বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কাদম্বরী.djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাদম্বরী।
২৩

আমি কিছুই জানি না; এই বলিয়া পুনর্ব্বার অধোমুখী হইলেন। এইরূপ অনেক পরিহাসকথার পর শুকনাস আপন আলয়ে প্রস্থান করিলেন।

ক্রমে ক্রমে গর্ভের উপচয় হওয়াতে মহিষীর যে কিছু গর্ভদোহদ হইতে লাগিল রাজা তৎক্ষণাৎ সম্পাদন করিতে লাগিলেন। প্রসবসময় সমাগত হইলে মহিষী শুভ দিনে শুভ লগ্নে এক পুত্ত্র সন্তান প্রসব করিলেন। নরপতির পুত্ত্র হইয়াছে শুনিয়া নগরবাসী লোকের আহ্লাদের পরিসীমা রহিল না। রাজবাটী মহোৎসবময়, নগর আনন্দময় ও পথ কোলাহলময় হইল। গৃহে গৃহে নৃত্য, গীত, বাদ্য, আরম্ভ হইল। নরপতি সানন্দ চিত্তে দীন, দুঃখী, অনাথ প্রভৃতিকে অর্থ দান করিতে লাগিলেন। যে যাহা আকাঙ্ক্ষা করিল তাহাকে তাহাই দিলেন। কারাবদ্ধকে মুক্ত ও ধনহীনকে ঐশ্বর্য্যশালী করিলেন।

গণকেরা গণনা দ্বারা শুভলগ্ন স্থির করিয়া দিলে নরপতি পুত্ত্রমুখ নিরীক্ষণ করিবার নিমিত্ত মন্ত্রীর সহিত গৃহে গমন করিলেন। দেখিলেন, সূতিকাগৃহের দ্বারদেশে দুই পার্শ্বে সলিলপূর্ণ দুই মঙ্গলকলস, স্তম্ভের উপরিভাগে বিচিত্র কুসুমে গ্রথিত মঙ্গলমালা। পুরন্ধ্রীবর্গ কেহ বা ষষ্ঠীদেবীর পূজা করিতেছে, কেহ বা মাতৃকাগণের বিচিত্র মূর্ত্তি চিত্রপটে লিখিতেছে। ব্রাহ্মণেরা মন্ত্র পাঠ পূর্ব্বক সূতিকাগৃহের অভ্যন্তরে শান্তিজল নিক্ষেপ করিতেছেন। পুরোহিতেরা নারায়ণের সহস্র নাম পাঠ করিয়া শুভ স্বস্ত্যয়ন করিতেছেন। রাজা জল ও অনল স্পর্শ পূর্ব্বক সূতিকাগৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন। দেখিলেন, রাজকুমার মহিষীর অঙ্কে শয়ন করিয়া সূতিকাগৃহ উজ্জ্বল করিয়া রহিয়াছেন। দেহপ্রভায় দীপপ্রভা তিরোহিত হইয়াছে। এরূপ অঙ্গসৌষ্ঠব ও রূপলাবণ্য, যে হঠাৎ দেখিলে বোধ হয় যেন, সাক্ষাৎ কুমার রাজকুমাররূপে অবতীর্ণ হইয়াছেন। রাজা নিমেষশূন্য লোচনে বারংবার দেখিতে লাগিলেন, কিন্তু অন্তঃকরণ তৃপ্ত হইল না। যত বার দেখেন অদৃষ্ট-