পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরীক্ষণে রাধুনী অন্নব্যঞ্জন বহিয়া আনিয়া উপস্থিত করিল। সে চলিয়া গেলে লক্ষ্মী আসনে বসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, রাধুনীটি কে, পিসীমা ? আগে ত দেখিনি ? পিসীমা হাস্য করিয়া বলিলেন, চিনতে পারলে না বৌমা, ও যে আমাদের বিপিনের বেী । লক্ষ্মী স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল । মনে মনে বুঝিল, তাহাকে চমৎকৃত করিবার জন্যই এতখানি ষড়যন্ত্র এমন করিয়া গোপনে রাখা হইয়াছিল। কিছুক্ষণে আপনাকে সামলাইয়া লইয়া জিজ্ঞাসু-মুখে পিসীমার মুখের | || পিসীমা বলিলেন, বিপিন মারা গেছে, শুনেছ ত ? লক্ষ্মী শুনে নাই কিছুই কিন্তু এইমাত্র যে তাহার খাবার দিয়া গেল, সে যে বিধবা, তাহা চাহিলেই বুঝা যায়। ঘাড় নাড়িয়া কহিল, হাঁ । পিসীমা অবশিষ্ট ঘটনাটা বিবৃত করিয়া কহিলেন, যা ধূলোগুড়ো ছিল, মামলায় মামলায় সর্বস্ব খুইয়ে বিপিন মারা গেল । বাকী টাকার দায়ে বাড়িটাও যেত । আমরাই পরামর্শ দিলাম, মেজবৌ, বছর দু’বছর গতরে পেট শোধ দে, তোর আপোগণ্ড ছেলের মাথা গোজবার স্থানটুকু বাচুক । লক্ষ্মী বিবর্ণ-মুখে তেমনই পলকহীন চক্ষুতে নিঃশব্দে চাহিয়া রহিল। পিসীমা সহসা গলা খাটাে করিয়া বলিলেন, তবু আমি একদিন ওকে আড়ালে ডেকে বলেছিলাম, মেজবেী, যা হবার তা তা হলো, এখন ধারধোর করে। যেমন করে হোক, একবার কাশী গিয়ে বৌমার হাতে-পায়ে গিয়ে পড় । ছেলেটাকে তার গায়ের উপর নিয়ে ফেলে দিয়ে বল গে, দিদি, এর তো কোন দোষ নেই, একে বঁাচাও-- কথাগুলি আবৃত্তি করিতেই পিসীমার চোখ জল-ভারাক্রান্ত হইয়া উঠিল, অঞ্চলে মুছিয়া ফেলিয়া বলিলেন, কিন্তু সেই যে মাথা গুজে মুখ বুজে বসে রইল, হঁ-না একটা জবাব পর্যন্ত দিলে না । হরিলক্ষ্মী বুঝিল, ইহার সমস্ত অপরাধের ভারই তাহার মাথায় গিয়া S.