8o বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী অষ্টম পরিচ্ছেদ পৰ্ব্বতোপরি আজি রাত্রিতে আকাশে চাদ উঠিল না। মেঘ আসিয়া চন্দ্র, নক্ষত্র, নীহারিক, নীলিম। সকল ঢাকিল। মেঘ ছিদ্রশূন্ত, অনন্তবিস্তারী, জলপূর্ণতার জন্য ধূমবৰ্ণ ;-তাছুর তলে অনন্ত অন্ধকার গাঢ়, অনন্ত সৰ্ব্বাবরণকারী অন্ধকার, তাঁহাতে নদী সৈকত, উপকূল, উপকুলস্থ গিরিশ্রেণী সকল ঢাকিয়াছে ; সেই অন্ধকারে শৈবলিনী গিরির উপত্যকায় একাকিনী । শেষরাত্রে ছিপ পশ্চাদ্ধাবিত ইংরেজদিগের অন্তচরদিগকে দূরে রাখিয় তীরে লাগিয়াছিল –বড় বড় নদীর তীরে নিভৃত স্থানের অভাব নাই—সেইরূপ একটি নিভৃত স্থানে ছিপ লাগাইয়াছিল । সেই সমরে শৈবলিনী-অলক্ষ্যে ছিপ হইতে পলাইয়াছিল । এবার শৈবলিনী ‘অসদভিপ্রায়ে পলায়ন করে নাই । মে ভয়ে দহমান অরণ্য হইতে অরণ্যচর জীব পলায়ন করে, শৈবলিনী সেই ভয়ে প্রভাপের সংসর্গ হইতে পলাৱন করিয়াছিল। প্রাণভয়ে শৈবলিনী সুখ সৌন্দৰ্য্য-প্রণয়াদিপরিপূর্ণ সংসার হইতে পলাইল । সুখ, সৌন্দর্য্য, প্রণয়, প্র তাপ, এ সকলে শৈবলিনীর আর অধিকার নাই –আশা নাই—আকাঙ্ক্ষাও পরিহার্য্য ! নিকট থাকিলে কে অকাজক্ষ। পরিহার করিতে পারে ? মরুভূমে থাকিল, কোন তৃষিত পথিক সুশীতল স্বচ্ছ সুবাসিত বারি দেখিয়৷ পান ন৷ করিয়া থাকিতে পারে ? বিক্টর হুগে। যে সমুদ্রতলবাসী রাক্ষসস্বভাব ভয়ঙ্কর পুরুভুঞ্জের বর্ণনা করিয়াছেন, লোভ বা আকাঙ্ক্ষাকে সেই জীবের BBBBB BBBS BB BB S B BBS BB BB স্ফটিকনিন্দিত জলমধ্যে বাস করে, ঈহার বাসগৃহতলে মুছল জ্যোতিঃ প্রফুল্ল চারু গৈরিক দি ঈদং জ্বলিতে থাকে, ইহার গৃহে কত মহামূল্য মুক্তাপ্রবালাদি কিরণ প্রচার করে ; কিন্তু ইহা মনুষ্যের শোণিত পান করে ; ষে ইহার গৃহসৌন্দর্য বিমুগ্ধ হইরা তথায় গমন করে, এই শতবাহু রাক্ষস ক্রমে এক একটি হস্ত প্রসারিত করিয়া তাহাকে ধরে ; ধরিলে আর কেহ ছাড়াইতে পারে না । শত হস্তে সহস্ৰ সহস্র গ্রস্থিতে জড়াইয় ধরে, তখন রাক্ষস শোণিতশোষক সহস্ৰ মুখ হত ভাগ্য মনুষ্যের অঙ্গে স্থাপন করিয়। তাহার শোণিত শোষণ করিতে থাকে । শৈবলিনী যুদ্ধে আপনাকে অক্ষম বিবেচনা করিয়া "ণে ভঙ্গ দিয়া পলায়ন করিল। মনে তাহার ভয় ছিল, প্রতাপ জাহার পলায়ন-বৃত্তান্ত জানিতে পারিলেই তাহার সন্ধান করিবে। এ জন্ত নিকটে কোথাও অবস্থিতি না করিয়। যতদূর পারিল, ততদুর চলিল । ভারতবর্ষের কটিবন্ধস্বরূপ যে গিরিশ্রেণী, অদূরে তাহা দেখিতে পাইল। গিরি আরোহণ করিলে, পাছে অনুসন্ধান-প্রবৃত্ত কেহ তাহাকে পায়, এ জন্য দিবাভাগে গিরি আরোহণে প্রবৃত্ত হইল না । বনমধ্যে লুকাইয়। রহিল । সমস্ত দিন অনাহারে গেল, সায়হ্নিকাল অতীত হইল, প্রথম অন্ধকার, পরে জ্যোৎস্ন। উঠিবে। শৈবলিনী অন্ধকারে গিরি আরোহণ আরম্ভ করিল ; অন্ধকারে শিলাখণ্ড সকলের আঘাতে পদদ্বয় ক্ষভবিক্ষত হইতে লাগিল ; ক্ষুদ্র লভ গুল্মমধ্যে পথ পাওয়া যায় না ; তাহার কণ্টকে ভগ্ন শাখাগ্রভাগে ব। মূলবিশেষের অগ্রভাগে হস্তপদাদি সকল ছিড়িয়া রক্ত পড়িতে লাগিল । শৈবলিনীর প্রায়শ্চিত্ত আরম্ভ হইল । তাহাতে শৈবলিনীর দুঃখ হইল না । স্বেচ্ছাক্রমে শৈবলিনী এ প্রায়শ্চিত্তে প্রবৃত্ত হইয়াছিল । স্বেচ্ছাক্রমে শৈবলিনা সুখময় সংসার ত্যাগ করিয়া এ ভীষণ কণ্টকময় হিংস্ৰজস্তৃপরিবৃত পৰ্ব্বতারণ্যে প্রবেশ করিয়াছিল । এ ত কাল ঘোরতর পাপে নিমগ্ন হইয়াছিল—এখন দুঃখভোগ করিলে কি সে পাপের কোন উপশম হইবে ? অতএব ক্ষতবিক্ষত চরণে শোণিতাক্তকলেবরে ক্ষুধার্য পিপাসপোড়িত হইয়। শৈবলিনা গিরি আরেহণ করিতে লাগিল ; পথ নাই -লতা-গুল্ম এবং শিলারাশির মধ্যে দিনে ও পথ পাওয়া যায় ন। --এক্ষ: অন্ধকার । অতএব শৈবলিনা পহুক৪ে অল্পদুর্ব মাত্র আরোহণ করিল । এমন সময়ে ঘোরতর মেঘাড়ম্বর করিয়া আসিল । রন্ধ্রশূঙ্গ, ছেদখুষ্ঠ, অনগুবি স্থত কৃষ্ণাবরণে আকাশের মুখ আঁটির দিল । অন্ধকারের উপর অন্ধকার নামিয়। গিরিশ্রেণী, তলস্থ বনরাজি, পূরস্থ নদী সকল ঢাকিয়া ফেলিল, জগৎ অন্ধকারমাত্রাত্মক—শৈবলিনীর বোধ হইতে লাগিল, জগতে প্রস্তর, কণ্টক এবং অন্ধকার ভিন্ন আর কিছুই নাই । আর পর্বতারোহণ চেষ্টা বৃথা--শৈবলিন হতাশ হইয়। সেই কণ্টকবনে উপবেশন করিল। -- আকাশের মধ্যস্থল হইতে সীমান্ত পৰ্য্যস্ত, সীমান্ত হইতে মধ্যস্থল পর্য্যস্ত বিদ্যুৎ চমকিতে লাগিল । অতি ভয়ঙ্কর ৷ সঙ্গে সঙ্গে অতি গম্ভীর মেঘগর্জন আরম্ভ হইল। শৈবলিনা বুঝিল বিষম নৈদাঘবাত্য সেই অদ্রিসামুদেশে প্রধাবিত হইবে । ক্ষতি কি ?