অপূর্ব্ব কহিল, না পাগল হইনি। উনি যেই হোন, রামদাস তলওয়ারকরের পদধূলির যোগ্য ন’ন, একথা আমি মুক্তকণ্ঠে বলব। তার তেজ, তার বাগ্মিতা, তার নির্ভীকতাকে ইনি মনে মনে ঈর্ষা করেন। তাই তোমাকে যেতে দিলেন না, তাই আমাকে কৌশলে বাধা দিলেন।
ভারতী উঠিয়া দাঁড়াইল। আপনাকে অপরিসীম যত্নে সংযত করিয়া সহজকণ্ঠে কহিল, আপনাকে আমি অপমান করতে পারব না, কিন্তু এখান থেকে আপনি যান অপূর্ব্ববাবু। আপনাকে আমরা ভুল বুঝেছিলাম। ভয়ে যার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, সে উন্মাদের এখানে ঠাঁই নেই। আপনার কথাই সত্য, পথের দাবীতে আপনার স্থান হবে না। এর পরে আর কোন ছলে কোনদিন আমার বাসায় ঢোকবার চেষ্টা করবেন না।
অপূর্ব্ব নিরুত্তরে উঠিয়া দাঁড়াইতেই ডাক্তার তাহার হাত ধরিয়া ফেলিলেন। বলিলেন, আর একটু বসুন অপূর্ব্ববাবু, এই অন্ধকারে একলা যাবেন না। আমি স্টেশনে যাবার পথে আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাব।
অপূর্ব্বর চেতনা ফিরিয়া আসিতেছিল, সে পুনরায় অধোমুখে বসিয়া পড়িল।
ভুক্তাবশিষ্ট বিস্কুটগুলি ডাক্তার পকেটে পুরিতেছিলেন দেখিয়া ভারতী জিজ্ঞাসা করিল, ওকি হচ্চে আপনার?
রসদ সংগ্রহ করে রাখচি ভাই।
সত্য সত্যই আজ রাত্রে যাবেন না কি?
নইলে কি মিথ্যামিধ্যিই অপূর্ব্ববাবুকে ধরে রাখলাম? সবাই মিলে এমন অবিশ্বাস করলে আমি বাঁচি কি করে বল ত? এই বলিয়া তিনি কৃত্রিম ক্রোধ প্রকাশ করিতে ভারতী অভিমান করিয়া কহিল, আজ আপনার যাওয়া হবে না, আপনি বড় ক্লান্ত। তা ছাড়া সুমিত্রাদিদি অসুস্থ, আপনি কেবলি কোথায় চলে যাবেন,—একটা কথা শুনতে পাইনে, একটা উপদেশ নিতে পাইনে, পথের দাবী একলা আমি চালাই কি করে বলুন ত? আমিও তাহলে যেখানে খুশি চলে যাব!
লেখা চিঠিগুলো ডাক্তার তাহার হাতে দিয়া হাসিয়া কহিলেন, একখানি তোমার, একখানি সুমিত্রার, অন্যখানি তোমাদের পথের দাবীর! আমার উপদেশ বল, আদেশ বল, সবই এর মধ্যে পাবে।
চিঠিগুলি মুঠোর মধ্যে লইয়া ভারতী মুখ মলিন করিয়া বলিল, এবার কি আপনি বেশিদিনের জন্য যাচ্চেন?
দেবা ন জানন্তি,—বলিয়া ডাক্তার মুচকিয়া হাসিলেন।
১৫৯