চেয়ে বড় তারাটির নাম রোহিণী! ইংরাজিতে ইহাকে বলে Aldebaran। ওরায়ণের ডান হাতের তারাটির নাম আর্দ্রা, বাম হাতের তারাটির নাম মৃগশিরা।
এই ষাঁড়ই আমাদের পঞ্জিকার বৃষরাশি। সূর্য এক-এক মাসে আকাশের এক-এক স্থানে থাকে। সেই স্থানগুলিকে এক-একটা রাশি বলে। বৈশাখ মাসে আকাশের যে স্থানে সূর্য থাকে, তাহার নাম মেষরাশি। এইরূপে মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ, মীন-বারো মাসে এই বারোটা রাশির ভিতর দিয়া সূর্য ঘুরিয়া আইসে। অবশ্য সূর্য যে বাস্তবিকই বৎসরে এতটা পথ হাঁটিয়া আইসে, আর আমরা এক জায়গায় গালে হাত দিয়া বসিয়া তাহা দেখি, এরূপ নহে। আসলে আমরাই সূর্যের চারিধারে ঘুরিতেছি বলিয়া এরূপ দেখা যায়।
রাশিগুলির কোনটা কোথায় আছে তাহা খুঁজিয়া বাহির করা তোমাদের পক্ষে সহজ হইবে না। বৃষরাশিটাকে চিনিলে। ছায়াপথের এধারে বৃষরাশি, ওধারে মিথুনরাশি। তারপর কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক ঘুরিয়া আসিলেই আবার ছায়াপথে উপস্থিত হওয়া যায়। আজকাল শনিগ্রহটি ইহারই নিকটে দেখিতে পাইবে।
সিরিয়স হইতে সোজা চলিয়া ওরায়ণের কোমরবন্ধ, তৎপর বৃষরাশির মাথা। এই লাইন ধরিয়া আর খানিক দূর গেলে আর একটি খুব ছোট নক্ষত্রমণ্ডলী পাওয়া যায়। ছোটছোট কয়েকটি নক্ষত্র এক জায়গায় দল বাঁধিয়া আছে, দেখিলে সহজেই চিনিতে পারিবে। এই নক্ষত্রমণ্ডলীর নাম কৃত্তিকা। ইংরাজিতে ইহাদিগকে বলে the Pleiades আমাদের দেশের সাধারণ লোকে বলে, কৃত্তিকারা সাত বোন অর্থাৎ, সাধারণ চক্ষে ঐ স্থানে সাতটি ছোট-ছোট তারা দেখা যায়। কিন্তু দৃষ্টি খুব প্রখর হইলে ইহা অপেক্ষা বেশিও দেখা যায়। আবার একটু কানা গোছের হইলে সাতটিও দেখিতে পায় না। তোমরা এই তারাগুলি গণিয়া পরীক্ষা করিতে পার, কাহার চশমার দরকার।
এই তারাগুলিকে অনেকে সপ্তর্ষিমণ্ডল বলে, কিন্তু তাহা ভুল। সপ্তর্ষিমণ্ডলকে ইংরাজিতে বলে Great Bear (বড় ভল্লুক)। উহার সামনের দুটি তারার ভিতর দিয়া লাইন টানিলে ধ্রুবতারাকে পাওয়া যায়। এইজন্য এই তারা দুটির নাম হইয়াছে প্রদর্শক (the pointers)।
পৃথিবীর মেরুদণ্ড টাকে খুব লম্বা করিয়া বাড়াইয়া দিলে ঐ ধ্রুবতারার খুব কাছ দিয়া যায়। এইজন্যই ধ্রুবতারার উদয় অস্ত নাই, উহা সর্বদাই একস্থানে রহিয়াছে। উহার কাছে অন্যান্য তারাগুলিকে লক্ষ্য করিয়া দেখিলে দেখিতে পাইবে যে উহারা এই ধ্রুবতারারই চারিদিকে ঘোরে। আসলে ধ্রুবতারাও একেবারে স্থির নহে, কারণ, সে আকাশের সুমেরুর ঠিক উপরে নাই। ধ্রুবতারা আকাশের সুমেরুর চারিধারে ঘরে। কিন্তু সে আকাশের সুমেরুর খুব কাছে। বলিয়া এত অল্প স্থানের ভিতর ঘোরে যে, সহজ চক্ষে আমরা তাহাকে স্থির বলিয়াই মনে করি।
যাহারা পৃথিবীর ঠিক মাঝখানে (বিষুবরেখার উপরে) আছে তাহারা ধ্রুবতারাকে আকাশের প্রান্তে দেখিতে পায়। বিষুবরেখার দক্ষিণের লোকেরা ধ্রুবতারা দেখিতে পায় না। বিষুবরেখা হইতে যত উত্তরে আসিবে, ধ্রুবতারাকে তত ঊর্ধ্বে দেখিতে পাইবে। সুমেরুতে দাঁড়াইতে পারিলে, উহ একেবারে মাথার উপরে আসিবে। ঠিক মাথার উপর হইতে আকাশের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত স্থানটুকুকে তিন ভাগ করিলে যতখানি হয়, আমরা আকাশের প্রান্ত হইতে ধ্রুবকে মোটামুটি ততখানি উপরে দেখিতে পাই। সুতরাং ঠিক উত্তর দিকটি একবার স্থির করিয়া
উপেন্দ্র—১২২