পল্লী-সমাজ প্রশ্নটা ঠিক যেন আকস্মিক তীক্ষ ব্যথার মত রমার সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎবেগে প্রবাহিত হইয়া গেল। তথাপি হাসিয়া কহিল, তুই তাকে ডেকে আনতে পারিস নে ? § এখনই যাব দিদি ? বলিয়া তৎক্ষণাৎ যতীন উঠিয় দাড়াইল । ওরে, কি পাগল ছেলে রে তুই, বলিয়া রমা চক্ষের পলকে তাহার ভয়-ব্যাকুল দুই বাহু বাড়াইয়া তাহাকে জড়াইয়া ধরিল । খবরদার যতীন, কখখনো এমন কাজ করিসনে ভাই, কখখনো না । বলিয়া ভাইটিকে সে যেন প্রাণপণ বলে বুকের উপর চাপিয়া ধরিয়া বাখিল । তাহার অতি দ্রুত হৃদকম্পন স্পষ্ট অনুভব করিয়া যতীন বালক হহলেও এবার বড় বিস্ময়ে দিদির মুখপানে চাহিয়া চুপ করিয়া রহিল। একে ত এমনধারা করিতে কখনও সে পূৰ্ব্বে দেখে নাই, ত’ ছাড৷ ছোটবাবুকে ছোটদাদা বলিয়া জানিয়া যখন তাহার নিজের মনের গতি সম্পূর্ণ অন্তপথে গিয়াছে, তখন দিদি কেন যে র্তাহাকে এত ভয় করিতেছে, তাহা সে কোনমতেই ভাবিয়া পাহল ন । এমন সময়ে মাসিব তীক্ষু আহবান কানে আসিতেই রমা যতীনকে ছাড়িয়া দিয়া তাড়াতাড়ি উঠিয়া দাড়াইল । অনতিকাল পরে তিনি স্বয়ং আসিয়া দ্বারের সম্মুখে দাড়াইয়া বলিলেন, আমি বলি বুঝি, রমা ঘাটে চান করতে গেছে ! বলি একাদশী বলে কি এতটা বেলা পয্যন্ত মাথায় একটু তেল-জলও দিতে হবে না ? মুখ শুকিয়ে যে একেবারে কালিবর্ণ হয়ে গেছে । রম জোর করিয়া একটুখানি হাসিয়া বলিল, তুমি যাও মাসী, আমি এখনই যাচ্ছি। যাবি আর কখন ? বেরিয়ে দেখগে যা বেণীর মাছ ভাগ কবতে এসেচে। মাছের নামে যতীন ছুটিয়া চলিয়া গেল। মাসাঁর অলক্ষ্যে রমা আঁচল দিয়া মুখখান একবার জোর করিয়া মুছিয়া লইয়। তাহার পিছনে পিছনে বাহিরে আসিয়া উপস্থিত হইল। প্রাঙ্গণের উপর মহা কোলাহল । মাছ নিতান্ত কম ধরা পড়ে নাই— একটা বড় ঝুড়ির প্রায় এক ঝুড়ি। ভাগ করিবার জন্য বেণী নিজেই হাজির হইয়াছেন। পাড়ার ছেলে-মেয়েরা আর কোথাও নাই—সঙ্গে সঙ্গে আসিয়া ধিরিয়া দাড়াইয়া গোলমাল করিতেছে। কাসির শব্দ শোনা গেল। পরক্ষণেই—কি মাছ পড়ল হে বেণী । বলিয়া লাঠি হাতে ধৰ্ম্মদাস প্রবেশ করিলেন । তেমন আর কই পড়ল। বলিয়া বেণী মুখখান অপ্রসন্ন করিলেন। জেলেকে ডাকিয়া কহিলেন, আর দেরি করচিস্ কেন রে ? শীগগির করে দু-ভাগ করে ফেল না । জেলে ভাগ করিতে প্রবৃত্ত হইল । কি হচ্চে গো রমা ? অনেকদিন আসতে পারিনি। বলি, মায়ের আমার খবরটা একবার নিয়ে যাই, বলিয়া গোবিন্দ গাঙ্গুলী বাড়ি ঢুকিলেন । }\o ३छ्र-३३