কি হ’লো? কথা ক’ন না যে বড়?
অপূর্ব্ব কহিল, কি বলব বলুন।
ডাক্তার কহিলেন, যা ইচ্ছে। দেখুন অপূর্ব্ববাবু, এই ভারতীটি বড় ভাল মেয়ে। যেমন বুদ্ধিমতী, তেমনি কর্ম্মঠ এবং তেমনি ভদ্র।
ইহাও বাজে। কিন্তু প্রত্যুত্তরে এ প্রশ্ন সে ইচ্ছা করিয়াই করিল না যে, আপনি তাহাকে কতদিন হইতে জানিলেন এবং কি করিয়া জানিলেন। শুধু বলিল, হাঁ। কিন্তু শ্রোতার যদি এদিকে কিছুমাত্র খেয়াল থাকিত ত অপূর্ব্বর মুখ হইতে এই এক অক্ষরের জবাবে অত্যন্ত বিস্মিত হইয়া যাইতেন। কিন্তু তিনি যে বিমনা হইয়াই আলাপ করিতেছিলেন, অপূর্ব্বকে তাহা আর নূতন করিয়া বুঝিতে হইল না। বক্তা বোধকরি তাঁহার শেষ কথায়ই সূত্র ধরিয়া কহিলেন, আপনাদের প্রসঙ্গে কথা কইতে তিনি আপনার সম্বন্ধে বলছিলেন, আপনি নাকি ভয়ানক হিন্দু—একেবারে গোঁড়া। ভারতী বলছিলেন, এত বড় ভয়ঙ্কর হিন্দু বামুনের তিনি জাত মেরে দিয়েচেন।
অপূর্ব্ব বলিল, তা হবে। এই একান্ত অন্যমনস্ক লোকটির সহিত তর্ক করিতে তাহার ইচ্ছাই হইল না। বড় রাস্তা প্রায় শেষ হইয়া আসিল, গলির মোড়ে সামনাসামনি আলো দুইটা সম্মুখেই দেখা দিল, আর মিনিট দশেকের মধ্যেই গন্তব্য স্থানে পৌঁছানো যাইবে, এমনি সময়ে ডাক্তার তাঁহার ঘুমন্ত মনটাকে যেন অকস্মাৎ ঝাড়া দিয়া একেবারে সজাগ করিয়া দিলেন, কহিলেন, অপূর্ব্ববাবু!
অপূর্ব্ব তাঁহার কণ্ঠস্বরের তীক্ষ্ণতায় নিজেও সচেতন হইয়া উঠিল, কহিল, বলুন।
ডাক্তার বলিলেন, এদেশে আমি থাকা পর্য্যন্ত কাজ নেই, কিন্তু চলে গেলে আপনি নিঃসঙ্কোচে সুমিত্রাকে সাহায্য করবেন। এমন মানুষ আপনি পৃথিবী ঘুরে বেড়ালেও কখনো পাবেন না। এঁর পথের দাবী যেন অনাদরে অবহেলায় না মারা পড়ে। এতবড় একটা আইডিয়া কি কেবল এই ক’টি মেয়েমানুষেই সার্থক করে তুলতে পারবে। আপনার একনিষ্ঠ সেবার একান্ত প্রয়োজন।
এই ব্যক্তির ধারণায় সে যে সত্যই এতবড় লোক অপূর্ব্ব তাহা প্রত্যয় করিল না। কহিল, এতবড় একটা আইডিয়াকে তবে আপনিই বা ফেলে যেতে চাচ্চেন কেন?
ডাক্তার কহিলেন, অপূর্ব্ববাবু, যেখানে ফেলে যাওয়াই মঙ্গল, সেখানে আঁকড়ে থাকাতেই অকল্যাণ। আমার সাহায্যে আপনাদের কাজ নেই,—আপনারা নিজেরাই এটা গড়ে তুলুন, হয়ত বা এর ভেতর দিয়েই দেশের সবচেয়ে বড় কাজ হবে।
অপূর্ব্ব কহিল, নবতারার ব্যাপারটা আমি বিশ্বাস করতে পারিনে ডাক্তারবাবু।
ডাক্তার বলিলেন, কিন্তু সুমিত্রাকে বিশ্বাস করবেন। বিশ্বাসের এত বড় উঁচু জায়গা
১০৯