বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মেজদিদি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

থালার উপর নিঃশব্দে ঝরিয়া পড়িতে লাগিল, সে সেই ভাত মাথা গুঁজিয়া গিলিতে লাগিল। বাঁ-হাতটা তুলিয়া চোখ মুছিতে পর্যন্ত সাহস করিল না, পাছে দিদির চোখে পড়ে। অনতিপূর্বেই মায়া-কান্না কাঁদার অপরাধে বকুনি খাইয়াছিল। সেই ধমক তাহার এতবড় মাতৃশোকেরও ঘাড় চাপিয়া রাখিল।


॥দুই॥

 পৈতৃক বাড়িটা দুই ভায়ে ভাগ করিয়া লইয়াছিল।

 পাশের দোতলা বাড়িটা মেজভাই বিপিনের। ছোটভায়ের অনেক দিন মৃত্যু হইয়াছিল। বিপিনেরও ধান-চালের কারবার। তাঁহার অবস্থা ভাল, কিন্তু বড়ভাই নবীনের সমান নয়। তথাপি ইহার বাড়িটাই দোতলা। মেজবৌ হেমাঙ্গিনী শহরের মেয়ে। তিনি দাসদাসী রাখিয়া, লোকজন খাওয়াইয়া, জাঁকজমকে থাকিতে ভালবাসেন। পয়সা বাঁচাইয়া গরিবী চালে চলে না বলিয়াই বছর-চারেক পূর্বে দুই জায়ে কলহ করিয়া পৃথক হইয়াছিলেন। সেই অবধি প্রকাশ্যে কলহ অনেকবার হইয়াছে, অনেকবার মিটিয়াছে, কিন্তু মনোমালিন্য একদিনের জন্যও ঘুচে নাই। কারণ, সেটা বড়-জা কাদম্বিনীর একলার হাতে। তিনি পাকা লোক, ঠিক বুঝিতেন, ভাঙা হাঁড়ি জোড়া লাগে না। কিন্তু মেজবৌ অত পাকা নয়, অমন করিয়া বুঝিতেও পারিতেন না। ঝগড়াটা প্রথমে তিনিই করিয়া ফেলিতেন বটে, কিন্তু তিনিই মিটাইবার জন্য, কথা কহিবার জন্য, খাওয়াইবার জন্য ভিতরে ভিতরে ছাঁট্‌-ফট্‌ করিয়া একদিন আস্তে আস্তে কাছে আসিয়া বসিতেন। শেষে হাতে-পায়ে পড়িয়া কাঁদিয়া-কাঁটিয়া, ঘাট মানিয়া, বড়-জাকে নিজের ঘরে ধরিয়া আনিয়া ভাব করিতেন। এমনই করিয়া দুই জায়ের অনেকদিন কাটিয়াছে। আজ বেলা তিনটা সাড়ে-তিনটার সময় হেমাঙ্গিনী এবাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। কুপের পাশ্বে সিমেণ্ট-বাঁধান বেদীর উপর রোদে বসিয়া কেষ্ট সাবান দিয়া একরাশ কাপড় পরিষ্কার করিতেছিল, কাদম্বিনী দূরে দাঁড়াইয়া, অল্প সাবান ও