বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নিষ্কৃতি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 গিরিশ পুনরায় উত্তেজিত হইয়া বলিলেন, আমার সর্বস্ব নিয়ে গেছে, কিছু আর রেখেচে হে হরিশ! সেটা একেবারে বেহেড় লক্ষ্মীছাড়া হয়ে গেছে! শুক্রবার দিন কোর্টে এসে বলে—বাড়ি-ঘরদোর মেরামত করতে হবে, পাঁচশ টাকা চাই।

 হরিশ অবাক হইয়া গেলেন, বলেন কি? সাহস ত কম নয়!

 গিরিশ কহিলেন, সাহস বলে সাহস! একেবারে লম্বা ফর্দ—এখানটা সারাতে হবে, ওখানটা গাঁথাতে হবে; এটা না বদলালে নয়, ওটা না করলেই চলে না। শুধু কি তাই! সংসারের অনটন—শীতের কাপড় চোপড় কিনতে হবে—ধান কিনে, আলু কিনে রাখতে হবে, এমনি হাজারো খরচ দেখিয়ে আরও তিনশ টাকার দরকার।

 হরিশ অসহ্য ক্রোধ কোনমতে সংবরণ করিয়া শুধু কহিলেন, নির্লজ্জ! তারপরে?

 গিরিশ বলিলেন, ঠিক তাই। হতভাগার একেবারে লজ্জাশরম নেই—একেবারে নেই। এই আটশ’ টাকা নিয়ে তবে ছাড়লে।

 নিয়ে গেল? আপনি দিলেন?

 গিরিশ বলিলেন, না হলে কি ছাড়ে? নিয়ে তবে উঠল যে।

 হরিশের সমস্ত মুখখানা প্রথমটা অগ্নিবর্ণ হইয়া পরক্ষণেই ছাইয়ের মত হইয়া গেল! স্তব্ধ হইয়া কিছুক্ষণ বসিয়া থাকিয়া কহিলেন, তা হলে মামলা-মকদ্দমা করে আর লাভ কি দাদা?

 গিরীশ তৎক্ষণাৎ বলিলেন, কিছু না, কিছু না। নিজের সংসারটা যে চালিয়ে নেবে হতভাগার সেটুকু ক্ষমতাও নেই—এমনি অপদার্থ হয়ে গেছে। শুনি, বৈঠকখানায় দিব্যি আড্ডা বসিয়ে দিনরাত তাস পাশা চলচে, আর খাচ্চেন—ব্যস। মানুষ যেমন শিব-স্থাপনা করে, আমাদেরও হয়েছে তাই—বুঝলে না হরিশ! বলিয়া নিজের রসিকতায় নিজেই মাতিয়া উঠিয়া হোহো রবে হাসিয়া ঘর ভরিয়া দিলেন।

 হরিশ আর সহ্য করিতে না পারিয়া নিঃশব্দে উঠিয়া গেলেন। দাঁতে দাঁত চাপিয়া বলিতে লাগিলেন, আচ্ছা, আমি একাই দেখচি।

 মাঘ মাসের বাইশে মকদ্দমার দিন ছিল। বিশে গিরীশের এক জ্ঞাতিকন্যার বিবাহে কন্যার পিতা আসিয়া গিরীশকে চাপিয়া ধরিলেন,

৬০