পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(*8 রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত করিয়া মাতৃভাবে তাহাকে প্রতিপালন করিতে লাগিল। সীতা রাক্ষস-সমূহ মধ্যে অবস্থান করিতে লাগিলেন । তিনি নিতান্ত কুশ ও দীন-ভাবাপন্ন হইলেন ; শরীর সংস্কারাদি করিতেন না । দুঃখে বদনমগুল বিশুষ্ক হইতে লাগিল, ভয়ে বিহবলা হইলেন, সর্ব্বদা “হা রাম! ই সাম! বলিয়া বিলাপ করিতে লাগিলেন।” সপ্তম অধ্যায় সমাপ্ত। অষ্টম অধ্যায়। অনন্তর শ্রীরাম, কামরূপী মায়াবী রাক্ষসকে বিনাশ করিয়া আশ্রমাভিমুখে প্রস্থান করিতেছেন । ইতিমধ্যে মলিন-বদন ও দুঃখিতান্তঃকরণ মহামতি লক্ষ্মণকে দূর হইতে পথিমধ্যে অবলোকন করিয়া মনে মনে চিন্তা করিতে লাগিলেন। আমি মে মায়াসীতা করিয়াছি, লক্ষণ ইহা জানে না । আমি ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান সকল ঘটনা জানিমাও লক্ষ্মণের নিকট প্রাকৃত মনুষ্যের ন্যায় প্রবঞ্চনা করিয়া শোক প্রকাশ করি। যদি উপস্থিত সময় সীতার নিমিত্ত শোক প্রকাশ না করিয়া তুষ্ট্ৰীস্তাবে তাশ্রমে বাস করি, তাহা হইলে আর অন্য কোন ছলে কোটি রাক্ষসকুল বিনাশ করিব । যদি এ সময় হইতে কামুক পুরুষের ন্যায় দুঃখ-সন্তপ্ত হইয়৷ শোক করিতে আরম্ভ করি, তাহা হইলে ক্রমশঃ সীতার অনুসন্ধান-ছলে রাক্ষসালয়ে গমন করিতে পারিল । লঙ্কায় গমন করিবামাত্র রাবণকে সবংশে নষ্ট করিয়া আমারই আজ্ঞানুসারে অগ্নি প্রবিষ্ট প্রকৃত সীতাকে পুনর্ব্বার অগ্নি হইতে গ্রহণপূর্বক অযোধ্যায় প্রতিগমন করিব । আমি ব্রহ্মার প্রার্থনানুসারে মনুষ্য-ভাবে জন্মগ্রহণ করিয়াছি, অতএব পৃথিবীতে মনুষ্য-ভাব প্রকাশ করিয়া কিছুকাল বাস করিব । এই জগতে আমার মনুষ্য-চরিত প্রকাশিত হইলে যাহারা ভক্তিমাৰ্গানুসারী হইয় উহু, শ্রবণ করিবে, তাহাদিগের অনায়াসে মুক্তি লাভ হইবে। ঐরামচন্দ্র মনে মনে এইরূপ নিশ্চয় করিয়া সমীপগত লক্ষ্মণকে কহিলেন;– “হে লক্ষ্মণ! তুমি আমার প্রিয়তম জানকীকে পরিত্যাগ করিয়া কি হেতু আগমন করিলে ? হে ভ্রাতঃ! এতক্ষণে রাক্ষসেরা জনকনন্দিনীকে হরণ বা ভক্ষণ করিয়াছে।” অনস্তর লক্ষ্মণ কৃতাঞ্জলি হইয়া রোদন করিতে করিতে জানকীর দুর্ব্বাক্যসকল শ্রীরামের নিকট কহিতে লাগিলেন । হে অধ্যাজু-রামায়ণ । রাম জনকনন্দিনী সীতা হা লক্ষ্মণ!” এইরূপ আপনার বাক্য সদৃশ রাক্ষসের কপট বাক্য শ্রবণ করিয়া রোদন করিতে করিতে তাড়াতাড়ি আমাকে কহিলেন “লক্ষ্মণ তুমি গমন কর।” অনস্তর আমি রোদন.পরায়ণ জানকীকে কহিলাম,—“ দেবি ! আপনি যাহা শ্রবণ করিলেন, উহা কখনই শ্রীরামচনের বাক্য নহে, সেই মায়ামূগরূপধারী কপট রাক্ষসাধমের বাক্য, হে গুচিস্মিতে ! ধৈর্য্যাবলম্বন করুন, কোন চিন্তা করিবেন না।” আমি এই রূপে দেবীকে বহুতর সাস্তুনা করিলাম, সাধবী জনকনন্দিনী আমার বাক্যে বিশ্বাস না করিয়া আমাকে যে সকল দুর্ব্বাক্য বলিয়াছেন, তাহা আপনার অগ্রে বলিতে পারি না । হে দেব ! আমি সেই সময় হস্তযুগল দ্বারা কর্ণদ্বয় আচ্ছদন পুর্ব্বক পর্ণশালা হইতে নির্গত হইয়া আপনাকে দেখিতে আসিয়াছি।” শ্রীরাম কহিলেন, স্রোতঃ ! অতিশয় অনুচিত কার্য্য করিয়াছ ! যেহেতু স্ত্রী জনের বাক্য সত্য জ্ঞান করিয়া সেই শুভাননা জানকীকে পরিত্যাগপূর্বক এস্থানে আসিয়াছ, নিশ্চয়ই সীতাকে রাক্ষসেরা গ্রহণ ব: ভক্ষণ করিয়াছে।” শ্রীরাম এই প্রকার চিন্তাকুল হইয়া অতি সত্বর ভাশমে গমনানন্তর সীতাকে সে স্থানে অবলোকন না করিয়া অতি দুঃখিতান্তঃকরণে বিলাপ করিতে লাগিলেন । হা প্রিয়ে ! তুমি কোথায় গমন করিয়াছ। পূর্ব্ববং তোমাকে আশ্রমে দেখিতে পাইতেছি না। হে প্রিয়ে! তুমি কি আমাকে মুগ্ধ করিবার জন্য লীলাচ্ছলে কোন স্থানে লুক্কায়িত। হইয়াছ ? অনন্তর ঐরামচন্দ্র সমস্ত বনমধ্যে জানকীকে অন্বেষণ করিলেন, কিন্তু কোন স্থানে দেখিতে না পাইয়া—বনদেবতা ও বনবাসি-প্রাণিসকলকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। হে বনদেবতাগণ ! আমার প্রাণবল্লভ সীতা কোথায় আছেন, বলিয়া দেও। হে মৃগগণ! হে পক্ষিগণ । হুে তরুসকল ! আমার প্রিয়তম জানকী কোন স্থানে আছেন, তোমরা আমাকে অবলোকন করাও । সর্ব্বজ্ঞ শ্রীরাম এই প্রকার বহুতর বিলাপ করিতে করিতে নান স্থান অন্বেষণ করিতে লাগিলেন। সীতা কোন স্থানে আছেন, ইহা সর্ব্বপ্রকারে জানিয়াও জানিলেন না। ঐরামচন্দ্র আনন্দময় হইয়াও শোক করিতে লাগিলেন, এবং অচল * হইয়াও নানা স্থানে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন।

  • স্বচল—ধীর ও গতি-শক্তিহীন । ।