বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
সমাজ

যাঁহারা ক্ষমতাশালী ধনী লোক, তাঁহারা সমাজকে উপেক্ষা করিতে পারেন। তাঁহারা সহরে আসিয়া কেবলমাত্র বন্ধুমণ্ডলীকে লইয়া সামাজিক ক্রিয়া সম্পন্ন করিতে পারেন, কিন্তু যাঁহারা সঙ্গতিপন্ন নহেন, তাঁহাদের পলাইবার পথ নাই।

 আমরা বীরভূম জেলায় একজন কৃষী গৃহস্থের বাড়ি বেড়াইতে গিয়াছিলাম। গৃহস্বামী তাহার ছেলেকে চাকরী দিবার জন্য আমাকে অনুরোধ করাতে আমি বলিলাম—“কেনরে ছেলেকে চাষবাস ছাড়াইয়া পরের অধীন করিবার চেষ্টা করিস্ কেন?” সে কহিল—“বাবু, একদিন ছিল যখন জমী জমা লইয়া আমরা সুখেই ছিলাম। এখন শুধু জমি জমা হইতে আর দিন চলিবার উপায় নাই।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম— “কেন বল্‌ত?” সে উত্তর করিল,—“আমাদের চাল্ বাড়িয়া গেছে। পূর্ব্বে বাড়িতে কুটুম্ব আসিলে চিঁড়া গুড়েই সন্তুষ্ট হইত, এখন সন্দেশ না পাইলে নিন্দা করে। আমরা শীতের দিনে দোলাই গায়ে দিয়া কাটাইয়াছি, এখন ছেলেরা বিলাতি র‍্যাপার না পাইলে মুখ ভারি করে। আমরা জুতা পায়ে না দিয়াই শ্বশুরবাড়ি গেছি। ছেলেরা বিলাতী জুতা না পরিলে লজ্জায় মাথা হেঁট করে। তাই চাষ করিয়া আর চাষার চলে না।”

 কেহ কেহ বলিবেন, এ-সমস্ত ভাল লক্ষণ; অভাবের তাড়নায় মানুষকে সচেষ্ট করিয়া তোলে। ইহাতে তাহার সম্পূর্ণ ক্ষমতা বিকাশের উত্তেজনা জন্মে। কেহ কেহ এমনও বলিবেন, বহুসম্বন্ধবিশিষ্ট সমাজ ব্যক্তিত্বকে চাপিয়া নষ্ট করে। অভাবের দায়ে এই সমাজের বহুবন্ধনপাশ শিথিল হইয়া গেলে মানুষ স্বাধীন হইবে। ইহাতে দেশের মঙ্গল।

 এ সমস্ত তর্কের মীমাংসা সংক্ষেপে হইবার নহে। য়ুরোপে ভোগের তাগিদ দিয়া অনেকগুলি লোককে মারিয়া কতকগুলি লোককে ক্ষমতাশালী করিয়া তোলে। হিন্দু সমাজতন্ত্রে কতকগুলি লোককে