পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাণ্ড । বৃদ্ধ-বনিত কাহারও নিদ্রা হয় নাই। “শত মদনমোহন শুমলাঙ্গ রামকে অভিষিক্ত হইবার পর পরিধানে পীত-কৌশেয়-বসন, সর্ব্ব অলঙ্কারে অলস্কৃত, কিরীট-বলয়ে উজ্জ্বল, ও কৌস্তুভালঙ্কার ভূষিত হইয়া ঈষংহান্ত করত গজারোহণে আসিতে কখন দেখিব ? তাহার পার্শ্বে শ্বেতচ্ছত্রধর লক্ষণান্বিত লক্ষ্মণকে কখন দেখিব ? প্রভাত কখনৃ হইবে ? রামকে আমরা কখনৃ দেখিব ?" পুরবাসিগণ সকলেই এইরূপ উৎকষ্ঠিতচিত্ত হইয়াছিল। “রাজ এখনও উঠিলেন না কেন” এইরূপ চিস্তা করিয়া সুমন্ত্র— যথায় রাজ অবস্থিত ছিলেন, তথায় ধীরে ধীরে গমন করিল। অনন্তর সে, অত্যুদয়স্থচক জয়ধ্বনি করিয়া ভুতল-বিলুষ্টিত-মস্তকে রাজাকে প্রণাম করিল, রাজাকে অত্যস্ত কাতর দেখিয়া কৈকেয়ীকে জিজ্ঞাসা করিল ;—“দেবি ! কৈকেয়ি । আপনার জয় হউক, রাজাকে অসুস্থ দেখিতেছি কেন ?" কৈকেয়ী তাহাকে বলিল ; রাজা, সমস্ত রাত্রি “রাম রাম রাম" শব্দ করিয়া রামকেই চিন্তা করিয়াছেন ;-নিদ্রাযান্‌ নাই, রাজা রাত্রিজাগরণ বশতঃই অমুস্থবৎ প্রতীয়মান হইতেছেন, শীঘ্র রামকে এখানে লইয়া আইস ; রাজা দেখিতে ইচ্ছা করিতেছেন। সুমন্ত কহিল ;–“হে ভামিনি । রাজার অনুমতি না পাইলে আমি যাই কিরূপে ?” মন্ত্রীর সেই বাক্য শ্রৰণ করিয়ারাজা মন্ত্রীকে বলিলেন;- “সুমন্ত্র ! সুন্দর মূর্ত্তি রামকে দেখিব—সত্বর লইয়া আইস।” এইরূপ কথিত হইয়া সুমন্ত্র অবিলম্বে রামভবনে গমন করিল ; এবং অবারিতভাবে প্রবেশ করিয়া তাড়াতাড়ি রামকে বলিতে লাগিল ;–“হে কমল, লোচন রাম ! তোমার মঙ্গল হউক ; শীঘ্র আমার সহিত পিতৃভবনে আইস ; রাজা, তোমাকে দেখিতে ইচ্ছুক হইয়াছেন।” এই কথা বলিলে, রাম শশব্যস্ত ভাবে সারথি-হুমন্ত্র ও লক্ষ্মণ সমবিব্যাহারে রথে আরোহণ করিয়া দ্রুত-গমন করিতে লাগিলেন । মধ্যকক্ষে অবস্থিত বসিষ্ঠাদির প্রতি ত্বরাবশত কেবল দৃষ্টি ভঙ্গী-বিশেষত্বারাই শিষ্টাচার প্রদর্শন করিলেন। পিতৃ সমীপে উপস্থিত হইয়া পিতৃচরণে প্রণাম করিলেন। রাজা তাড়াতাড়ি উঠিয়া রামকে আলিঙ্গন করিবার জগু যেমন বাহু প্রসারণ করবেন অমনি হে রাম!’ বলিয়া দুঃখবশ তঃ মধ্যস্থলে নিপতিত হইলেন। রাম, হায় হায় করিয়া শীঘ্র তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া ক্রোড়ে স্থাপন করিলেন । রাজাকে মূচ্ছিত দেখিয়া সকল রমণীগণ রোদন করিয়া উঠিল। “এত রোদন হইতেছে কি জন্য ? ২৩ ' ভাবিয়া বসিষ্ঠও তথায় আসিলেন। রাম, জিজ্ঞাসা করিলেন, রাজার এইরূপ দুঃখের কারণ কি ?” রাম এই কথা জিজ্ঞাসা করিলে কৈকেয়ী রামকে বলিতে লাগিল ;–“রাম! তুমিই রাজার এইরূপ ফুঃখের কারণ ; দুঃখ শাস্তির জন্য তোমাকে কিছু রাজার হিতজনক কার্য্য করিতে হইবে। তুমি সত্যপ্রতিজ্ঞ ; রাজাকে সত্যবাদী কর । রাজা, সন্তুষ্টচিত্তে আমাকে দুইটী বর দিয়াছেন ; কিন্তু সেই বরের সফলতা তোমার ইচ্ছাধীন ; রাজা তোমার নিকট তাহ উল্লেখ করিতে লজ্জা পাইতেছেন ; ফলত—সত্যপাশে দৃঢ়বদ্ধ পিতাকে পরিত্রাণ করা তোমার উচিত। পিতাকে নরক হইতে পরিত্রাণ করে" ইহাই পুত্র শব্দের অর্থ" । রাম তাহার বাক্য শ্রবণ করিয়া শূলাহতের ন্যায় ব্যথিত ভাবে কৈকেয়ীকে বললেন;–“ম!! আমাকে এত বলিতেছেন কেন ? * পিতার জন্য আমি প্রাণত্যাগ করিতে পারি ; সুতীব্র বিষ পান করিতে পারি; সীতাকে অথবা কৌসল্যাকে পরিত্যাগ করিতে পারি ; রাজ্যত্যাগ করিতেও প্রস্তুত আছি । যে ব্যক্তি পিতার মৌখিকআদেশ না পাইয়াও তাহার অভিপ্রেত কার্য্য করে, সে উত্তম ; আদিষ্ট হইয় যে সেই কার্য্য করে, সে মধ্যম বলিয়া কীর্ত্তিত ; আর যে আদিষ্ট হইয়াও ঐ কার্য্য করে না, সে পুত্র পিতার মল বলিয়া নির্দিষ্ট । অতএব পিতা আমাকে যাহা বলেন, আমি তাহা করিতে প্রস্তুত ; ইহা সত্য, ইহা সত্য ; রাম এক মুখে দুই কথা বলে না?” কৈকেয়ী, রামের এই প্রতিজ্ঞা শুনিয়া বলিতে আরত্ব করিল,— রাম! তোমার অভিষেকের জন্য যে সকল দ্রব্যাদির আয়োজন হইয়াছে, তত্ত্বারাই আমার প্রিয়পুত্র ভরতের অভিষেক হওয়া আবশুক ; আর পিতার আজ্ঞাক্রমে অপর বলে তুমি আজই শীঘ্র শীঘ্র চীরবস্তু পরিধান ও জটাভার ধারণ করিয়া বনে গমন কর ; এবং তথায় ফলমূল প্রভৃতি মুনিখাদ্য ভোজনকরত চতুর্দশবৎসর বাম করবে। আজ ইহাই তোমার পিতার কার্য্য, তোমার ইহা করা উচিত। হে রঘুনন্দন ! তবে কিনা রাজা,—নিজমুখে তোমাকে এই কথা বলিতে লজ্জিত হইতেছেন ; শ্রীরাম কহিলেন, ভরতেরই রাজ্য হউক, আমি দণ্ডকারণ্যে গমন করিড়েছি ; কিন্তু রাজা আমাকে এবিষয় কিছু বলিতেছেন না কেন ? তাহার কারণ বুঝতে পারিতেছি না।" রাজাদশরথ রামের এই কথা শুনিয়া, সন্মুখে দণ্ডায়মান রামের প্রতি দৃষ্টিপাতপূর্বক দুঃখিতভাবে দুঃখ