পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তার পরিচিত দেশ-এখানেই মা রোজ হাতে করিয়া খাওয়ায়, চুল আঁচড়াইয়া দেয়, দিদি কাপড় পরাইয়া দেয়, এই গাওঁীটুকু ছাড়াইলেই তাহার চারিধারে ঘিরিয়া অপরিচয়ের অকূল জলধি ! তাহার শিশু মন খৈ পায় না। ঐ যে বাগানের ওদিকে বঁাশবন-ওর পাশ কাটিয়া যে সরু পথটা ওধারে কোথায় চলিয়া গেল-তুমি বরাবর সোজা যদি ও পথটা বাহিয়া চলিয়া যাও, তবে শাঁখারীপুকুরের পাড়ের মধ্যে অজানা গুপ্তধনের দেশে পড়িবে-বড় গাছের তলায় সেখানে বৃষ্টির জলে মাটি খসিয়া পড়িয়াছো-কত মোহরভরা হাড়ি-কলসীর কানা বাহির হইয়া আছে, অন্ধকার বনঝোপের নীচে, কচু, ওল ও বন-কলমীর চকুচকে সবুজ পাতার আডালে চাপা-কেউ জানে না কোথায়। একদিন পাঠশালায় এমন একটি ঘটনা হইয়াছিল, যাহা তাহার জীবনের একটি নতুন অভিজ্ঞতা ! সেদিন বৈকালে পাঠশালায় অন্য কেহ উপস্থিত না থাকায় কোন গল্পগুজব হইল না, পড়াশুনা হইতেছিল-সে গিয়া বসিয়া পড়িতেছিল শিশুবোধক-এমন সময় গুরুমহাশয় বলিলেন-শেলেট নেও, শ্রতিলিখন লেখো মুখে মুখে বলিয়া গেলেও অপু বুঝিয়াছিল। গুরুমহাশয় নিজের কথা বলিতেছেন না, মুখস্থ বলিতেছেন, সে যেমন দাশুরায়ের পাঁচালী ছড়া মুখস্থ বলে, তেমনি । শুনিতে শুনিতে তাহার মনে হইল অনেকগুলো অমন সুন্দর কথা এক-সঙ্গে পর পর সে কখনো শোনে নাই। ও সকল কথার অর্থ সে বুঝিতেছিল না, কিন্তু অজানা শব্দ ও ললিত পদের ধ্বনি, কঙ্কার-জড়ানো এক অপরিচিত শব্দসঙ্গীত, অনভ্যস্ত শিশুকর্ণে অপূর্ব ঠেকিল এবং সব কথার অর্থ না বোঝার দরুণই কুহেলি-ঘেরা অস্পষ্ট শব্দ-সমষ্টির পিছন হইতে একটা অপূর্ব দেশের ছবি বার বার উকি মারিতেছিল। বড় হইয়া স্কুলে পড়িবার সময় সে বাহির করিয়াছিল ছেলেবেলাকার এই মুখস্থ শ্রতিলিখন কোথায় আছে “এই সেই জনস্থান মধ্যবর্তী প্রস্রবণ-গিরি। ইহার শিখরদেশ আকাশপথে সতত সমীর-সঞ্চারমান-জলধর-পটল-সংযোগে নিরন্তর নিবিড় নীলিমায় অলঙ্কতঅধিত্যক-প্রদেশ ঘন-সন্নিবিষ্ট বন-পাদপসমূহে সমাচ্ছন্ন থাকাতে স্নিগ্ধ শীতল ও রমণীয়, • • • • পাদদেশে প্রসন্ন-সিলিল গোদাবরী তরঙ্গ বিস্তার করিয়া------” সে ঠিক বলিতে পারে না, বুঝাইতে পারে না, কিন্তু সে জানে তাহার মনে হয়, অনেক সময়েই মনে হয়-“সেই যে বছর-দুই আগে কুঠির মাঠে সরস্বতী পূজার দিন নীলকণ্ঠ পাখী দেখিতে গিয়াছিল, সেদিন মাঠের ধারা era