বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩১
ছন্দ
৩১

ছন্দের অর্থ ৩১

এইখানে কাবোর সঙ্গে গানের তুলনা করে আলোচ্য বিষয়টাকে পরিষ্কার করবার চেষ্টা করা যাক ।

সুর পদার্থটাই একটা বেগ। সে আপনার মধ্যে আপনি স্পন্দিত হচ্ছে। কথা যেমন অর্থের মোক্তারি করবার জন্তে, স্থর তেমন নয়, সে আপনাকেই আপনি প্রকাশ করে। বিশেষ স্থুরের সঙ্গে বিশেষ সুরের সংযোগে ধ্বনিবেগের একটা সমবায় উৎপন্ন হয়। তাল সেই সমবেত বেগটাকে গতিদান করে । ধ্বনির এই গতি-বেগে আমাদের হৃদয়ের মধ্যে যে গতি সঞ্চার করে সে একটা বিশ্তদ্ধ আবেগ মাত্র, তার যেন কোনো অবলম্বন নেই। সাধারণত সংসারে আমরা কতকগুলি বিশেষ ঘটনা আশ্রয় করে সুখে ছুঃখে বিচলিত হই। সেই ঘটনা সত্যও হতে পারে, কাল্পনিকও হতে পারে, অর্থাৎ আমাদের কাছে সত্যের মতো! প্রতিভাত হতে পারে। তারই আঘাতে আমাদের চেতনা নানা রকমে নাড়া পায়, সেই নাড়ার প্রকারভেদ আমাদের আবেগের প্রক্কৃতিভেদ ঘটে । কিন্তু গানের স্থরে আমাদের চেতনাকে যে নাড়া দেয় দে কোনো ঘটনার উপলক্ষ্য দিয়ে নয়, সে একেবারে অব্যবহিত ভাবে । স্থতরাং তাতে যে আবেগ উৎপন্ন হয়, মে অছৈতুক আবেগ। তাতে আমাদের চিত্ত নিজের স্পন্দনবেগেই নিজেকে জানে, বাইরের সন্দে কোনো ব্যবহারের যোগে নয়।

সংসারে আমাদের জীবনে যে সব ঘটনা ঘটে তার সঙ্গে নানা দায় জড়ানে! আছে। জৈবিক দায়, বৈষয়িক দায়, সামাজিক দয়, নৈতিক দায়। তার জন্যে নানা চিস্তায় নানা কাজে আমাদের চিতকে বাইরে বিক্ষিপ্ধ করতে হয়। শিল্পকলায়, কাব্যে এবং রসসাহিত্যমাত্রেই আমাদের চিন্তকে সেই সমস্ত দায় থেকে মুক্তি দেয়। তখন আমাদের চিন্ত স্থুখ ছুঃখের মধ্যে আপনারই বিশুদ্ধ প্রকাশ দেখতে পায়। সেই প্রকাশই আনন্দ। এই প্রকাশকে আমরা চিরন্তন বলি এই