বিষয়বস্তুতে চলুন

ধূলিরাশি/অপার্থিব সান্ত্বনা

উইকিসংকলন থেকে

অপার্থিব সান্ত্বনা

 “I will come again, and receive you unto myself; that where I am, there ye may be also.” John. xiv. 3.

“আবার আসিব,” আহা! ধন্য এবচন,
 প্রভু যীশু গেছেন কহিয়ে।
“আবার আসিব আমি ভবনে আমার,
 তোমাদের যাইব লইয়ে।”


“আবার আসিব,” এই দুটি কথামাঝে,
 কত অর্থ লুকান র’য়েছে।
শান্তির প্রবাহ এই দুটি কথা লয়ে,
 কত প্রাণে বহিয়া গিয়াছে।


কত যে ব্যথিত প্রাণ এই আশা ল’য়ে,
 চেয়ে থাকে স্বরগের পানে।
কবে যে খুলিবে দ্বার, আসিবেন প্রভু,
 চিরোজ্জল মেঘ-আরোহণে॥

চেয়ে থাকে শান্ত আঁখি, আকাশের পানে,
 রুদ্ধ কেন তারকিত দ্বার?
এখন(ও) এখন(ও) কেন না পাই শুনিতে
 দূতদের বীণার ঝঙ্কার?

কত যে দিবস যায় অপেক্ষা করিয়ে,
 কতবার আসিছে রজনী।
ভাবে তারা সহসা কি পাইব শুনিতে,
 শূন্যপথে শত তূরীধ্বনি।

সাঁঝের আঁধার যবে ঢাকে এ ধরী,
 আলো ছায়া মিলে পরস্পরে।
পাঠায় একটি দিন চিরতরে যবে,
 অতীতের বিস্মৃতি সাগরে।


কত যে সুখের হাসি, হরষের গান,
 ল’য়ে যায়, ফিরিবে না আর।
কত যে আকুল শ্বাস, হৃদয়বেদনা,
 অশ্রুরাশি ঘের নিরাশার॥

ফিরিবে না, ফিরিবে না, যায়, চলে যায়,
 ধরণীর একটি দিবস।
কত আঁখি আনমনে হেরে গতি তা’র,
 নাহি দুঃখ নাহিক হরষ॥

এহেন সময় ভাবে কত শত প্রাণ,
 এই কিরে প্রকৃত সময়।
সমাপ্ত হবে কি এই জীবন-কাহিনী,
 সুখ-রবি হইবে উদয়?

“আবার আসিব,” এই আশ্বাস বচন,
 মৃদুভাষে আমাদের কাণে।
প্রভুর পবিত্র স্নেহ দয়া অনুপম,
 জানাইছে অনুতাপি জনে॥


জীবন-উৎসের ধারে আমরাও গিয়া,
 পরিব সে উজল বসন।
“আবার আসিব,” ইহা আমাদের(ও) তরে,
 কহেছেন পাপীর রতন॥

সংসার-সমরে কভু পাইও না ভয়,
 স্বর্গজাত যীশু-সেনাগণ।
সকল আঘাত হ’তে পিতার আশিস্‌,
 তোমাদের করিবে রক্ষণ॥

যদি গো মূর্চ্ছিত প্রায় ধরণী উপরে,
 মনে হয় পড়িব লুটা’য়ে।
“আবার আসিব,” এই মধুর বচন,
 শান্তি আনি দিবে ও হৃদয়ে॥

পড়িতে পড়িতে তুমি পড়িবে না আর,
 স্নেহ হাত ধরিবে তোমারে।
আতপজাপিত প্রাণ প্লাবিত হইবে,
 সুশীতল করুণা-নিঝরে॥


প্রথমে ভাবিবে তুমি ক্ষণিকের তরে,
 চারিদিক আঁধার আঁধার।
তখনি জ্বলিবে প্রাণে আলোক-আখরে,
 “ভয় নাই, আসিব আবার”॥

এহেন ত্রাতার এই সীমাহীন স্নেহ
 ধরণীর দুঃখ-পারাবারে।
সতত ভাসিছে, যেন চাঁদের কিরণ,
 এখানেও আমাদের তরে॥

যীশুর চরণ ধরে ওগো যাত্রিগণ,
 চেয়ে দেখ বিশ্বাস-নয়নে।
কণেকের এই ক্লেশ তুলনা করিতে
 পারিবে কি চিরসুখ-সনে?

অস্থায়িজীবন-পথ আসিছে ফুরা’য়ে,
 প্রবেশিব অনন্তজীবনে।
“আবার আসিব” ত্রাতা গেছেন কহিয়ে,
 লয়ে যেতে হেন পাপিগণে॥


গাও গাও এখানেই জয়ধ্বনি করে,
 প্রভু যীশু রাজা আমাদের।
তিনিই যে ত্রাণরবি অনন্ত আলোক,
 সত্য পথ সুখ-জীবনের॥

আমরা তাহার(ই) শিশু, উজল নগরে,
 আমাদের প্রকৃত আলয়।
যদিও বিদেশে দূরে রয়েছি এখন,
 তবু নহি একা নিরাশ্রয়॥

প্রভুর পবিত্র স্নেহ অতল গভীর,
 সীমাহীন বারিধি যেমন।
ভাসিয়া চলেছি সেই নিরমল স্রোতে,
 ধীরে ধীরে পিতার ভবন॥

একটি একটি করি’ দিন চলে যায়,
 মনে হয় আসিছে সে দিন।
যেই দিন উত্তরিব সুখময় কুলে,
 জগতের মলিনতাহীন॥


“আবার আসিব” এই অমৃত বচন,
 হৃদে রাখি গাও যীশু নাম।
অধীর হৃদয় শত এখনি লভিবে,
 এভবেই যীশুতে বিরাম॥

যথেষ্ট করুণা তাঁর আছে মম তরে,
 এই যদি ভাব একবার।
দূরে যাবে অধীরতা, আসিবে বিরাম,
 দূরে যা’বে মনের আঁধার॥

“আবার আসিব” এই আশ্বাস বচন,
 আছে হেথা আমাদের ভরে।
ধন্যবাদ করি তাই যীশু দয়াময়ে,
 বার বার কৃতজ্ঞ অন্তরে॥

“আবার আসিব” আহা! ধন্য এ বচন,
 ত্রাতা মম গেছেন কহিয়ে।
শান্তির প্রবাহ এই দুটি কথা ল’য়ে,
 কত প্রাণে গিয়াছে বহিয়ে॥