাস্তবিকই গঙ্গাগােবিন্দের নামে যথেষ্ট টাকা পাওনা রহিয়াছে, তখন তিনি কেবল তাহার কৈফিয়ৎ তলব করিয়াই ক্ষান্ত হইয়াছিলেন এবং নিজেও যে তাহার উত্তরে সন্তুষ্ট হন নাই, তাহাও আমরা বলিয়াছি; তথাপি হেস্টিংসসাহেব সে টাকা আদায়ের জন্য কখনও গঙ্গাগােবিন্দকে পীড়াপীড়ি করেন নাই।[২] কোম্পানীর ক্ষতি করিয়া যে গঙ্গাগােবিন্দ রাজস্বের অর্থ আত্মসাৎ করিয়াছিলেন, সেই গঙ্গাগােবিন্দের নিকট হইতে স্বয়ং গবর্নর জেনারেল তাহা আদায়ের চেষ্টা করেন নাই কেন? সুতরাং সে বিষয়েও যে গঙ্গাগােবিন্দের সহিত তাহার বিশেষরূপ সম্বন্ধ ছিল, এ কথা বলা নিতান্ত অযৌক্তিক বলিয়া বােধ হয় না।

 এইরূপে যখন সকল দিক হইতেই তাঁহারা অর্থলালসা পরিতৃপ্তির চেষ্টা হইতে

  1. Debrett also Burke, Pt. II, p. 37.
  2. Minutes of Evidence taken in W. H's Trial, pp. 1190-91.