ইনি আপনার গুরুকে পিতৃসম জ্ঞানে যাহা করিয়াছেন, সস্তানে তাহার অপেক্ষা অধিক করিতে পারে না। বহুকাল হইতে লাহিড়ী মহাশয়ের সর্ববিধ সাহায্যের জন্য ইহার হস্ত উন্মুক্ত হইয়াছিল। নবকুমারকে পশ্চিমে পাঠাইয়া ইনি মাসে মাসে তাঁহার যাহা প্রয়োজন হইত জ্যেষ্ঠের ন্যায় যোগাইতেন; অনেক বিপদে লাহিড়ী মহাশয়কে বিবিধ প্রকারে সাহায্য করিতেন। এক্ষণে সেই শোকার্ত্ত পরিবার দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইল। কালীচরণ বাবু স্বীয় ব্যয়ে বাড়ী ভাড়া করিয়া তাহাতে ইহাদিগকে স্থাপন করিলেন; এবং সর্ব্ববিষয়ে জ্যেষ্ঠ পুত্রের ন্যায় তত্ত্বাবধান করিতে লাগিলেন। এই গ্রন্থে এত লোকের জীবন চরিত দিয়াছি ইহার সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত না দিয়া নিরস্ত থাকি কিরূপে? বলিতে কি এমন নীরব সাধুতা, এরূপ ধর্মভীরুতা ও এরূপ কর্ত্তব্য-পরায়ণতা আমরা অল্পই দেখিয়াছি। এই সকল মানুষ শিক্ষিত বাঙ্গালীদের গৌরব! শিক্ষিত বাঙ্গালীর নাম যে দেশে সম্মানার্হ হইয়াছে তাহা এইরূপ মনিষদিগকে দেখাইতে পায় যায় বলিয়া।
কালীচরণ ঘোষ।
১৮৩৫ সালের মে মাসে যশোর জেলার অন্তর্গত চৌগাছা গ্রামে ইহার জন্ম হয়। দুই বৎসর বয়সে মাতৃবিয়োগ হয়; এবং ৮ বৎসর বয়সে পিতৃবিয়োগ হয়। ইহার পিতা, গদাধর ঘোষ, গোবর-ডাঙ্গার জমিদার বাবুদের সরকারে বিষয় কর্ম্ম করিতেন। পিতার মৃত্যুর পর ইহাদের চারি সহোদরের রক্ষণাবেক্ষণের ভার ইহার পিতৃব্য শ্রীধর ঘোষ মহাশয়ের উপরে পড়ে। ৮ বৎসর বয়সের সময় হইতে দ্বিতীয় সহোদর অম্বিকাচরণ ঘোষের সহিত ইনি ৱিদ্যা শিক্ষার্থ কৃষ্ণনগরে প্রেরিত হন। অম্বিকাচরণ অল্পকালের মধ্যে কৃষ্ণনগর কালেজের একজন লব্ধ-প্রতিষ্ঠ ছাত্র হইয়া উঠেন। তিনি বিদ্যাশিক্ষা বিষয়ে সুবিখ্যাত অধ্যাপক উমেশচন্দ্র দত্তের সহাধ্যায়ী ও সমকক্ষ ছিলেন। এই দুই জনে এমনি প্রীতি ছিল যে, কৃষ্ণনগরে জনশ্রুতি আছে যে, যে দারুণ বসন্ত রোগে অম্বিকাচরণের মৃত্যু হয়, সেই রোগের মধ্যে যুবক উমেশচন্দ্রের অভিভাবকগণ যাহাতে তিনি পীড়িত বন্ধুর নিকটে না যান সেই জন্য তাহাকে ঘরে দ্বার বদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিলেন; কিন্তু উমেশচন্দ্র ঘরের চাল ফুড়িয়া পলাইয়া গিয়া অম্বিকাচরণের সেবা করেন। এই ঘটনা তখনকার এডুকেশন কাউনশিলের সভাপতি বাটন (বেথুন) সাহেবের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করে। তিনি ইহার উল্লেখ করিয়া উমেশচক্রকে প্রকাশ্য সভাতে প্রশংসা করেন।