বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ - প্রফুল্লকুমার সরকার (১৯৪৭).pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যৌবনের সাধনা
১৯

উদ্ঘাটন করিয়া তিনি জাতির ত্রুটি ও দৌর্বল্য প্রদর্শন করিতে যেমন দ্বিধা করেন নাই, অন্যদিকে স্বজাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করিয়া আশার বাণীও শুনাইয়াছিলেন। জননী জন্মভূমি তাঁহার নিকট কেবল আকাশ, জল, মাটি ও লোকসমষ্টিমাত্র ছিল না,—তিনি ইহার মধ্যে চিন্ময়ী দেবী রূপই প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন। “বন্দে মাতরম্” সংগীতে মায়ের এই চিন্ময়ী রূপই ধ্যান করা হইয়াছে। তাঁহার স্বদেশপ্রেম ছিল ভক্তিরই নামান্তর। সর্বস্ব ত্যাগ—এই প্রেমের সাধনায় সিদ্ধি লাভের উপায়। স্বদেশপ্রেমের ‘গীতা’স্বরূপ ‘আনন্দমঠে’ এই সর্বস্ব ত্যাগের সাধনারই পথ প্রদর্শিত হইয়াছে। ‘সন্তানেরা’ বলিতেছেন,—জননী জন্মভূমিই আমাদের মা, আমাদের অন্য মা নাই;— আমাদের গৃহ নাই, পত্নী নাই, পুত্র পরিজন নাই,—আছেন কেবল জননী জন্মভূমি, তাঁহার সেবাতেই আমরা জীবন উৎসর্গ করিয়াছি।

 ‘বঙ্গদর্শন’-এর মধ্য দিয়াই বঙ্কিমচন্দ্র প্রথমে স্বদেশ-যজ্ঞের হোমানল প্রজ্বলিত করিয়াছিলেন। এই মহাযজ্ঞে তাঁহাকে সহায়তা করিবার জন্য যাঁহারা সহকর্মীরূপে তাঁহার পার্শ্বে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন, তাঁহারা সকলেই ছিলেন এক একজন দিকপাল, শক্তিমান পুরুষ। স্বদেশপ্রেমের অনির্বাণ অগ্নি তাঁহাদের হৃদয়ে প্রজ্বলিত হইয়াছিল এবং সেই অগ্নি চারিদিকে তাঁহারা ছড়াইয়া দিয়াছিলেন। দীনবন্ধু মিত্র, কবি হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, রমেশচন্দ্র দত্ত, অক্ষয়চন্দ্র সরকার, চন্দ্রশেখর