পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গাছপালা, খাল, নদী, পাহাড় কঁাকর-ভরা জমি, গোটা শাহাবাদ জেলাটা তাহার পায়ের তলা দিয়া পলাইতেছে। অনেক দূর পর্যন্ত শোণ নদের বালুর চড়া জ্যোৎস্নায় অদ্ভুত দেখাইতেছে। নীলনদী ? ঠিক এটা যেন নীলনদী। ওপারে সাত-আট মাইল গাধার পিঠে চড়িয়া গেলে ফ্যারাও রামেসিসের তৈরি আবু সিম্বেলের বিরাট পাষাণ মন্দির-ধূসর অস্পষ্ট কুয়াসায় ঘেরা মরুভূমির মধ্যে অতীতকালের বিস্মৃত দেবদেবীর মন্দির, এপিস, আইসিস, হোরাস, হাথর, রা-নীলনদ যেমন গতির মুখে উপলখণ্ড পাশে ঠেলিয়া রাখিয়া পলাইয়া চলেমহাকালের বিরাট রথচক্র তাণ্ডব-নৃত্যছন্দে সব স্থাবর অস্থাবর জিনিসকে পিছু ফেলিয়া মহাবেগে চলিবার সময় এই বিরাট গ্র্যানাইট মন্দিরকে পথের পাশে ফেলিয়া রাখিয়া চলিয়া গিয়াছে, জনহীন মরুভূমির মধ্যে বিস্তৃত সভ্যতার চিহ্ন-মন্দিরটা কোন বিস্তৃত ও বাতিল দেবদেবীর উদ্দেশ্যে গঠিত ও উৎসর্গীকৃত ! একটু রাত্রে ভদ্রলোকটি বলিলেন, এ লাইনে ভাল খাবার পাবেন না, আমার সঙ্গে খাবার আছে, আসুন খাওয়া যাক । তঁহার স্ত্রী কলার পাতা চিরিয়া সকলকে বেঞ্চির উপর পাতিয়া দিলেন -লুচি, হালুয়া ও সন্দেশ,-সকলকে পরিবেশন করিলেন। ভদ্রলোকটি বলিলেন, আপনি খানকতক বেশী লুচি নিন, আমরা তো আজ মোগলসরাইয়ে ব্রেকজানি করব, আপনি তো সোজা দিল্লী চলেছেন। এ-ও অপুর এক অভিজ্ঞতা। পথে বাহির হইলে এত শীঘ্রও এমন ঘনিষ্ঠতা হয়! এক গলির মধ্যে শহরে শত বর্ষ বাস করিলেও তো হয় না ? ভদ্রলোকটি নিজের পরিচয় দিলেন, নাগপুরের কাছে কোন গবর্ণমেণ্ট রিজার্ভ ফরেস্ট-এ কাজ করেন, ছুটি লইয়া কালীঘাটে শ্বশুরবাড়ি আসিয়াছিলেন, ছুটি অন্তে কর্মস্থানে চলিয়াছেন। অপুকে ঠিকানা দিলেন। বার বার অনুরোধ করিলেন, সে যেন দিল্পী হইতে ফিরিবার পথে একবার অতি অবশ্য অবশ্য যায়, বাঙালীর মুখ মোটে দেখিতে পান না-অপু গেলে তঁাহারা তো কথা কহিয়া বঁচোন। মোগলসরাই-এ গাড়ি দাড়াইল । অপু মালপত্র নামাইতে সাহায্য করিল। হাসিয়া বলিল-আচ্ছা বৌ-ঠাকরণ, নমস্কার, শীগগিরই আপনাদের ওখানে উপদ্রব করছি কিন্তু । দিল্লীতে ট্রেন পৌছাইল রাত্রি সাড়ে এগারোটায়। গাজিয়াবাদী স্টেশন হইতেই সে বাহিরের দিকে ঝুকিয়া চাহিয়া দেখিলযে-দিলীতে গাড়ি আসিতেছিল। তাহা এস, কাপুর কোম্পানীর দিল্লী নয়,