বাদাবন সুলভ বৃক্ষাদির স্কন্ধ ও শঙ্খ শম্বূক শ্রেণীর বহুবিধ জীবাস্থি নিহিত দেখিয়া ছিলেন। তাহাতে বেশ অনুমান হয় যে, এক সময়ে শিবাদহ নদীগর্ভে নিমজ্জিত ছিল, ক্রমশঃ উহা জাগিয়া উঠিয়াছে এবং ঐ সুন্দরী গুঁড়িগুলি সুন্দরবনের বিস্তৃতির সাক্ষ্যদান করিতেছে।
কিছুকাল পূর্ব্বে, কলিকাতা ফোর্ট উইলিয়ম দুর্গে ৪৮১ ফিট্ গভীর একটী কূপ কাটা হয়। ভূপৃষ্ঠ হইতে যথাক্রমে ঐ কূপগর্ভ হইতে বালুকা, কর্দ্দম, পিট্ ও প্রস্তর স্তর বাহির হইয়াছিল। ভূপৃষ্ঠ হইতে ৩৫০ ফিট্ নিম্নে প্রথমে কচ্ছপের পৃষ্ঠাস্থি, তদনন্তর ৩৮০ ফিট্ নিম্নে সুমিষ্ট জলজীবী শম্বূক জাতির মৃতাস্থি-স্তর এবং তাহার পর ধ্বস্ত বনমালার নিদর্শন (a bed of decayed wood) লক্ষীভূত হয়। ঐ বৃক্ষাবয়বাদি নিরীক্ষণ করিলে উপলব্ধি হয় যে, বর্ত্তমান ভূপৃষ্ঠ হইতে ৩৮০ ফিট্ নিম্নে অবস্থিত ভূপৃষ্ঠস্তরটী বহুদিন পূর্ব্বে নিবিড় বনমালায় সমাচ্ছাদিত ছিল। কিন্তু ঐ ভূপৃষ্ঠ বর্ত্তমান সুন্দরবনের সমতল প্রান্তরের ন্যায় যে উচ্চ ছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। কারণ তাহা না হইলে অবশ্যই উহা সমুদ্রজলে নিমগ্ন হওয়াই সম্ভব। এরূপ স্থলে অবশ্যই স্বীকার করিতে হইবে যে, এক সময়ে ঐ বৃক্ষাদি প্রাচীন বঙ্গপৃষ্ঠ পরিশোভিত করিয়াছিল, কালে উহ ভূমিকম্পাদি কোন নৈসর্গিক কারণে ভূগর্ভে প্রোথিত হইয়া গিয়াছে। তাহার পর নদীস্রোতে এই প্রভূত মৃৎপিণ্ড তদুপরি সঞ্চিত হইয়া বর্ত্তমান স্তরগুলি সংগঠিত করিয়াছে; অথবা সেই সময়ে ঐ স্থান ক্রমশঃ চররূপে সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে ঊর্দ্ধে উঠিয়াছিল।
ভূপঞ্জর মধ্যে নিহিত এই সকল বনমালা কালে ধ্বংস প্রাপ্ত হইয়া কয়লায় রূপান্তরিত হইয়াছে। বাঙ্গালায় এই কয়লার খনির অভাব নাই। রাণীগঞ্জের কয়লার খনি বিশেষ বিখ্যাত। এখন বরাকর ও বাঁকুড়া জেলা পর্য্যন্ত বিস্তৃত স্থানে কয়লার খাদ কাটিয়া কয়লা উত্তোলিত হইতেছে। এই সুবিস্তৃত খাদ দৃষ্টে অনুমান হয় যে, প্রাচীনযুগে রাণীগঞ্জ হইতে বরাকর পর্য্যন্ত একটা নিবিড় বন বিরাজিত ছিল। [কয়লা ও প্রস্তর শব্দ দেখ]
কয়লা ভিন্ন ভূগর্ভে লৌহও পাওয়া যায়। বরাকর ও বীরভূমে কারখানা করিয়া লোহা গালাইবার ব্যবস্থা হইয়াছিল। এখনও স্থানে স্থানে দেশীয় প্রথায় লোহা গালাই হইয়া থাকে। [লৌহ দেখ।]
পূর্ব্বে এখানে সমুদ্র-জল হইতে লবণ প্রস্তুত করিয়া বিক্রয়েব জন্য একটা বিস্তৃত কারবার ছিল। গবর্মেণ্ট বিলাতী লবণ-বাণিজ্যের হিতার্থে দেশীয় লবণ প্রস্তুত প্রথা রহিত করিয়াছেন। এখনও উড়িষ্যা ও ২৪ পরগণার স্থানবিশেষে রাজকীয় বিধি অনুসারে দেশীয় সামুদ্র লবণ প্রস্তুত হইয়া থাকে। [লবণ দেখ]বাঙ্গালায় উল্লেখযোগ্য কোন পর্ব্বত নাই। উত্তরে একমাত্র হিমাচলপৃষ্ঠস্থ দার্জ্জিলিঙ্গ শৃঙ্গভাগ। বাঙ্গালার ছোটলাট বাহাদুর তথায় রাজকার্য্যালয়াদি স্থাপন করিয়া একটী নগর প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। এখন ঐ স্থান ও তৎপাদমূলস্থ কার্সীওঙ্গ্ নগর স্বাস্থ্যাবাসরূপে পরিগণিত। এতদ্ভিন্ন পশ্চিমাংশে বাঁকুড়া হইতে ছোট নাগপুর বিভাগ এবং সাঁওতাল পরগণার স্থানে স্থানে গণ্ডশৈলমালা দৃষ্টিগোচর হয়। ঐ পর্ব্বতগুলি বিন্ধ্যপাদ হইতে প্রসৃত হইয়াছে। বৈজ্ঞানিকগণের বিশ্বাস, আগ্নেয়গিরির উদ্গারিত গলিত স্রাব গড়াইয়া আসিয়া এই পর্ব্বতশ্রেণীতে পরিণত হইয়াছে। ঐ সকল পর্ব্বতের এক একটী অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিত। খশিয়া, জয়ন্তী প্রভৃতি পর্ব্বতমালা এখন আসাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। উক্ত পর্ব্বত মালার বিভিন্ন স্তরাদির বিষয় স্থানান্তরে বিবৃত আছে। [পর্ব্বত ও প্রস্তর দেখ।]
উৎপন্ন দ্রব্য ও অধিবাসী।
এই প্রদেশের প্রত্যেক জেলায় ও তাহার বিভিন্ন উপবিভাগে অনেকগুলি নগর আছে, ঐ নগরগুলি প্রধানতঃ তথাকার