পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৭৫: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
Nasirkhan (আলোচনা | অবদান)
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান)
Content fix.
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
দীপালােকে সজ্জিত হইয়৷ মুর্শিদাবাদ রমণীয় রূপ ধারণ করিয়াছে। তাহাদের প্রতিবিম্ব ভাগীরথীবক্ষে পতিত হইয়া, তাহার গর্ভেও যেন উৎসবের তরঙ্গ ছুটাইতেছে। চন্দ্রালােকে ও দীপালােকে মুর্শিদাবাদের প্রান্তবাহিনী ভাগীরথী যেন শত শত মাণিক্যখচিত হইয়া ঐশ্বর্যময়ী কান্তিতে শােভা পাইতেছেন। সমগ্র নগরব্যাপী কোলাহল প্রতিনিয়ত আকাশপানে উখিত হইতেছে। মধ্যে মধ্যে ক্রীড়া-বাদ্য ও বিষাদ-সঙ্গীত সেই কলধ্বনিকে মধুরতর করিয়া তুলিতেছে। বহুসংখ্যক তরণী সেই উৎসব দেখিবার জন্য নদীবক্ষে অবস্থিত। প্রায় প্রত্যেক গৃহ আলােকমালায় সুসজ্জিত হইয়া, জ্যোৎস্নালােককে স্নান করিতেছে। অনেক গৃহে কাগজ ও বস্ত্রনিমিত তাজিয়া শােভা পাইতেছে।
দীপালােকে সজ্জিত হইয়৷ মুর্শিদাবাদ রমণীয় রূপ ধারণ করিয়াছে। তাহাদের প্রতিবিম্ব ভাগীরথীবক্ষে পতিত হইয়া, তাহার গর্ভেও যেন উৎসবের তরঙ্গ ছুটাইতেছে। চন্দ্রালােকে ও দীপালােকে মুর্শিদাবাদের প্রান্তবাহিনী ভাগীরথী যেন শত শত মাণিক্যখচিত হইয়া ঐশ্বর্যময়ী কান্তিতে শােভা পাইতেছেন। সমগ্র নগরব্যাপী কোলাহল প্রতিনিয়ত আকাশপানে উখিত হইতেছে। মধ্যে মধ্যে ক্রীড়া-বাদ্য ও বিষাদ-সঙ্গীত সেই কলধ্বনিকে মধুরতর করিয়া তুলিতেছে। বহুসংখ্যক তরণী সেই উৎসব দেখিবার জন্য নদীবক্ষে অবস্থিত। প্রায় প্রত্যেক গৃহ আলােকমালায় সুসজ্জিত হইয়া, জ্যোৎস্নালােককে স্নান করিতেছে। অনেক গৃহে কাগজ ও বস্ত্রনিমিত তাজিয়া শােভা পাইতেছে।


{{gap}}নবাববংশীয়দিগের এমামবারায় উৎসবের ঘটা অধিক। যেমন দীপমালায় সুসজ্জিত, সেইরূপ লােকে পরিপূর্ণ। তাহার অদূরে সিরাজউদ্দৌলার মদীনা দুই একটি ক্ষীণালােক বক্ষে ধরিয়া আছে। এমামবারার সম্মুখে সহস্রধার-প্রাসাদ চালােকে উজ্জ্বলতর হইয়া, ইংরেজরাজত্বের গৌরবচিহ্নের ন্যায় মস্তক উন্নত করিয়৷ দণ্ডায়মান। সহস্ৰদ্বার-ভবন ইংরেজরাজত্বের সময়ে নিমিত হয় এবং তাহা তাহাদেরই। সম্পত্তি। নবাববংশীয়েরা তথায় বাস করিতে পান মাত্র। তাই বলি, তাহা ইংরেজরাজত্বের গৌরবের পরিচায়কস্বরূপ। উৎসবময় মুর্শিদাবাদের চিত্র দেখিয়া, একবার ভাগীরথীর পরপারে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিলাম। নিকটে, দূরে, বহুদূরে সকল দিকেই চাহিলাম,দেখিলাম ঘন বৃক্ষরাজি তট আবৃত করিয়া রহিয়াছে। পশ্চিম তীরে আঁধার ভিন্ন কিছুই দেখিলাম না। নিবিড় বৃক্ষরাজির ভিতর দিয়া জ্যোৎস্নালােক প্রবেশ করিতে পারিতেছে না। সে স্থানের ভাগীরথীও আঁধারে চলিয়াছেন। গাছের ছায়৷ বুকে করিয়া যেন কিছু অলক্ষিত ভাবে গমন করিতেছেন। পূর্ব পারের সহিত তুলনায় পশ্চিম তীর ভিন্নরূপ। এপার যেরূপ কোলাহলময়, ওপার সেইরূপই নীরব। এপার যেরূপ আলােকমালায় সুসজ্জিত, ওপার সেইরূপ আঁধারে বিজড়িত। এপারে যেরূপ বহুসংখ্যক গৃহ দীপালােকে বিভূষিত, ওপারে সেইরূপ নিবিড় বৃক্ষরাজি দণ্ডায়মান হইয়া চালােকের গতি রােধ করিতেছে। যেন তাহারা আলােক ভালবাসে না, আঁধারেই থাকিতে ইচ্ছা করিয়াছে। ফলতঃ পূর্ব পারের তুলনায় পশ্চিম পার আঁধারময়।
{{gap}}নবাববংশীয়দিগের এমামবারায় উৎসবের ঘটা অধিক। যেমন দীপমালায় সুসজ্জিত, সেইরূপ লােকে পরিপূর্ণ। তাহার অদূরে সিরাজউদ্দৌলার মদীনা দুই একটি ক্ষীণালােক বক্ষে ধরিয়া আছে। এমামবারার সম্মুখে সহস্রধার-প্রাসাদ চালােকে উজ্জ্বলতর হইয়া, ইংরেজরাজত্বের গৌরবচিহ্নের ন্যায় মস্তক উন্নত করিয়৷ দণ্ডায়মান। সহস্ৰদ্বার-ভবন ইংরেজরাজত্বের সময়ে নিমিত হয় এবং তাহা তাহাদেরই। সম্পত্তি। নবাববংশীয়েরা তথায় বাস করিতে পান মাত্র। তাই বলি, তাহা ইংরেজরাজত্বের গৌরবের পরিচায়কস্বরূপ। উৎসবময় মুর্শিদাবাদের চিত্র দেখিয়া, একবার ভাগীরথীর পরপারে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিলাম। নিকটে, দূরে, বহুদূরে সকল দিকেই চাহিলাম,দেখিলাম ঘন বৃক্ষরাজি তট আবৃত করিয়া রহিয়াছে। পশ্চিম তীরে আঁধার ভিন্ন কিছুই দেখিলাম না। নিবিড় বৃক্ষরাজির ভিতর দিয়া জ্যোৎস্নালােক প্রবেশ করিতে পারিতেছে না। সে স্থানের ভাগীরথীও আঁধারে চলিয়াছেন। গাছের ছায়৷ বুকে করিয়া যেন কিছু অলক্ষিত ভাবে গমন করিতেছেন। পূর্ব পারের সহিত তুলনায় পশ্চিম তীর ভিন্নরূপ। এপার যেরূপ কোলাহলময়, ওপার সেইরূপই নীরব। এপার যেরূপ আলােকমালায় সুসজ্জিত, ওপার সেইরূপ আঁধারে বিজড়িত। এপারে যেরূপ বহুসংখ্যক গৃহ দীপালােকে বিভূষিত, ওপারে সেইরূপ নিবিড় বৃক্ষরাজি দণ্ডায়মান হইয়া চালােকের গতি রােধ করিতেছে। যেন তাঁহারা আলােক ভালবাসে না, আঁধারেই থাকিতে ইচ্ছা করিয়াছে। ফলতঃ পূর্ব পারের তুলনায় পশ্চিম পার আঁধারময়।


{{gap}}কিছু দূরে দেখিলাম, একস্থানে কতিপয় বৃক্ষ কাছাকাছি দাঁড়াইয়া আঁধারের ঘটা কিছু বৃদ্ধি করিয়াছে। তখন সেই স্থানের কথা মনে হইল ; মনে হইল, সেখানে যাহা আছে, তাহাকে আঁধারে রাখিতে বৃক্ষদিগের ইচ্ছা হওয়া সম্ভব বটে। সেই বীরশ্রেষ্ঠ আলিবর্দী ও হতভাগ্য সিরাজের সমাধি আঁধারে ঢাকাই উচিত। বিস্মৃতিগর্ভে সমাহিত সুখস্বপ্নের ন্যায় তাহাদের সমাধি ঘনান্ধকারে লুকাইবে না ত কিসে ঢাকিবে ? ঐতিহাসিকগণের কৃষ্ণচিত্রে ব্রিজ যেরূপ চিত্রিত হইয়াছে, তাহার সমাধিও বৃক্ষান্ধকারে ঢাকিবে বৈ কি, নহিলে সামঞ্জস্য হইবে কেন ? যে আবিদীর বিশ্বাত্রাস
{{gap}}কিছু দূরে দেখিলাম, একস্থানে কতিপয় বৃক্ষ কাছাকাছি দাঁড়াইয়া আঁধারের ঘটা কিছু বৃদ্ধি করিয়াছে। তখন সেই স্থানের কথা মনে হইল; মনে হইল, সেখানে যাহা আছে, তাহাকে আঁধারে রাখিতে বৃক্ষদিগের ইচ্ছা হওয়া সম্ভব বটে। সেই বীরশ্রেষ্ঠ আলিবর্দী ও হতভাগ্য সিরাজের সমাধি আঁধারে ঢাকাই উচিত। বিস্মৃতিগর্ভে সমাহিত সুখস্বপ্নের ন্যায় তাহাদের সমাধি ঘনান্ধকারে লুকাইবে না ত কিসে ঢাকিবে? ঐতিহাসিকগণের কৃষ্ণচিত্রে ব্রিজ যেরূপ চিত্রিত হইয়াছে, তাহার সমাধিও বৃক্ষান্ধকারে ঢাকিবে বৈ কি, নহিলে সামঞ্জস্য হইবে কেন? যে আবিদীর বিশ্বাত্রাস

১৪:৫৬, ৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একদিনের স্মৃতি
৩৬৯

দীপালােকে সজ্জিত হইয়৷ মুর্শিদাবাদ রমণীয় রূপ ধারণ করিয়াছে। তাহাদের প্রতিবিম্ব ভাগীরথীবক্ষে পতিত হইয়া, তাহার গর্ভেও যেন উৎসবের তরঙ্গ ছুটাইতেছে। চন্দ্রালােকে ও দীপালােকে মুর্শিদাবাদের প্রান্তবাহিনী ভাগীরথী যেন শত শত মাণিক্যখচিত হইয়া ঐশ্বর্যময়ী কান্তিতে শােভা পাইতেছেন। সমগ্র নগরব্যাপী কোলাহল প্রতিনিয়ত আকাশপানে উখিত হইতেছে। মধ্যে মধ্যে ক্রীড়া-বাদ্য ও বিষাদ-সঙ্গীত সেই কলধ্বনিকে মধুরতর করিয়া তুলিতেছে। বহুসংখ্যক তরণী সেই উৎসব দেখিবার জন্য নদীবক্ষে অবস্থিত। প্রায় প্রত্যেক গৃহ আলােকমালায় সুসজ্জিত হইয়া, জ্যোৎস্নালােককে স্নান করিতেছে। অনেক গৃহে কাগজ ও বস্ত্রনিমিত তাজিয়া শােভা পাইতেছে।

 নবাববংশীয়দিগের এমামবারায় উৎসবের ঘটা অধিক। যেমন দীপমালায় সুসজ্জিত, সেইরূপ লােকে পরিপূর্ণ। তাহার অদূরে সিরাজউদ্দৌলার মদীনা দুই একটি ক্ষীণালােক বক্ষে ধরিয়া আছে। এমামবারার সম্মুখে সহস্রধার-প্রাসাদ চালােকে উজ্জ্বলতর হইয়া, ইংরেজরাজত্বের গৌরবচিহ্নের ন্যায় মস্তক উন্নত করিয়৷ দণ্ডায়মান। সহস্ৰদ্বার-ভবন ইংরেজরাজত্বের সময়ে নিমিত হয় এবং তাহা তাহাদেরই। সম্পত্তি। নবাববংশীয়েরা তথায় বাস করিতে পান মাত্র। তাই বলি, তাহা ইংরেজরাজত্বের গৌরবের পরিচায়কস্বরূপ। উৎসবময় মুর্শিদাবাদের চিত্র দেখিয়া, একবার ভাগীরথীর পরপারে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিলাম। নিকটে, দূরে, বহুদূরে সকল দিকেই চাহিলাম,দেখিলাম ঘন বৃক্ষরাজি তট আবৃত করিয়া রহিয়াছে। পশ্চিম তীরে আঁধার ভিন্ন কিছুই দেখিলাম না। নিবিড় বৃক্ষরাজির ভিতর দিয়া জ্যোৎস্নালােক প্রবেশ করিতে পারিতেছে না। সে স্থানের ভাগীরথীও আঁধারে চলিয়াছেন। গাছের ছায়৷ বুকে করিয়া যেন কিছু অলক্ষিত ভাবে গমন করিতেছেন। পূর্ব পারের সহিত তুলনায় পশ্চিম তীর ভিন্নরূপ। এপার যেরূপ কোলাহলময়, ওপার সেইরূপই নীরব। এপার যেরূপ আলােকমালায় সুসজ্জিত, ওপার সেইরূপ আঁধারে বিজড়িত। এপারে যেরূপ বহুসংখ্যক গৃহ দীপালােকে বিভূষিত, ওপারে সেইরূপ নিবিড় বৃক্ষরাজি দণ্ডায়মান হইয়া চালােকের গতি রােধ করিতেছে। যেন তাঁহারা আলােক ভালবাসে না, আঁধারেই থাকিতে ইচ্ছা করিয়াছে। ফলতঃ পূর্ব পারের তুলনায় পশ্চিম পার আঁধারময়।

 কিছু দূরে দেখিলাম, একস্থানে কতিপয় বৃক্ষ কাছাকাছি দাঁড়াইয়া আঁধারের ঘটা কিছু বৃদ্ধি করিয়াছে। তখন সেই স্থানের কথা মনে হইল; মনে হইল, সেখানে যাহা আছে, তাহাকে আঁধারে রাখিতে বৃক্ষদিগের ইচ্ছা হওয়া সম্ভব বটে। সেই বীরশ্রেষ্ঠ আলিবর্দী ও হতভাগ্য সিরাজের সমাধি আঁধারে ঢাকাই উচিত। বিস্মৃতিগর্ভে সমাহিত সুখস্বপ্নের ন্যায় তাহাদের সমাধি ঘনান্ধকারে লুকাইবে না ত কিসে ঢাকিবে? ঐতিহাসিকগণের কৃষ্ণচিত্রে ব্রিজ যেরূপ চিত্রিত হইয়াছে, তাহার সমাধিও বৃক্ষান্ধকারে ঢাকিবে বৈ কি, নহিলে সামঞ্জস্য হইবে কেন? যে আবিদীর বিশ্বাত্রাস