পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৬১: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
Nasirkhan (আলোচনা | অবদান)
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান)
Content fix.
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
অবশেষে তাহাকে অপদস্থ হইতে হইয়াছিল। তিনি জানিতেন না যে, কোম্পানীর রাজত্ব হইতে ন্যায়পরতা বহুদুরে পলায়ন করিয়াছে।
অবশেষে তাহাকে অপদস্থ হইতে হইয়াছিল। তিনি জানিতেন না যে, কোম্পানীর রাজত্ব হইতে ন্যায়পরতা বহুদুরে পলায়ন করিয়াছে।


{{gap}}প্যাটারস কাহারও অনুরােধে বিচলিত না হইয়া, দৃঢ়ান্তঃকরণে আপনার কর্তব্য করিতে লাগিলেন। তিনি জানিতেন, ন্যায়ই জগতে সকল রাজত্বের ভিত্তি এবং সকল কার্যের মূল। সুতরাং ন্যায়পথ অবলম্বন করিয়া, তিনি কলিকাতার কমিটিতে নিজ অনুসন্ধানের ফল ক্রমান্বয়ে লিখিয়া পাঠাইলেন। আমরা তাহার একখানি পত্রের বিষয় প্রকাশ করিতেছি। “আমার প্রথম দুই পত্রে প্রজাদিগের উপর কঠোর অত্যাচার এবং তাহারই জন্য যে তাহার বিদ্রোহী হয়, সে কথা সাধারণভাবে বিবৃত করিয়াছি, তাহার পুনরুল্লেখ এক্ষণে নিষ্প্রয়ােজন। প্রতিদিনের অনুসন্ধান আমার মন্তব্য আরও দৃঢ় করিতেছে। তাহারা যদি বিদ্রোহী না হইত, তাহা হইলে, আমি আশ্চর্য জ্ঞান করিতাম। প্ৰজাদিগের নিকট হইতে রাজস্ব আদায় করা হয় নাই, কিন্তু তাহাদের উপর রীতিমত দস্যুতা এবং সঙ্গে সঙ্গে কঠোর শারীরিক যন্ত্রণা ও সর্বপ্রকার অপমানে জর্জরিত করা হইয়াছে। ইহা যে কেবল কতিপয় প্রজার উপর হইয়াছিল এমন নহে, সমস্ত দেশেই এইরূপ ভাবে অত্যাচার বিস্তৃত হয়। মনুষ্য চিরকাল পরাধীন থাকিলেও যখন অত্যাচার সীমা অতিক্রম করিয়া উঠে, তখন তাহার প্রতিবিধানের জন্য তাহাকে অগত্যা উখিত হইতে হয়। আপনারা এই সমস্ত প্রজাদিগের অবস্থা বিবেচনা করিয়া দেখিবেন যে, যখন অসম্ভব কর আদায়ের জন্য তাহাদের সমস্ত সম্পত্তি লুণ্ঠন করিয়াও অর্ধাংশের পরিশােধ হইল না, তাহার উপর আবার তাহাদিগকে কঠোর শারীরিক যন্ত্রণা ভােগ করিতে হইল, ইহার উপর যখন তাহাদের পরিবারের পবিত্রতানাশ ও জাতিনাশের অত্যাচার হইতে লাগিল, এরূপ ক্ষেত্রে তাহাদের কি করা উচিত ? আপনারা বিশেষরূপে অবগত আছেন যে, এতদ্দেশীয়েরা আপনাদিগের স্ত্রী ও জাতির উপর যেরূপ অনুরক্ত, তাহাতে তাহারা এরূপ অবস্থায় কতদূর সহ্য করিতে সমর্থ হয়। <ref>Impeachment of W. H., Vol. I, pp. 194-95</ref>
{{gap}}প্যাটারস কাহারও অনুরােধে বিচলিত না হইয়া, দৃঢ়ান্তঃকরণে আপনার কর্তব্য করিতে লাগিলেন। তিনি জানিতেন, ন্যায়ই জগতে সকল রাজত্বের ভিত্তি এবং সকল কার্যের মূল। সুতরাং ন্যায়পথ অবলম্বন করিয়া, তিনি কলিকাতার কমিটিতে নিজ অনুসন্ধানের ফল ক্রমান্বয়ে লিখিয়া পাঠাইলেন। আমরা তাহার একখানি পত্রের বিষয় প্রকাশ করিতেছি। "আমার প্রথম দুই পত্রে প্রজাদিগের উপর কঠোর অত্যাচার এবং তাহারই জন্য যে তাহার বিদ্রোহী হয়, সে কথা সাধারণভাবে বিবৃত করিয়াছি, তাহার পুনরুল্লেখ এক্ষণে নিষ্প্রয়ােজন। প্রতিদিনের অনুসন্ধান আমার মন্তব্য আরও দৃঢ় করিতেছে। তাঁহারা যদি বিদ্রোহী না হইত, তাহা হইলে, আমি আশ্চর্য জ্ঞান করিতাম। প্ৰজাদিগের নিকট হইতে রাজস্ব আদায় করা হয় নাই, কিন্তু তাহাদের উপর রীতিমত দস্যুতা এবং সঙ্গে সঙ্গে কঠোর শারীরিক যন্ত্রণা ও সর্বপ্রকার অপমানে জর্জরিত করা হইয়াছে। ইহা যে কেবল কতিপয় প্রজার উপর হইয়াছিল এমন নহে, সমস্ত দেশেই এইরূপ ভাবে অত্যাচার বিস্তৃত হয়। মনুষ্য চিরকাল পরাধীন থাকিলেও যখন অত্যাচার সীমা অতিক্রম করিয়া উঠে, তখন তাহার প্রতিবিধানের জন্য তাহাকে অগত্যা উখিত হইতে হয়। আপনারা এই সমস্ত প্রজাদিগের অবস্থা বিবেচনা করিয়া দেখিবেন যে, যখন অসম্ভব কর আদায়ের জন্য তাহাদের সমস্ত সম্পত্তি লুণ্ঠন করিয়াও অর্ধাংশের পরিশােধ হইল না, তাহার উপর আবার তাহাদিগকে কঠোর শারীরিক যন্ত্রণা ভােগ করিতে হইল, ইহার উপর যখন তাহাদের পরিবারের পবিত্রতানাশ ও জাতিনাশের অত্যাচার হইতে লাগিল, এরূপ ক্ষেত্রে তাহাদের কি করা উচিত? আপনারা বিশেষরূপে অবগত আছেন যে, এতদ্দেশীয়েরা আপনাদিগের স্ত্রী ও জাতির উপর যেরূপ অনুরক্ত, তাহাতে তাঁহারা এরূপ অবস্থায় কতদূর সহ্য করিতে সমর্থ হয়। <ref>Impeachment of W. H., Vol. I, pp. 194-95</ref>


{{gap}}এইরূপে প্যাটারসনৃসাহেব প্রতিনিয়ত আপনার অনুসন্ধানের ফল কমিটিতে পাঠাইতে লাগিলেন। তিনি স্পষ্টাক্ষরে তাহাদিগকে জানাইলেন যে, প্রজাদিগের কিছুমাত্র দোষ নাই। দেবীসিংহের ভীষণ অত্যাচারে তাহারা বাধ্য হইয়া অস্ত্রধারণ করিয়াছে। যাহারা কৃষিকার্য করিয়া জীবিকা নির্বাহ করে, সেই নিরীহ প্রজা, অত্যাচারের শেষ সীমা উপস্থিত না হইলে, কদাচ অস্ত্রধারণ করিতে সাহসী হয় না। ন্যায়পর প্যাটারস তাহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন বলিয়া, কলিকাতার কমিটির নিকট ঐরূপ মন্তব্য লিখিয়া পাঠান। কেবল দেবীসিংহের নহে, কিন্তু তাহার অনুরােধক্রমে গুডল্যান্ড সাহেব সিপাহী পাঠাইয়া সেই অত্যাচারের মাত্রা যে আরও বধিত করিয়াছিলেন এবং সেই সকল অত্যাচারের জন্য রঙ্গপুর প্রদেশের অনেক টাকার রাজস্ব
{{gap}}এইরূপে প্যাটারসনৃসাহেব প্রতিনিয়ত আপনার অনুসন্ধানের ফল কমিটিতে পাঠাইতে লাগিলেন। তিনি স্পষ্টাক্ষরে তাহাদিগকে জানাইলেন যে, প্রজাদিগের কিছুমাত্র দোষ নাই। দেবীসিংহের ভীষণ অত্যাচারে তাঁহারা বাধ্য হইয়া অস্ত্রধারণ করিয়াছে। যাঁহারা কৃষিকার্য করিয়া জীবিকা নির্বাহ করে, সেই নিরীহ প্রজা, অত্যাচারের শেষ সীমা উপস্থিত না হইলে, কদাচ অস্ত্রধারণ করিতে সাহসী হয় না। ন্যায়পর প্যাটারস তাহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন বলিয়া, কলিকাতার কমিটির নিকট ঐরূপ মন্তব্য লিখিয়া পাঠান। কেবল দেবীসিংহের নহে, কিন্তু তাহার অনুরােধক্রমে গুডল্যান্ড সাহেব সিপাহী পাঠাইয়া সেই অত্যাচারের মাত্রা যে আরও বধিত করিয়াছিলেন এবং সেই সকল অত্যাচারের জন্য রঙ্গপুর প্রদেশের অনেক টাকার রাজস্ব

১৪:৫৫, ৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেবীসিংহ
৩৫৫

অবশেষে তাহাকে অপদস্থ হইতে হইয়াছিল। তিনি জানিতেন না যে, কোম্পানীর রাজত্ব হইতে ন্যায়পরতা বহুদুরে পলায়ন করিয়াছে।

 প্যাটারস কাহারও অনুরােধে বিচলিত না হইয়া, দৃঢ়ান্তঃকরণে আপনার কর্তব্য করিতে লাগিলেন। তিনি জানিতেন, ন্যায়ই জগতে সকল রাজত্বের ভিত্তি এবং সকল কার্যের মূল। সুতরাং ন্যায়পথ অবলম্বন করিয়া, তিনি কলিকাতার কমিটিতে নিজ অনুসন্ধানের ফল ক্রমান্বয়ে লিখিয়া পাঠাইলেন। আমরা তাহার একখানি পত্রের বিষয় প্রকাশ করিতেছি। "আমার প্রথম দুই পত্রে প্রজাদিগের উপর কঠোর অত্যাচার এবং তাহারই জন্য যে তাহার বিদ্রোহী হয়, সে কথা সাধারণভাবে বিবৃত করিয়াছি, তাহার পুনরুল্লেখ এক্ষণে নিষ্প্রয়ােজন। প্রতিদিনের অনুসন্ধান আমার মন্তব্য আরও দৃঢ় করিতেছে। তাঁহারা যদি বিদ্রোহী না হইত, তাহা হইলে, আমি আশ্চর্য জ্ঞান করিতাম। প্ৰজাদিগের নিকট হইতে রাজস্ব আদায় করা হয় নাই, কিন্তু তাহাদের উপর রীতিমত দস্যুতা এবং সঙ্গে সঙ্গে কঠোর শারীরিক যন্ত্রণা ও সর্বপ্রকার অপমানে জর্জরিত করা হইয়াছে। ইহা যে কেবল কতিপয় প্রজার উপর হইয়াছিল এমন নহে, সমস্ত দেশেই এইরূপ ভাবে অত্যাচার বিস্তৃত হয়। মনুষ্য চিরকাল পরাধীন থাকিলেও যখন অত্যাচার সীমা অতিক্রম করিয়া উঠে, তখন তাহার প্রতিবিধানের জন্য তাহাকে অগত্যা উখিত হইতে হয়। আপনারা এই সমস্ত প্রজাদিগের অবস্থা বিবেচনা করিয়া দেখিবেন যে, যখন অসম্ভব কর আদায়ের জন্য তাহাদের সমস্ত সম্পত্তি লুণ্ঠন করিয়াও অর্ধাংশের পরিশােধ হইল না, তাহার উপর আবার তাহাদিগকে কঠোর শারীরিক যন্ত্রণা ভােগ করিতে হইল, ইহার উপর যখন তাহাদের পরিবারের পবিত্রতানাশ ও জাতিনাশের অত্যাচার হইতে লাগিল, এরূপ ক্ষেত্রে তাহাদের কি করা উচিত? আপনারা বিশেষরূপে অবগত আছেন যে, এতদ্দেশীয়েরা আপনাদিগের স্ত্রী ও জাতির উপর যেরূপ অনুরক্ত, তাহাতে তাঁহারা এরূপ অবস্থায় কতদূর সহ্য করিতে সমর্থ হয়। [১]

 এইরূপে প্যাটারসনৃসাহেব প্রতিনিয়ত আপনার অনুসন্ধানের ফল কমিটিতে পাঠাইতে লাগিলেন। তিনি স্পষ্টাক্ষরে তাহাদিগকে জানাইলেন যে, প্রজাদিগের কিছুমাত্র দোষ নাই। দেবীসিংহের ভীষণ অত্যাচারে তাঁহারা বাধ্য হইয়া অস্ত্রধারণ করিয়াছে। যাঁহারা কৃষিকার্য করিয়া জীবিকা নির্বাহ করে, সেই নিরীহ প্রজা, অত্যাচারের শেষ সীমা উপস্থিত না হইলে, কদাচ অস্ত্রধারণ করিতে সাহসী হয় না। ন্যায়পর প্যাটারস তাহা বুঝিতে পারিয়াছিলেন বলিয়া, কলিকাতার কমিটির নিকট ঐরূপ মন্তব্য লিখিয়া পাঠান। কেবল দেবীসিংহের নহে, কিন্তু তাহার অনুরােধক্রমে গুডল্যান্ড সাহেব সিপাহী পাঠাইয়া সেই অত্যাচারের মাত্রা যে আরও বধিত করিয়াছিলেন এবং সেই সকল অত্যাচারের জন্য রঙ্গপুর প্রদেশের অনেক টাকার রাজস্ব

  1. Impeachment of W. H., Vol. I, pp. 194-95