এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বেষ্টিত্ং নাগপাশেন ভ্রুকুটী-কুটিলাননং।
পুরু-বংশ পুণ্যকথা যেইজন শুনে। আয়ুর্যশ পুণ্য তার বাড়ে দিনে দিনে।। সংসারে যতেক ধর্ম্ম শাস্ত্রে বেদে কয়। সর্ব্ব্ধর্ম্ম ফল পায় নাহিক সংশয়।। আদিপর্ব্ব ভারত শ্রীব্যাস-বিরচিত। কাশীরাম দাস কহে রচিয়া সঙ্গীত।। মহাভিষ রাজার প্রতি ব্রম্ভার অভিশাপ এবং শান্তনুর উৎপত্তি
জন্মেজয় বলে মুনি কহ আর বার। সংক্ষেপে কহিলা, কহ করিয়া বিস্তার।। ত্রৈলোক্যপাবনা গঙ্গা বিষ্ণু-অংশে জন্ম। শান্তনুর ভার্য্যা শুনি এ অদ্ভুত কর্ম্ম।। মুনি বলে শুন কহি তাহার কারণ। মহাভিষ নামে রাজা ইক্ষ্বাকুনন্দন।। ইন্দ্রের সম্মতে যজ্ঞে করিল বিস্তর। সহস্রেক অশ্বমেধ কৈল নরবর।। দেব দ্বিজ দরিদ্রে তুষিল নরপতি।। ব্রম্ভলোকে গেল রাজা যজ্ঞপুণ্যফলে। ব্রম্ভার সহিত তথা বৈসে কুতূহলে।। বহুকাল তথায় আছয়ে নরপতি। একদিন দেখে রাজা দৈবের যে গতি।। ধ্যানেতে আছেন ব্রম্ভা বসিয়া আসনে। সম্মুখে বেষ্টিত যত সিদ্ধ মুনিগণে।। ব্রম্ভার সভার তুল্য নাহি পাঠান্তর। সবে তথা চতুর্মুখ গৌর-কলেবর।। দক্ষ আদি প্রজাপতি ইন্দ্র আদি দেবে। দেব ঋষি মুনিগণ নিত্য আসি সেবে।। গঙ্গাদেবী আইলেন বম্ভার সদনে। হেনকালে অতিবেগে বহিল পবন।। বায়ুতেজে জাহ্নবীর উড়িল বসন। দেখি হেট মুণ্ড করিলেন দেবগণ।। অপূর্ব্ব গঙ্গার অঙ্গ দেখিয়া সঘনে। মহাভিষ রাজা দেখে নিশ্চল নয়নে।। মহাভিষ রাজা অতি রূপে অনুপম। তাঁর দিকে গঙ্গাদেবী চান অবিরাম।। দোঁহার দেখিয়া দৃষ্টি বলে প্রজাপতি। মম লোকে আসি রাজা করিলে অনীতি।। ব্রম্ভলোকে আসি কর মনুষ্য-আচার। মর্ত্তে জন্ম ল'য়ে ভোগ কর পুনর্ব্বার।। পুনরাপি হেথায় আসিবে পুণ্যবলে। সোমবংশে জন্ম গিয়া লও ভূমণ্ডলে।। ব্রম্ভার পাইয়া আজ্ঞা চিন্তে নরপতি। তথা হৈতে পতন হৈল শীঘ্রগতি।। সোমবংশে মহারাজ প্রতীপ আছিল। মহাভিষ রাজা তাঁর গৃহে জন্ম নিল।। বাহুড়িল গঙ্গা করি ব্রম্ভা দরশন। পথেতে দেখিল আসে বসু অষ্টজন।। বিরস-বদন গঙ্গা দেখি বসুগণে। জিজ্ঞাসিল তোমরা চিন্তিত কি কারণে।। বসুগণ বলে চিন্তা করি নিজ দোষে। বশিষ্ঠ দিলেন শাপ জন্মিতে মানুষে।। পৃথিবীতে জন্ম হবে কাঁপিছে অন্তর। বিশেষ মনুষ্য যোনি নরক দুস্তর।। উপায় না দেখি তবে ভাবি সে করণ। ভাল হৈল তব সনে হৈল দরশন।। গঙ্গা বলে কি করিব কহ সন্নিধান। যা বলিবে অঙ্গীকার না করিভ আন।। বসুগণ বলে মর্ত্তে জন্মিব নিশ্চয়। নরযোনি জন্মিতে হতেছে বড় ভয়।। আপনি মনুষ্যলোকে হ'য়ে রাজনারী। আমা সবাকার তুমি হও গর্ভধারী।। আর এক নিবেদন করি যে তোমারে। জন্মমাত্র ভাসাইয়া দিও গঙ্গানীরে।। বসুর বচনে গঙ্গা স্বীকার করিল। শুনি অষ্টবসু তবে হরষিত হৈল।। কুরুবংশে আছিল প্রতীপ নামে রাজা। ধর্মেতে তৎপর বড়, বলে মহাতেজা।। দেবাপি নামেতে তাঁর প্রথম নন্দন। অল্পকালে সন্ন্যাসী হইয়া গেল বন।। দেবাপি বিহনে রাজা হৈল পুত্রহীন। গঙ্গাজলে থাকে সদা বয়সে প্রবীণ।।