সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/শীতের সকাল

উইকিসংকলন থেকে

শীতের সকাল

আবছায়া চারিদিক, ঝাপসা নিঝুম,
পউষের ভোরবেলা—ভেঙে গেল ঘুম।
উষার দুয়ারে এক তুষারের ঢেউ
কখন পড়েছে ভেঙে, জানে না তা কেউ।
ঝিমঝিমে হিম-হাওয়া বয় বার বার,
দিকে দিকে বাজে যেন শীতের সেতার।
অশথগাছের ফাঁকে অতি মনোহর
মিঠে রোদ বেঁকে পড়ে দাওয়ার উপর;
জড়সড় দেহ মোর,—বড় শীত ভাই,
রোদ-ছাওয়া দাওয়াটায় বসি এসে তাই;
দুরে দেখি ফাঁকা মাঠে আলো ঝলমল,
শালিখের ঝাঁক সেথা করে কোলাহল।

ছোট টুনটুনি পাখী কাতর বেজায়,
ভিজে ঘাসে কি যে খোঁজে, শরীর ভেজায়।
কে ডাকে করুণ সুরে—শুনিস না তুই?
খাবার খুঁজিয়া ফেরে চপল চড়ুই।
বখরা লইয়া যত ঝগড়াটে কাক।
ঘরের খড়ের চালে করে হাঁকডাক।
আমাদের ছোট দীঘি ঐ দেখা যায়,
 চিক‍্চিক্ করে জল রোদের আভায়;
ফোটো-ফোটো ছোেট-ছোট শালুকের ফুল,
পাতায় শিশিরকণা করে টুলটুল।
শীত শীত, বড় শীত,—শরীর কাঁপায়,
দাওয়ায় পড়েছে রোদ, বসেছি সেথায়।
নদীটির একপাশে মোদের কুটির,
তার ধারে ছোট ক্ষেত মটরশুঁটির;
ভিজে-ডানা প্রজাপতি আসে আর যায়,
থর্ থর্ কাঁপে যেন হিমেল হাওয়ায়।
হিমে-ভেজা দুনিয়াটা করে ছল্ ছল্;
কখন নেমেছে জানি হিমের বাদল!
ভিজে মাঠ, ভিজে ঘাট, শিশির শীতল,
ভিজে ভিজে পথখানি হয়েছে পিছল।
করবীগাছের ডালে রোদ স’রে যায়
শালিকের ছোট ছানা পালখ শুকায়।
এখনো সুদূরে দেখি মেলিয়া নয়ন—
ধোঁয়া আর কুয়াশার গাঢ় আবরণ।
পউষের মিঠে রোদে বসেছি দাওয়ায়,
নলেন গুড়ের পিঠে খাবি কে রে আয়॥