বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মেজদিদি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ডুব দিয়া ফিরিয়া আসিয়া কহিল, আমার গাড়ি গেল কোথায়?

 রমণী কহিলেন, আমি তাকে ভাড়া দিয়ে বিদেয় করেচি।

 আপনি ভাড়া দিলেন!

 দিলামই বা। চলুন। বলিয়া আর একবার ভুবনমোহন হাসি হাসিয়া অগ্রবর্তিনী হইলেন।

 সত্য একেবারেই মরিয়াছিল, না হইলে যত নিরীহ, যত অনভিজ্ঞই হৌক, একবার সন্দেহ হইত-এ সব কি!

 পথ চলিতে চলিতে রমণী কহিলেন, কোথায় বাসা বললেন, চোরবাগান?

 সত্য কহিল, হ্যাঁ।

 সেখানে কি কেবল চোরেরাই থাকে?

 সত্য আশ্চর্য হইয়া কহিল, কেন?

 আপনি ত চোরের রাজা। বলিয়া রমণী ঈষৎ ঘাড় বাঁকাইয়া কটাক্ষে হাসিয়া আবার নির্বাক মরাল-গমনে চলিতে লাগিলেন। আজ কক্ষের ঘট অপেক্ষাকৃত বৃহৎ ছিল, ভিতরে গঙ্গাজল ছলাৎ-ছল্‌ ছলাৎ-ছল্‌ শব্দে-অর্থাৎ ওরে মুঢ়-ওরে অন্ধ যুবক। সাবধান। এ-সব ছলনা-সব ফাঁকি, বলিয়া উছলিয়া একবার ব্যঙ্গ, একবার তিরস্কার করিতে লাগিল।

 মোড়ের কাছাকাছি আসিয়া সত্য সসঙ্কোচে কহিল, গাড়ি ভাড়াটা-

 রমণী ফিরিয়া দাঁড়াইয়া অফুট মৃদুকণ্ঠে জবাব দিল, সে ত আপনার দেওয়াই হয়েচে।

 সত্য এই ইঙ্গিত না বুঝিয়া প্রশ্ন করিল, আমার দেওয়া কি করে?

 আমার আর আছে কি দেব! যা ছিল সমস্তই তুমি ত চুরিডাকাতি করে নিয়েচ। বলিয়াই সে চকিতে মুখ ফিরাইয়া, বোধ করি উচ্ছ্বসিত হাসির বেগ জোর করিয়া রোধ করিতে লাগিল।

 অভিনয় সত্য দেখিতে পায় নাই, তাই এই চুরির প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত তীব্র তড়িৎরেখার মত তাহার সংশয়ের জাল আপ্রান্ত বিদীর্ণ করিয়া

৪৮