বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র
গণেশ

 শিবের সঙ্গে যখন পার্বতীর বিবাহ হইল তখন পার্বতী কৈলাস পর্বতে আসিয়া ঘরকন্না করিতে লাগিলেন। শিব খেয়ালশূন্য লোক, তাহাতে আবার ভূতের দল নিয়া থাকেন— মেয়েরা বাড়িতে থাকিলে কেমন করিয়া চলাফেরা করিতে হয়, সেদিকে তাঁহার নজর একটু কম। যখন তিনি তাঁহার ভূতদের নিয়া বাড়ির ভিতরে আসিয়া উপস্থিত হন, পার্বতী আর তাঁর সখীদের হাতে বড় অসুবিধা হয়। দরোয়ান নন্দী তাঁহাকে মানা করিলেও তিনি তাহা শোনেন না, তাঁহাকে ধমকাইয়া ঠিক করিয়া দেন।

 পার্বতীর সখী জয়া আর বিজয়া ক্রমাগতই বলেন, “ইহারা সকলেই শিবের লোক, কাজেই তাঁহার ধমকে ভয় পায়। আমাদের নিজের একটি ভালো লোক হইলে বেশ হইত।” এ কথায় পার্বতী কাদা দিয়া যারপরনাই সুন্দর একটা খোকা তয়ের করিলেন, তাহার নাম হইল গণেশ। সেই খোকাটিকে তিনি সুন্দর পোশাক আর গহনা পরাইয়া দরোয়ান সাজাইয়া লাঠি হাতে দিয়া দরজায় বসাইয়া দিলেন। গণেশ জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখানে বসে আমি কি করব?” পার্বতী বলিলেন, “বাবা, তুমি এখানে দরোয়ান হবে, কাউকে ঢুকতে দিবে না।”

 এই বলিয়া গণেশের মুখে বার বার চুমো খাইয়া পার্বতী স্নান করিতে গেলেন আর তাহার খানিক পরেই শিব তাঁহার ভূতপ্রেত লইয়া আসিয়া উপস্থিত হইলেন, কিন্তু গণেশ দরজা ছাড়িবার লোক নহেন। তিনি বলিলেন, “কোথা যাচ্ছ? থামো, মা স্নান করছেন” বলিয়াই তিনি লাঠি তুলিলেন। শিব আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “আরে আমি শিব।” গণেশ বলিলেন, “শিব আবার কে? তুমি কেন যাবে?” শিব বলিলেন, “এ তো দেখছি ভারি রোখা। আরে আমি পার্বতীর স্বামী।” বলিয়া তিনি যেই ঢুকিতে যাইবেন, অমনি গণেশ ধাঁই করিয়া তার পিঠে লাঠি মারিয়া বসিয়াছেন।

 তখন তো বড়ই বিষম কাণ্ড উপস্থিত হইল। শিবের হুকুমে তাঁহার ভূতেরা আসিয়া গণেশকে শাসাইতে লাগিল। গণেশ তাহাদের বিকট চেহারা দেখিয়া একটুও ভয় পাইলেন। তিনি বলিলেন, “বাঃ! মুখের ছিরি দেখ, যা বেটারা এখান থেকে।”

 ভুতেরা বড়ই মুশকিলে পড়িল। তাহাদের হাসিও পাইয়াছে। রাগ হইয়াছে, আবার ভয়ও হইয়াছে। তাহারা এক একবার শিবের কাছে ফিরিয়া যায়। আবার তাঁহার তাড়া খাইয়া গণেশের কাছে আসিয়া দাঁত খিচায়। গণেশ লাঠি লইয়া তাড়া করিলে আবার শিবের কাছে ছুটিয়া যায়। যাহা হউক শেষে তাহারা শিবের কথায় খুব সাহস পাইয়া গণেশের সঙ্গে যুদ্ধ আরম্ভ করিল। নন্দী আর ভৃঙ্গী দুজনে আসিয়া তাহার দুই পা ধরিয়া দিল টান, আর গণেশ ঠাস্‌ঠাস্‌‌ করিয়া তাহাদের দুজনকে মারিলেন দুই থাপ্পড়। তারপর দরজার হুড়কা লইয়া ভূতের দলকে তিনি এমনি ঠেঙ্গান ঠেঙ্গাইলেন যে কি বলিব!

 এদিকে নারদ মুনি গিয়া দেবতাদিগকে এই যুদ্ধের সংবাদ দিয়াছেন, দেবতারাও সকলে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, ইন্দ্র প্রভৃতি দেবতা মুনি-ঋষি, অপ্সরা, কেহই আসিতে বাকি নাই। শিব তখন ব্রহ্মাকে বলিলেন যে, “দেখ তো ঐ ছেলেটিকে বলিয়া