পাতা:অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RRy w furs পিয়াস সোপ, কিটিংস পাউডার, হলসি ডিসটোেপার, লিপটনের চা। আবদলে আজিজ হাকিমের রৌশনেসেকাৎ, উৎকণট দাদের মলম । নিজের ছোট ক্যানভাসের সটকেস ও ছোট বিছানাটা হাতে লইয়া অপ সেন্টশনে নামিল-রাত অনেক, শহর সম্পপণ্য অপরিচিত, জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, • ওয়েটিংরম দোতলায়, রাত্রি সেখানে কাটানোই নিরাপদ মনে হইল । সকালে উঠিয়া জিনিসপত্র স্টেশনে জমা দিয়া সে বাহিরে আসিয়া দাঁড়াইল । অধমাইল-ব্যাপী দীঘ শোভাযাত্রা করিয়া সমসজিত হস্তীপীঠে সোনার হাওদায় কোন শাহজাদী নগরভ্রমণে বাহির হইয়াছেন কি ? দধারে আবেদনকারী ও ওমরাহ দল আভুমি তসলীম করিয়া অনগ্রহভিক্ষার অপেক্ষায় করজোড়ে খাড়া আছে কি ? নব আগন্তুক নরেন্দ্রনাথ পাংশাবেগমের কোন সরাইখানায় ধর্মপানরত বন্ধ পারস্যদেশীয় শেখের নিকট পথের কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছিল ? কিন্তু এ যে একেবারে কলকাতার মতই সব ! এমন কি মণিলাল জয়েলাসের বিজ্ঞাপন পযন্ত । দজন লোক কলিকাতা হইতে বেড়াইতে আসিয়াছিল, টাঙাভাড়া সস্তা পড়িবে বলিয়া তাহাকে তাহার সঙ্গে লইবার প্রভাব করিল। কুতৰেয় পথে একজন বলিল,মশাই, আরও বার-দাই দিল্লী এসেছি, কুতবের মরগীর কাটলেট -আঃ, সে যা জিনিস, খান নি কখনও, না ? চলন, এক ডজন কাটলেট অড়ায় দিয়ে তবে উঠিব কুতবমিনারে । বাল্যকালে দেওয়ান পরে পড়িবার সময় পরনো দিল্লীর কথা পড়িয়া তাহায় কলপনা করিতে গিয়া বার বার স্কুলের পাশের একটা পরাতন ইটখোলার ছাৰি অপর মনে উদয় হইত, আজ অপ, দেখিল পরাতন দিল্লী বাল্যের সেইটের পাঁজােটা নয়। কুতবমিনার নতুন দিল্লী শহর হইতে যে এতদার তাহা সে ভাৰে নাই। তদপেরি সে দেখিয়া বিস্মিত হইল, এই দীঘ পথের দাধারে মরভূমিক্স মত অনর্বর কাঁটাগাছ ও ফণিমনসার ঝোপে ভরা রৌদ্রদখি প্রান্তরের এখানেওখানে সবােত্র ভাঙা বাড়ি, মিনার-মসজিদ, কবর, খিলান, দেওয়াল । সাতটা প্রাচীন মত রাজধানীর মােক কওকাল পথের দাধারে উচুনিচু জমিতে বাবলাগাছ ও ক্যাকটাস গাছের ঝোপ-ঝাপের আড়ালে হৃতগৌরব নিস্তবধতায় আত্মগোপন করিয়া আছে-পথবীরায় পিথেীরার দিল্লী, লালকোট, দাসবংশের দিল্লী, তোগালকদের দিল্লী, আলাউদ্দীন খিলজীর দিল্লী, শিরি ও জাহানপানাহ, মোগলদেয় দিল্লী। অপর জীবনে এ রকম দশ্য দেখে নাই, কখনো কল্পনাও করে নাই, সে অবাক হইল, অভিভূত হইল, নীরব হইয়া গেল, গাইড-বাক উলটাইতে ভুলিয়া গেল, ম্যাপের নম্বর মিলাইয়া দেখিতে ভুলিয়া গেল-মহাকালের এই বিরাট শোভাযাত্রা একটার পর একটা বায়োসেম্বকাপের ছবির মত চলিয়া যাইবার দশ্যে সে যেন সক্রিবৎহারা হইয়া পড়িল । আরও বিশেষ হইল। এইজন্য যে, মন তাহার নবীন আছে । কখনও কিছু দেখে নাই, চিরকাল অস্তিাকুড়ের আবর্জনায় কাটাইয়াছে অথচ মনে হইয়া উঠিয়াছে সবগ্রাসী, বঙ্গভূক্ষ । তাই সে যাহা দেখিতেছিল, তাহা যেন বাহরের চোখটা দিয়া নয়, সে কোন তীক্ষদশী তৃতীয় নেত্র, যেন না খলিলে বাহিরের চোখের দেখাটা নির্ম্মফল হইয়া যায়।