পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৬৯: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ Content fix. |
|||
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে): | পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে): | ||
৪ নং লাইন: | ৪ নং লাইন: | ||
দেখিলে বুঝা যায় না। |
দেখিলে বুঝা যায় না। |
||
{{gap}}এই আলােকোত্সবের সাধারণ নান ব্যারা'। ব্যারা প্রতি বৎসর ভাদ্রমাসের শেষ বৃহস্পতিবারে সম্পন্ন হয়। খাজা খেজেরের স্মরণােদ্দেশে এই পর্বের অনুষ্ঠান। জ্ঞানী ইলায়াসকে<ref>ইলাইজা (Elijah), ইলায়সি (Elias)।</ref> মুসলমানেরা খেজের বলিয়া নির্দেশ করেন। খেজেরের উৎসবােপলক্ষে নদীবক্ষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরণী ভাসাইবার রীতি থাকায় ভাগীরথীবক্ষে এইরূপ আলােকযান ভাসাইয়া দেওয়া হয়। অনেক স্থল হইতে বহুসংখ্যক কদলীবৃক্ষ ও বংশ আনীত হইয়া আলােকযান প্রস্তুত হইয়া থাকে। যখন এই উৎসব মহাসমারােহে সম্পন্ন হইত, তখন উক্ত যানের পরিমাণ দৈর্ঘ্যে ৩০০ হস্ত ও প্রস্তে ১৫০ হস্ত ছিল। বর্তমান সময়ে দৈর্ঘ্যে ৮০ হস্ত ও প্রস্থে ৫০৬০ হস্তমাত্ৰ হয়। কদলীবৃক্ষ সকল জলে ভাসাইয়া, তদুপরি বংশের দ্বারা নানাবিধ গৃহ, দ্বিতল, ত্রিতল অট্টালিকা, রণতরী প্রভৃতি নিমিত এবং নানা বর্ণের কাগজদ্বারা মণ্ডিত করিয়া, অগণ্য আলােক প্রজ্বলিত করা হয়। মুর্শিদাবাদের উত্তরাংশে জাফরাগঞ্জে উক্ত আলােকন নিমিত হইয়া থাকে। রাত্রি হইলে, মতিমহালদেউড়ী হইতে এক বৃহৎ জৌলুষ জাফরাগঞ্জাভিমুখে অগ্রসর হয়। সুসজ্জিত হস্তী, অশ্ব, উষ্ট্র, অশ্বারােহী ও পদাতিকগণ সেই জৌলুষের সহিত গমন করে। স্বর্ণরােপ্যমণ্ডিত নানাবিধ যান ধীরে ধীরে চলিতে |
{{gap}}এই আলােকোত্সবের সাধারণ নান ব্যারা'। ব্যারা প্রতি বৎসর ভাদ্রমাসের শেষ বৃহস্পতিবারে সম্পন্ন হয়। খাজা খেজেরের স্মরণােদ্দেশে এই পর্বের অনুষ্ঠান। জ্ঞানী ইলায়াসকে<ref>ইলাইজা (Elijah), ইলায়সি (Elias)।</ref> মুসলমানেরা খেজের বলিয়া নির্দেশ করেন। খেজেরের উৎসবােপলক্ষে নদীবক্ষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরণী ভাসাইবার রীতি থাকায় ভাগীরথীবক্ষে এইরূপ আলােকযান ভাসাইয়া দেওয়া হয়। অনেক স্থল হইতে বহুসংখ্যক কদলীবৃক্ষ ও বংশ আনীত হইয়া আলােকযান প্রস্তুত হইয়া থাকে। যখন এই উৎসব মহাসমারােহে সম্পন্ন হইত, তখন উক্ত যানের পরিমাণ দৈর্ঘ্যে ৩০০ হস্ত ও প্রস্তে ১৫০ হস্ত ছিল। বর্তমান সময়ে দৈর্ঘ্যে ৮০ হস্ত ও প্রস্থে ৫০৬০ হস্তমাত্ৰ হয়। কদলীবৃক্ষ সকল জলে ভাসাইয়া, তদুপরি বংশের দ্বারা নানাবিধ গৃহ, দ্বিতল, ত্রিতল অট্টালিকা, রণতরী প্রভৃতি নিমিত এবং নানা বর্ণের কাগজদ্বারা মণ্ডিত করিয়া, অগণ্য আলােক প্রজ্বলিত করা হয়। মুর্শিদাবাদের উত্তরাংশে জাফরাগঞ্জে উক্ত আলােকন নিমিত হইয়া থাকে। রাত্রি হইলে, মতিমহালদেউড়ী হইতে এক বৃহৎ জৌলুষ জাফরাগঞ্জাভিমুখে অগ্রসর হয়। সুসজ্জিত হস্তী, অশ্ব, উষ্ট্র, অশ্বারােহী ও পদাতিকগণ সেই জৌলুষের সহিত গমন করে। স্বর্ণরােপ্যমণ্ডিত নানাবিধ যান ধীরে ধীরে চলিতে থাকে। নিজামতের সুমধুর ব্যাণ্ড গুরুগম্ভীর রবে বাদ্য করিতে করিতে জৌলুষকে গাম্ভীর্যময় করিয়া তুলে; নবাববংশীয়গণ বহুমূল্য পরিচ্ছেদে ও মণিমাণিক্যখচিত অলঙ্কারে বিভূষিত হইয়া, তাহার শােভা বর্ধন করিতে থাকেন। মুর্শিদাবাদের ন্যায় এমন সমারােহপূর্ণ জৌলুষ বাঙ্গলায় কুত্রাপি দৃষ্ট হয় না। |
||
{{gap}} |
{{gap}}মুর্শিদাবাদের জৌলুষ এখনও ইহাকে বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যায় রাজধানী বলিয়া স্মরণ করাইয়া দেয়। কিন্তু কমে সমস্তই মন্দীভূত হইতেছে। জৌলুষ ক্রমে ক্রমে আলােকযানের নিকটস্থ হইলে, ব্যাণ্ড ও কতিপয় সুসজ্জিত সিপাহী আলােকানে আরােহণ করে। খেজেরের উদ্দেশে রুটি, ক্ষীর, পান ইত্যাদিও একটি প্রদীপ যানের |
১৪:৫৫, ৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
দ্বন্দ্বিতায় প্রবৃত্ত হয়। তাহাদের মধ্যে কাহারও কাহারও ভীষণ শব্দ নিবিড় মেঘাবৃত অম্বরের অনুষ্কার করিয়া দর্শকবৃন্দকে চমকিত করিয়া তুলে। ভাসমান আলােকন হইতে সুমধুর বাদ্যধ্বনি ভাগীরথীর জলােচ্ছাসের সহিত মিশিয়া নীরব দিগন্তে ছড়াইয়া পড়ে।
এই আলােকোৎসব দেখিবার জন্য মুর্শিদাবাদে সহস্র সহস্র লােকের সমাগম হয়। অনেক সুসজ্জিত তরণী ভাগীরথীবক্ষে ক্রীড়া করিতে থাকে। বাতায়ন হইতে পুরসুন্দরীগণ সেই জ্যোতির্লীলা দেখিতে থাকেন। মহাকবি কালিদাস বিলােলনেত্রভ্রমরালত যে রমণীবদন-সরােজের বর্ণনা করিয়াছেন, এই সময়েই তাহা সুন্দররূপেই প্রতীত হয়। অন্ধকারময়ী রজনীতে এইরূপ আলােকোৎসব যে কত মনােরম, তাহা দেখিলে বুঝা যায় না।
এই আলােকোত্সবের সাধারণ নান ব্যারা'। ব্যারা প্রতি বৎসর ভাদ্রমাসের শেষ বৃহস্পতিবারে সম্পন্ন হয়। খাজা খেজেরের স্মরণােদ্দেশে এই পর্বের অনুষ্ঠান। জ্ঞানী ইলায়াসকে[১] মুসলমানেরা খেজের বলিয়া নির্দেশ করেন। খেজেরের উৎসবােপলক্ষে নদীবক্ষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরণী ভাসাইবার রীতি থাকায় ভাগীরথীবক্ষে এইরূপ আলােকযান ভাসাইয়া দেওয়া হয়। অনেক স্থল হইতে বহুসংখ্যক কদলীবৃক্ষ ও বংশ আনীত হইয়া আলােকযান প্রস্তুত হইয়া থাকে। যখন এই উৎসব মহাসমারােহে সম্পন্ন হইত, তখন উক্ত যানের পরিমাণ দৈর্ঘ্যে ৩০০ হস্ত ও প্রস্তে ১৫০ হস্ত ছিল। বর্তমান সময়ে দৈর্ঘ্যে ৮০ হস্ত ও প্রস্থে ৫০৬০ হস্তমাত্ৰ হয়। কদলীবৃক্ষ সকল জলে ভাসাইয়া, তদুপরি বংশের দ্বারা নানাবিধ গৃহ, দ্বিতল, ত্রিতল অট্টালিকা, রণতরী প্রভৃতি নিমিত এবং নানা বর্ণের কাগজদ্বারা মণ্ডিত করিয়া, অগণ্য আলােক প্রজ্বলিত করা হয়। মুর্শিদাবাদের উত্তরাংশে জাফরাগঞ্জে উক্ত আলােকন নিমিত হইয়া থাকে। রাত্রি হইলে, মতিমহালদেউড়ী হইতে এক বৃহৎ জৌলুষ জাফরাগঞ্জাভিমুখে অগ্রসর হয়। সুসজ্জিত হস্তী, অশ্ব, উষ্ট্র, অশ্বারােহী ও পদাতিকগণ সেই জৌলুষের সহিত গমন করে। স্বর্ণরােপ্যমণ্ডিত নানাবিধ যান ধীরে ধীরে চলিতে থাকে। নিজামতের সুমধুর ব্যাণ্ড গুরুগম্ভীর রবে বাদ্য করিতে করিতে জৌলুষকে গাম্ভীর্যময় করিয়া তুলে; নবাববংশীয়গণ বহুমূল্য পরিচ্ছেদে ও মণিমাণিক্যখচিত অলঙ্কারে বিভূষিত হইয়া, তাহার শােভা বর্ধন করিতে থাকেন। মুর্শিদাবাদের ন্যায় এমন সমারােহপূর্ণ জৌলুষ বাঙ্গলায় কুত্রাপি দৃষ্ট হয় না।
মুর্শিদাবাদের জৌলুষ এখনও ইহাকে বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যায় রাজধানী বলিয়া স্মরণ করাইয়া দেয়। কিন্তু কমে সমস্তই মন্দীভূত হইতেছে। জৌলুষ ক্রমে ক্রমে আলােকযানের নিকটস্থ হইলে, ব্যাণ্ড ও কতিপয় সুসজ্জিত সিপাহী আলােকানে আরােহণ করে। খেজেরের উদ্দেশে রুটি, ক্ষীর, পান ইত্যাদিও একটি প্রদীপ যানের
- ↑ ইলাইজা (Elijah), ইলায়সি (Elias)।