পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

টপ করিয়া একটা বড় রকমের ফোটা শুভ্র কাগজের উপর পতিত হইল । লিও খাতাখানা ঈষৎ সরাইয়া কলমের মুখটা মুছিতে মুছিতে বলিল, “মেরি, তোমার মুখ দিয়া বড় তীব্র সুরার গন্ধ বাহির হইতেছে ; গন্ধ আমার সহ্যু হয় না-সরিয়া বাস । অত কাছে বসিয়া থাকিলে আমার সমস্ত ভুল হইয়া যাইবে।” এক দণ্ডে মেরির চক্ষু দুটি চকচক করিয়া উঠিল বলিল ; “আমি তীব্র সুরা পান করি নাই।” “হইতে পারে । কিন্তু আমার নিকট ও গন্ধ বড় উগ্র বোধ হইতেছে ; তুমি হয় সরিয়া বস, না হয় গৃহে যাও ।” মেরি উঠিয়া দাড়াইল । সে চিরকাল আব্দর ও যত্নের মধ্যে লালিত পালিত । এরূপ তাচ্ছিল্যের কথা শুনা তাহার অভ্যাস নাহে ; বড় অপমান বোধ হইল। তাহার সমস্ত হৃদয় আত্মাভিমানে পরিপূর্ণ, তাই এ ক্ষুদ্র যুবার কোমল অথচ রীতিমত দৃঢ় ও নিভীক সত্য কথা তাহার সমস্ত শরীরে অকস্মাৎ খর বিষের জ্বালা জ্বালাইয়া দিল। দাড়াইবার সময় সে ভাবিয়াছিল, খুব দুটো চড়া কথা শুনাইয়া দিবে ; মিথ্যাবাদী, অকৃতজ্ঞ প্রভৃতি শব্দগুলা আরোপ করিয়া, তাহার বুকে ছুরির মত বিদ্ধ করিয়া দিবে। --তারপর যথারীতি খুব একচেটি কলহ করিয়া চিরদিনের মত বিচ্ছেদ করিয়া চলিয়া যাইবে, কিন্তু দাড়াইয়া উঠিয়া তাহার শব্দশাস্ত্রের অভিধানটা একেবারে কোথায় হারাইয়া গেল ! ভ্র কুঞ্চিত করিল, চক্ষু বিস্ফারিত করিল, দন্তে অধর দংশন করিল। কিন্তু কথা বাহির হইল না। সম্মুখের দর্পণে সে চিত্র লিও দেখিতে পাইল । কাছে আসিয়া মেরির উন্নত গ্রীবার একপার্শ্বে হাত, রাখিয়া বলিল, “অপমান বোধ হইয়াছে ? মেরির আত্মাভিমান এবার কথা খুজিয়া পাইল। তীব্রকণ্ঠে কহিল, “তুমি নীচ এবং ঈর্ষাপরবশ, তাই অপমান করিলে |’ লিও ধীরে ধীরে সরিয়া গেল । কহিল, ‘মেরি, জগতের মধ্যে ঐ দুটি কথা আমার সহ্যু হয় না । অমন কথা আর মুখে আনিও না ! (?