বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১০০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
১০০৯

কোনো সন্দেহ নাই।

 গ্রহণের সময় আমরা কালো কাচের ভিতর দিয়া সূর্য দেখিতেছিলাম। একটি কানা উড়িয়া স্ত্রীলোক সেই কাচের ভিতর দিয়া সূর্য দেখিয়া ভারি আশ্চর্য হইয়া গেল। সে মনে ভাবে নাই যে, সূর্যটাকে ওরূপ আধখানা দেখিতে পাইবে। খানিক ভাবিয়া সে বলিল, আমি কিনা একচোখে দেখি, তাই আধখানা বৈ দেখতে পাইনি।


মেঘের মুলুক

 ছিলাম মাঠে, এসেছি মেঘের মুলুকে দার্জিলিঙে। কলকাতার চেয়ে সাড়ে সাত হাজার ফুট উঁচুতে। সাড়ে সাত হাজার ফুটে প্রায় দেড় মাইল হয়; সেটা যে ঠিক কতখানি উঁচু, মনের ভিতরে এর একটা পরিষ্কার আন্দাজ করা ভারি শক্ত।

 শকুনগুলো অনেক সময় প্রায় হাজার ফুট উঁচুতে উঠতে পারে। আবার বর্ষার মেঘও মাঝে মাঝে হাজার ফুট নিচু অবধি নেমে আসে; হয়তো তার চেয়েও নীচে নামে, বা শকুন যত উঁচুতে উঠতে পারে, সাড়ে সাত হাজার ফুট তার চেয়েও পাঁচ-সাত গুণ উঁচু।

 আমরা ছেলেবেলায় বুড়োদের মুখে শুনতাম যে মেঘে্রা বাঁশের পাতা খেতে পাহাড়ে যায়, তখন কোচেরা (একরকম পাহাড়ী লোক, যাদের নামে কুচবিহার হয়েছে)। তাদের বল্লম দিয়ে মারে। সেই মেঘ তারা নাচের লোকদের কাছে বেচতে আনে, তাকেই আমরা বলি অভ্র!

 এ কথা যে ঠিক নয়, তা অবশ্যি তোমরা সকলেই জান। টিপিপানা মেঘে রোদ পড়লে তার চেহারা অনেকের কাছে অভ্রের মতো ঠেকতে পারে। মেঘ হাওয়ায় ভেসে ভেসে ক্রমাগতই গিযে পাহাড়ের গায়ে ৫কছে আর সেখানে বাঁশেরও অভাব নাই। এখন যেমন দার্জিলিং অবধি রেল হয়েছে, আগে তো আর তেমন ছিল না। সেকালেব লোকে দূর থেকেই এসব দেখে, অভ্রের গল্প তয়ের করেছিল।

 শোনা যায় একজন সাহেব পাহাড়ী মুটের ঝাকায় চড়ে প্রথমে দার্জিলিং এসেছিলেন। সে অবশ্যি অনেকদিনের কথা, এখন পাহাড়ে উঠবার কোনো রকমের পথই ছিল না। জানোয়ার চলবার পথ ছিল, সেই পথ ধরে পাহাড়ীরা গভীর বনের ভিতর দিয়ে নীচে নেমে আসত আর লোকজনের উপর ভারি দৌরাত্ম্য করত। সেই পাহাড়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করবার জন্য আমাদের সরকার পাহাড়ের নীচে, বনেব ধারে পাহারা রাখতেন।

 পাহাড়ের নীচেকার এসব জায়গার নাম তরাই। তরাই বড় ভয়ানক স্থান, তখন আরো ভয়ানক ছিল। সেখানে গেলে দু-তিন মাসের ভিতরে জ্বর আর পিলেয় ভুগে হাড্ডি সার হয়ে যেতে হত। সরকারি পাহারাওয়ালারা এমনি করে ভুগত আর পাহাড়ীদের মুখে শুনত যে পাহাড়ের উপরকার জায়গা বড়ই খাসা। শেষে দু-একজন লোক সাহস করে উপরে গিয়ে দেখে এল সত্যিসত্যিই সে সকল জায়গা খুব ভালো।

 এমনি করে লোকে প্রথমে দার্জিলিঙের কথা জানতে পেরেছিল। দার্জিলিং যাবার পথটি যখন প্রথম তয়ের হয়, তখন তার প্রত্যেক মাইলে ষাট হাজার টাকা খরচ পড়ে। সেই পথের ধারে ধারেই এখন রেলের লাইন বসেছে। খেলনার মতন ছোট ছোট গাড়ি দেখলে হাসি পায়। ছোট একটি ইঞ্জিন, তার পিছনে এরকম আট-দশখানা গাড়ি জুড়ে ট্রেন হয়েছে তারই


উপেন্দ্র—১২৭