পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে বাল্যকালে পিতার নিকট শুনিতে পাইত ; অশ্বচালনা যুদ্ধের একটি অংশ -ইহাতে কত দৃঢ় চা, সাহস এবং সহিষ্ণুতা প্রয়োজন । যাহা “যুদ্ধের অংশ, তাহাই গৌরবের সামগ্রী । সম্মানের নিকট যুদ্ধ-ব্যবসায়ীরা প্রাণকেও নিতান্ত তুচ্ছ জ্ঞান করে, আজ শুধু সম্মানলাভের জন্যই চার্লস এ আঘাত তুচ্ছ জ্ঞান করিয়াছে- হয়ত বা সে প্রাণ হারাইবে । মেরি শিহরিয়া উঠিল। একমাত্র যাহার হস্তগ্রহণ করিয়া সম্মানিত করিয়াছে, সে হয়ত প্রাণত্যাগ করিবে ; এরূর চিন্তা হৃদয় প্রফুল্পকারী নহে, তাই অত্যন্ত আগ্রহ এবং ভীতির সহিত মেরি দাড়াইয়া দেখিতে লাগিল ; চার্লসের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য মনে মনে প্রার্থনা করিল। তাহার পর বড় কোলাহল হইতে লাগিল ; দূরবীন লােগাইয়া অনেকেই দেখিল চার্লস পুনর্বার অগ্রে আসিতেছে ; কিন্তু ইতিমধ্যে মেরি মনে মনে আপনাকে এই অল্প সময়ের মধ্যেই চালসের সহিত এরূপ জড়িত করিয়া লইয়াছিল, য, তাহার এই দুঃসাহসিক কার্যের জন্য আপনাকে নিতান্ত গৌরবান্বিত এবং শ্লাঘা বলিয়া বোধ করিল। বাস্তবিক সেবারেও চার্লস জয়ী, হইল,-আনন্দে মেরির সহসা বাক্য নিঃসৃত হইল না, পরে নিজের গলদেশ হইতে ঘড়ি ও চেন খুলিয়া লইয়া তাহার গলায় পরাইয়া দিয়া কহিল, ‘তুমি এ গ্রামের রত্ন, তোমার মত সাহসী যুবা আর কেহ নাই।’ চার্লস স্মিতমুখে এ প্রশংসা গ্রহণ করিল। সে রাত্রে মেরি সকলকেই নিমন্ত্রিত করিল, সন্ধ্যার পর তাহার বাটীতে খুব সমারোহে ভোজন ব্যাপার সমাধা হইতে চলিল ; আহারে বসিয়া মেরি চার্লসের পার্শ্বে উপবেশন করিয়া, মৃদুকণ্ঠে কহিল, ‘তোমার জন্য বড় ভয় পাইয়াছিলাম।” চার্লস ঈষৎ হাসিয়া বলিল, “কেন ?" ‘বড় কঠিন আঘাত লাগিয়াছিল,-তুমি ভিন্ন আর কেহ বােধহয় অশ্বপুষ্ঠে স্থান রাখিতে পারিত না ?” চার্লস বিনয়নম্রকণ্ঠে কহিল, “আমার আঘাত আরোগ্য হইয়াছে ; আমার জন্য তুমি দুঃখিত হইয়াছিলে, এমন সৌভাগ্য পূর্বে কখন হয় নাই 8