পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিয়া কহিল, ভাল হই ত এতেই হব, বাগদী দুলের ঘরে কেউ কখনো ওষুধ খেয়ে বঁচে না । দিন দুই-তিন এমনি গেল। প্রতিবেশীরা খবর পাইয়া দেখিতে আসিল । যে যাহা মুষ্টিযোেগ জানিত, হরিণের শিঙ-ঘষা জল, গোেট-কড়ি পুড়াইয়া মধুতে মাড়িয়া চাটাইয়া দেওয়া ইত্যাদি অব্যর্থ ঔষধের সন্ধান দিয়া যে যাহার কাজে গোল । ছেলেমানুষ কাঙালী ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিতে, মা তাহাকে কাছে টানিয়া লইয়া কহিল, কোবরেজের বড়িতে কিছু হল না। বাবা, আর ওদের ওষুধে কাজ হবে ? আমি এমনি ভাল হবে । কঙালী কঁাদিয়া কহিল, তুই বাড়ি ”ত খেলি নে মা, উনুনে ফেলে দিলি । এমনি কি কেউ সারে ? আমি এমনি সেরে যাবো । তার চেয়ে তুই দুটো ভাতে-ভাত ফুটিয়ে নিয়ে খা দিকি, আমি চেয়ে দেখি । কাঙালী এই প্রথম অপটু হস্তে ভাত রাধিতে প্রবৃত্ত হইল। না। পারিল ফ্যান ঝাড়িতে, না পারিল ভাল করিয়া ভাত বাড়িতে । উনান তাহার জ্বলে না-ভিতরে জল পড়িয়া ধুয়া হয় ; ভাত ঢালিতে চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ে ; মায়ের চোখ ছলছল করিয়া আসিল । নিজে একবার উঠিবার চেষ্টা করিল, কিন্তু মাথা সোজা করিতে পারিল না, শয্যায় লুটাইয়া পড়িল । খাওয়া হইয়া গেলে ছেলেকে কাছে লইয়া কি করিয়া কি করিতে হয় বিধিমতে উপদেশ দিতে গিয়া তাহার ক্ষীণকণ্ঠ থামিয়া গেল, চোখ দিয়া কেবল অবিরলধারে জল পড়িতে লাগিল । গ্রামে ঈশ্বর নাপিত নাড়ী দেখিতে জানিত, পরদিন সকালে সে হাত দেখিয়া তাহারই সুমুখে মুখ গম্ভীর করিল, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল এবং শেষে মাথা নাড়িয়া উঠিয়! গেল। কাঙালীর মা ইহার অর্থ বুঝিল, কিন্তু তাহার ভয়ই হইল না । সকলে চলিয়া গেলে সে ছেলেকে কহিল, এইবার একবার তাকে ডেকে আনতে পারিস বাবা ? কাকে মা ?