কর্মকর্তা ছিলেন নবগােপাল মিত্র। এই মেলায় গান ছিল মেজদাদার লেখা ‘জয় ভারতের জয়’, গণদাদার লেখা ‘লজ্জায় ভারত যশ গাইব কী করে’, বড়দাদার ‘মলিন মুখচন্দ্রমা ভারত তােমারি’। জ্যোতিদাদা এক গুপ্তসভা স্থাপন করেছেন, একটি পােড়াে-বাড়িতে তার অধিবেশন; ঋগ্বেদের পুঁথি, মড়ার মাথার খুলি আর খােলা তলােয়ার নিয়ে তার অনুষ্ঠান; রাজনারায়ণ বসু তার পুরােহিত; সেখানে আমরা ভারতউদ্ধারের দীক্ষা পেলেম।
এই-সকল আকাঙ্ক্ষা উৎসাহ উদ্যােগ এর কিছুই ঠেলাঠেলি ভিড়ের মধ্যে নয়। শান্ত অবকাশের ভিতর দিয়ে ধীরে ধীরে এর প্রভাব আমাদের অন্তরে প্রবেশ করেছিল। রাজসরকারের কোতােয়াল হয় তখন সতর্ক ছিল না নয় উদাসীন ছিল, তারা সভার সভ্যদের মাথার খুলিভঙ্গ বা রসভঙ্গ করতে আসে নি।
কলকাতা শহরের বক্ষ তখন পাথরে বাঁধানো হয় নি, অনেকখানি কাঁচা ছিল। তেলকলের ধোঁওয়ায় আকাশের মুখে তখনো কালি পড়ে নি। ইমারত-অরণ্যের ফাঁকায় ফাঁকায় পুকুরের জলের উপর সূর্যের আলাে ঝিকিয়ে যেত, বিকেলবেলায় অশথের ছায়া দীর্ঘতর হয়ে পড়ত, হাওয়ায় দুলত নারকেলগাছের পত্র-ঝালর, বাঁধা নালা বেয়ে গঙ্গার জল ঝর্নার মতাে ঝরে পড়ত আমাদের দক্ষিণ-বাগানের পুকুরে। মাঝে মাঝে গলি থেকে পালকি-বেহারার হাঁইহুঁই শব্দ আসত কানে, আর বড়ো রাস্তা থেকে সহিদের হেইয়ো হাঁক। সন্ধ্যাবেলায় জ্বলত তেলের প্রদীপ, তারই ক্ষীণ আলােয় মাদুর পেতে বুড়ি দাসীর কাছে শুনতুম রূপকথা। এই নিস্তব্ধপ্রায় জগতের মধ্যে আমি ছিলুম এক কোণের মানুষ, লাজুক নীরব নিশ্চঞ্চল।
আরো একটা কারণে আমাকে খাপছাড়া করেছিল। আমি ইস্কুলপালানাে ছেলে, পরীক্ষা দিই নি, পাস করি নি; মাস্টার আমার ভাবী-
৭৯