পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৫৩: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
Nasirkhan (আলোচনা | অবদান)
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান)
Content fix.
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
প্রজা উভয়েরই প্রতি ভীষণ অত্যাচার আরম্ভ করিলেন। হররাম নামে এক পিশাচ প্রকৃতির মনুষ্য তাহার সহকারী নিযুক্ত হইয়া, দেশমধ্যে ভয়াবহ কাণ্ডের ক্রীড়া দেখাইতে লাগিল। কি জমিদার, কি প্রজা, কি পুরুষ, কি স্ত্রী কাহারও বিন্দুমাত্র নিষ্কৃতি ছিল না। এরূপ লােমহর্ষণ অত্যাচার কেহ কখনও দেখে নাই, বা কেহ কখনও শুনে নাই। দেবীসিংহের পুণিয়ার অত্যাচারের কথা দিনাজপুর প্রদেশের লােকের পূর্ব হইতেই জানিত। যে সময়ে তাহারা শুনিল যে, দেবীসিংহ দেওয়ান হইয়া, দিনাজপুর প্রদেশে আগমন করিতেছে, তদবধি তাহাদের হৃদয়ে মহাভীতির সঞ্চার হয় ; এবং তাহারা আপনাদিগের ধনপ্রাণ বিসকুল মনে করিয়া, দেশ পরিত্যাগ করিতে কৃতসঙ্কল্প হয়। কিন্তু কিঞ্চিত্র অত্যাচার ভােগ না করিয়া, কেহই দেশ পরিত্যাগ করিতে সমর্থ হয় নাই। আমরা ক্রমান্বয়ে সেই অত্যাচার-কাহিনী বিবৃত করিতে চেষ্টা পাইতেছি।
প্রজা উভয়েরই প্রতি ভীষণ অত্যাচার আরম্ভ করিলেন। হররাম নামে এক পিশাচ প্রকৃতির মনুষ্য তাহার সহকারী নিযুক্ত হইয়া, দেশমধ্যে ভয়াবহ কাণ্ডের ক্রীড়া দেখাইতে লাগিল। কি জমিদার, কি প্রজা, কি পুরুষ, কি স্ত্রী কাহারও বিন্দুমাত্র নিষ্কৃতি ছিল না। এরূপ লােমহর্ষণ অত্যাচার কেহ কখনও দেখে নাই, বা কেহ কখনও শুনে নাই। দেবীসিংহের পুণিয়ার অত্যাচারের কথা দিনাজপুর প্রদেশের লােকের পূর্ব হইতেই জানিত। যে সময়ে তাঁহারা শুনিল যে, দেবীসিংহ দেওয়ান হইয়া, দিনাজপুর প্রদেশে আগমন করিতেছে, তদবধি তাহাদের হৃদয়ে মহাভীতির সঞ্চার হয়; এবং তাঁহারা আপনাদিগের ধনপ্রাণ বিসকুল মনে করিয়া, দেশ পরিত্যাগ করিতে কৃতসঙ্কল্প হয়। কিন্তু কিঞ্চিত্র অত্যাচার ভােগ না করিয়া, কেহই দেশ পরিত্যাগ করিতে সমর্থ হয় নাই। আমরা ক্রমান্বয়ে সেই অত্যাচার-কাহিনী বিবৃত করিতে চেষ্টা পাইতেছি।


{{gap}}ইজারা গ্রহণ করিয়া দেবীসিংহ জমিদার ও অন্যান্য ভূস্বামীদের উপর অসম্ভব কর স্থাপন করিলেন। যেরূপ বধিত হারে করদানের জন্য তাহাদিগকে বাধ্য করা হয়, তাহারা শত চেষ্টায়ও কদাচ তাহা সংগ্রহ করিতে পারিত না। এইরূপ করপ্রদানে যাহারা অস্বীকৃত হইত, দেবসিংহ অমনি তাহাদিগকে কারাগারে প্রদান করিয়া, অশেষরূপে পীড়ন করিতেন। জমিদারগণ রজ্জবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হইয়া, অবশেষে দেবীসিংহের প্রস্তাবে সম্মতি দান করিতেন। কিন্তু কোনরূপেই তাহার প্রস্তাবানুযায়ী কার্য করিয়া উঠিতে পারিতেন না। কেহ একবার কোন প্রকারে স্বীকৃত হইলে, তাহার আর নিস্তার ছিল না। দিন দিন নূতন নূতন করপ্রদানের জন্য সকলে ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিত। অবশেষে যখন জমিদারগণ নিতান্ত অসমর্থ হইয়া পড়িতেন, তখন রাজস্ব অনাদায়ের জন্য তাহাদের সমস্ত জমিদারী অল্পমূল্যে বিক্রীত হইয়া যাইত। বলা বাহুল্য, দেবীসিংহ নিজেই সেই জমিদারীর ক্রেতা ; তিনিই মূল্য নির্ধারণ করিতেন, তিনিই বিক্রয় করিতেন, পরে বেনামীতে নিজেই কিনিয়া লইতেন। যাহারা পুরুষানুক্রমে লাখেরাজ ভূমি ভােগ করিয়া আসিতেছিল, তাহারাও অবশেষে সে সকল পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হয়। জমিদারী বিক্রয় করিয়াও যখন তাহার প্রস্তাবানুযায়ী অর্থের সংকুলান হইত না, তখন সেই সমস্ত লােকদিগের অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া, কিয়ৎপরিমাণে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করা হইত।
{{gap}}ইজারা গ্রহণ করিয়া দেবীসিংহ জমিদার ও অন্যান্য ভূস্বামীদের উপর অসম্ভব কর স্থাপন করিলেন। যেরূপ বধিত হারে করদানের জন্য তাহাদিগকে বাধ্য করা হয়, তাঁহারা শত চেষ্টায়ও কদাচ তাহা সংগ্রহ করিতে পারিত না। এইরূপ করপ্রদানে যাঁহারা অস্বীকৃত হইত, দেবসিংহ অমনি তাহাদিগকে কারাগারে প্রদান করিয়া, অশেষরূপে পীড়ন করিতেন। জমিদারগণ রজ্জবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হইয়া, অবশেষে দেবীসিংহের প্রস্তাবে সম্মতি দান করিতেন। কিন্তু কোনরূপেই তাহার প্রস্তাবানুযায়ী কার্য করিয়া উঠিতে পারিতেন না। কেহ একবার কোন প্রকারে স্বীকৃত হইলে, তাহার আর নিস্তার ছিল না। দিন দিন নূতন নূতন করপ্রদানের জন্য সকলে ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিত। অবশেষে যখন জমিদারগণ নিতান্ত অসমর্থ হইয়া পড়িতেন, তখন রাজস্ব অনাদায়ের জন্য তাহাদের সমস্ত জমিদারী অল্পমূল্যে বিক্রীত হইয়া যাইত। বলা বাহুল্য, দেবীসিংহ নিজেই সেই জমিদারীর ক্রেতা; তিনিই মূল্য নির্ধারণ করিতেন, তিনিই বিক্রয় করিতেন, পরে বেনামীতে নিজেই কিনিয়া লইতেন। যাঁহারা পুরুষানুক্রমে লাখেরাজ ভূমি ভােগ করিয়া আসিতেছিল, তাঁহারাও অবশেষে সে সকল পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হয়। জমিদারী বিক্রয় করিয়াও যখন তাহার প্রস্তাবানুযায়ী অর্থের সংকুলান হইত না, তখন সেই সমস্ত লােকদিগের অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া, কিয়ৎপরিমাণে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করা হইত।


{{gap}}এই সময়ে দিনাজপুর প্রদেশে অনেক স্ত্রী-জমিদারও ছিলেন ; তাহাদের মধ্যে অনেকেই সম্রান্ত মহিলা। এই সময় মাননীয়া মহিলাবৃন্দ দেবীসিংহের হস্তে ঘাের অত্যাচার ভােগ করেন। দেবীসিংহ সেই সমস্ত স্ত্রী-জমিদারদের ভবনের চতুর্দিকে প্রহরী নিযুক্ত করিয়া নাজির ও পদাতিক দ্বারা তাহাদিগের ধন, রত্ন, অলঙ্কারাদি ক্রোক করিয়া লইতেন। সুখের বিষয়, এই সকল কার্যে স্ত্রীলােকই নিযুক্ত হইত। সেই সমস্ত মহিলাগণ অত্যন্ত উৎপীড়িত হইয়া সামান্যবেশে আপনাদিগের বাসস্থান পরিত্যাগ করিতে আরম্ভ করিলেন। সূর্যকিরণও কখনও যাহাদিগের কোমল অঙ্গ
{{gap}}এই সময়ে দিনাজপুর প্রদেশে অনেক স্ত্রী-জমিদারও ছিলেন; তাহাদের মধ্যে অনেকেই সম্রান্ত মহিলা। এই সময় মাননীয়া মহিলাবৃন্দ দেবীসিংহের হস্তে ঘাের অত্যাচার ভােগ করেন। দেবীসিংহ সেই সমস্ত স্ত্রী-জমিদারদের ভবনের চতুর্দিকে প্রহরী নিযুক্ত করিয়া নাজির ও পদাতিক দ্বারা তাহাদিগের ধন, রত্ন, অলঙ্কারাদি ক্রোক করিয়া লইতেন। সুখের বিষয়, এই সকল কার্যে স্ত্রীলােকই নিযুক্ত হইত। সেই সমস্ত মহিলাগণ অত্যন্ত উৎপীড়িত হইয়া সামান্যবেশে আপনাদিগের বাসস্থান পরিত্যাগ করিতে আরম্ভ করিলেন। সূর্যকিরণও কখনও যাহাদিগের কোমল অঙ্গ

১৪:১৭, ৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেবীসিংহ
৩৪৬

প্রজা উভয়েরই প্রতি ভীষণ অত্যাচার আরম্ভ করিলেন। হররাম নামে এক পিশাচ প্রকৃতির মনুষ্য তাহার সহকারী নিযুক্ত হইয়া, দেশমধ্যে ভয়াবহ কাণ্ডের ক্রীড়া দেখাইতে লাগিল। কি জমিদার, কি প্রজা, কি পুরুষ, কি স্ত্রী কাহারও বিন্দুমাত্র নিষ্কৃতি ছিল না। এরূপ লােমহর্ষণ অত্যাচার কেহ কখনও দেখে নাই, বা কেহ কখনও শুনে নাই। দেবীসিংহের পুণিয়ার অত্যাচারের কথা দিনাজপুর প্রদেশের লােকের পূর্ব হইতেই জানিত। যে সময়ে তাঁহারা শুনিল যে, দেবীসিংহ দেওয়ান হইয়া, দিনাজপুর প্রদেশে আগমন করিতেছে, তদবধি তাহাদের হৃদয়ে মহাভীতির সঞ্চার হয়; এবং তাঁহারা আপনাদিগের ধনপ্রাণ বিসকুল মনে করিয়া, দেশ পরিত্যাগ করিতে কৃতসঙ্কল্প হয়। কিন্তু কিঞ্চিত্র অত্যাচার ভােগ না করিয়া, কেহই দেশ পরিত্যাগ করিতে সমর্থ হয় নাই। আমরা ক্রমান্বয়ে সেই অত্যাচার-কাহিনী বিবৃত করিতে চেষ্টা পাইতেছি।

 ইজারা গ্রহণ করিয়া দেবীসিংহ জমিদার ও অন্যান্য ভূস্বামীদের উপর অসম্ভব কর স্থাপন করিলেন। যেরূপ বধিত হারে করদানের জন্য তাহাদিগকে বাধ্য করা হয়, তাঁহারা শত চেষ্টায়ও কদাচ তাহা সংগ্রহ করিতে পারিত না। এইরূপ করপ্রদানে যাঁহারা অস্বীকৃত হইত, দেবসিংহ অমনি তাহাদিগকে কারাগারে প্রদান করিয়া, অশেষরূপে পীড়ন করিতেন। জমিদারগণ রজ্জবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হইয়া, অবশেষে দেবীসিংহের প্রস্তাবে সম্মতি দান করিতেন। কিন্তু কোনরূপেই তাহার প্রস্তাবানুযায়ী কার্য করিয়া উঠিতে পারিতেন না। কেহ একবার কোন প্রকারে স্বীকৃত হইলে, তাহার আর নিস্তার ছিল না। দিন দিন নূতন নূতন করপ্রদানের জন্য সকলে ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিত। অবশেষে যখন জমিদারগণ নিতান্ত অসমর্থ হইয়া পড়িতেন, তখন রাজস্ব অনাদায়ের জন্য তাহাদের সমস্ত জমিদারী অল্পমূল্যে বিক্রীত হইয়া যাইত। বলা বাহুল্য, দেবীসিংহ নিজেই সেই জমিদারীর ক্রেতা; তিনিই মূল্য নির্ধারণ করিতেন, তিনিই বিক্রয় করিতেন, পরে বেনামীতে নিজেই কিনিয়া লইতেন। যাঁহারা পুরুষানুক্রমে লাখেরাজ ভূমি ভােগ করিয়া আসিতেছিল, তাঁহারাও অবশেষে সে সকল পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হয়। জমিদারী বিক্রয় করিয়াও যখন তাহার প্রস্তাবানুযায়ী অর্থের সংকুলান হইত না, তখন সেই সমস্ত লােকদিগের অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া, কিয়ৎপরিমাণে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করা হইত।

 এই সময়ে দিনাজপুর প্রদেশে অনেক স্ত্রী-জমিদারও ছিলেন; তাহাদের মধ্যে অনেকেই সম্রান্ত মহিলা। এই সময় মাননীয়া মহিলাবৃন্দ দেবীসিংহের হস্তে ঘাের অত্যাচার ভােগ করেন। দেবীসিংহ সেই সমস্ত স্ত্রী-জমিদারদের ভবনের চতুর্দিকে প্রহরী নিযুক্ত করিয়া নাজির ও পদাতিক দ্বারা তাহাদিগের ধন, রত্ন, অলঙ্কারাদি ক্রোক করিয়া লইতেন। সুখের বিষয়, এই সকল কার্যে স্ত্রীলােকই নিযুক্ত হইত। সেই সমস্ত মহিলাগণ অত্যন্ত উৎপীড়িত হইয়া সামান্যবেশে আপনাদিগের বাসস্থান পরিত্যাগ করিতে আরম্ভ করিলেন। সূর্যকিরণও কখনও যাহাদিগের কোমল অঙ্গ