পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মনসাপোতার বাডির পুরাতন দিনগুলির মত দুষ্টুমিভরা চোখে হাসিমুখে বলিতেছে- আর কক্ষনো যাবো না তোমার সঙ্গে । আর কক্ষনো নাদেখে নিও । ফাস্তুন মাস । কলিকাতায় সুন্দর দক্ষিণ হাওয়া বহিতেছে, সকালে একটু শীতও, বোডিংয়ের বারান্দাতে অপু বিছানা পাতিয়াছিল ! খুব ভোবে ঘুম ভাঙ্গিযা বিছানায় শুইয়া শুইয়াই তাহার মনে হইল, আজ আর স্কুল নাই, টিউশনি নাই-আব বেলা দশটায় নাকে-মুখে পুঁজিয়া কোথাও ছুটিতে হইবে না-আজ সমস্ত সময়টা তাহার নিজেব, তাহা লইয়া সে যাতা খুশি কবিতে পাধে –আজি সে মুক্ত !-মুক্ত :-মুক্ত -আব কাহাকে ও গ্রাহ করে না। সে । কথাটা ভাবিতেই সারা দেহ অপূর্ণ উল্লাসে শিহবিয়া উঠিল-বাধনছেড়া মুক্তির উল্লাস । বহুকাল পর স্বাধীনতার আস্বাদন আজ পাওয়া গেল । ঐ আকাশের ক্রমবিলীয়মান নক্ষত্রটার মতই আজ সে দুব পথের পথিকঅজানা!ব উদ্দেশ্যে সে যাত্রার আরম্ভ হয়ত আজই হয়, কি কালই হয় । পুলকিত মনে বিছানা হইতে উঠিয়া নাপিত ডাকাইয়া কামার্কুল, ফর্সা কাপড় পরিল। পুরাতন শৌখিনতা আবার মাথা চাড়া দিয়া উঠার দরুন দরজির দোকানো একটা মটকার পাঞ্জাবি তৈয়ারি করিতে দিয়াছিল, সেটা নিজে গিয়া লইয়া আসিল । ভাবিল-একবার ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখে আসি নুতন বই কি এসেছে, আবাব কতদিনে কলকাতায় ফিবি, কে জানে ? বৈকালে মিউজিয়ামে রকৃফেলার ট্রাস্টের পক্ষ হইতে মশক ও ম্যালেরিয়া সম্বন্ধে বক্তৃতা ছিল। অপুও গেল। বক্তৃতাটি সচিত্র। একটি ছবি দেখিয়া চমকিয়া উঠিল। মাশকের জীবনেতিহাসের প্রথম পর্যায়ে সেটা থাকে কীটতারপরে হঠাৎ কীটের খোলস ছাডিয়া সেটা পাখা গজাইয়া উডিয়া যায়। ঠিক যে সময়ে কীটদেহটা অসাড়, প্রাণহীন অবস্থায় জলের তলায় ডুবিয়া যাইতেছেনব-কলেবরধারী মশকটা পাখা ছাড়িয়া জল হইতে শূন্যে উডিয়া গেল। মানুষেরও তো এমন হইতে পারে । জলের তলায় সস্তরণকারী অন্যান্য মশক কীটের চোখে তাদের সঙ্গী তো মরিয়াই গেল-তাদের চোখের সামনে দেহটা তলাইয়া যাইতেছে। কিন্তু জলের উধেবর্ণ যে জগতে মশক নবজন্মলাভ করিল, এরা তো আর কোনও খবরই রাখে না, সে জগতে প্রবেশের অধিকার তখনও তারা তো অর্জন করে নাই-মুতু্য দ্বারা, অন্ততঃ তাদের চোখে যা মৃত্যু তার দ্বারা। এই মশক নিয়ন্তরের জীব, তার পক্ষে যা বৈজ্ঞানিক সত্য, মানুষের পক্ষে তা কি মিথ্যা ? R*