বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৪৯১

 তথাপি মন্থন থামিল না। এত জিনিস পাইয়া, বোধহয় সকলে ভাবিয়াছিল যে, আরো পাক দিলে, আরো ভাল ভাল জিনিস উঠিবে। কিন্তু এত লোভের কি সাজা, এবারে আর ভাল জিনিস না উঠিয়া, উঠিল, কালকূট নামক বিষম বিষ! সেই সাংঘাতিক বিষের গন্ধ শুঁকিয়াই ত্রিভূবন অজ্ঞান হইয়া গেল!

 এই ভয়ঙ্কর ব্যাপার দেখিয়া ব্রহ্মা শিবকে বলিলেন, “এখন উপায় কি হইবে? সকল যে যায়!”

 ব্রহ্মার কথায় মহাদেব, সৃষ্টি রক্ষার জন্য সেই বিষ নিজের কণ্ঠের ভিতরে রাখিয়া দিলেন। ইহাতেই তাহার কণ্ঠ নীল হইয়া যায়। সেইজন্য মহাদেবের এক নাম ‘নীলকণ্ঠ'।

 এদিকে দৈত্যগণ অমৃতের জন্য ক্ষেপিয়া গিয়া দেবতাদিগের নিকট হইতে তাহা কাড়িয়া লইয়াছে! দেবতাদের এমন শক্তি নাই যে, যুদ্ধ করিয়া উহাদের হাত হইতে তাহা উদ্ধার করেন। হায় হায়! এত ক্লেশ, এত পরিশ্রমের ফল কি এই?

 এই বিপদের সময় নারায়ণ অসুরদের হাত হইতে অমৃত উদ্ধারের উপায় চিন্তা করিতে লাগিলেন। তারপর তিনি একটি অপরূপ সুন্দরী কন্যার বেশে অসুরদিগের নিকটে গিয়া উপস্থিত হইলেন। অসুরেরা যখন তাঁহার সেই সুন্দর মুখখানি দেখিতে পাইল, তখন আর তাহাদের মুখে কথা সরিল না, চোখে পলক পড়িল না। তাহারা হাঁ করিয়া, হতবুদ্ধির ন্যায়, গোল চোখে, জোড়হাতে তাঁহার সামনে দাঁড়াইয়া রহিল। তারপর যখন তিনি হাত মেলিয়া, হাসিতে হাসিতে, তাহাদের নিকট অমৃতের পাত্রটি চাহিলেন, তখন নিতান্ত ব্যস্তভাবে তাহা তাঁহার হাতে তুলিয়া দিয়া, যেন তাহারা কতই কৃতার্থ হইল!


রাহুর কথা

 তারপর দেবগণ অপার আনন্দের সহিত সেই অমৃত আহার করিতে লাগিলেন। এই সময়ে রাহু নামক একটা ধূর্ত দানব দেবতার সাজ ধরিয়া তাঁহাদের সঙ্গে অমৃত খাইতে বসিয়া গিয়াছিল। কিন্তু চন্দ্র আর সূর্য তাহাকে চিনিয়া ফেলাতে, তাহার সেই চাতুরীতে কোন ফল হইল না। সে সবে মাত্র অমৃত মুখে দিয়াছে, এমন সময় চন্দ্র সূর্য নারায়ণকে তাহার কথা বলিয়া দিলেন। আর সেই মুহূর্তেই নারায়ণের সুদর্শন নামক অস্ত্র আসিয়া তাহার গলা কাটিয়া ফেলিল।

 কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে রাহুর গলা কাটা গেলেও, তাহার মাথাটা আকাশে উঠিয়া ভীষণ ভ্রূকুটির সহিত দাঁত খিঁচাইয়া গর্জন করিতে লাগিল। অমৃত তাহার গলা পর্যন্ত গিয়াছিল, এইজন্যই তাহার মাথাটার মৃত্যু হইল না। সেই মাথাটা এখনো আকাশের কোণে গুঁড়ি মারিয়া বসিয়া থাকে, আর চন্দ্র বা সূর্য সেই পথে গেলেই, তাঁহাকে ধরিয়া গিলিবার চেষ্টা করে! ইহাতেই না কি গ্রহণ হয়! যাহা হউক, কেবল মাথাটি মাত্র থাকাতে, সে চন্দ্র সূর্যকে গিলিয়াও তাঁহাদিগকে রাখিতে পারে না, তাঁহারা তাহার গলার ছিদ্র দিয়া বাহির হইয়া আসেন। যদি তাহার পেট থাকিত তবে বড় বিপদের কথাই হইত!

 তারপর লবণ সমুদ্রের তীরে, দেবতা আর অসুরগণের ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। অস্ত্রে