পাতা:অরক্ষণীয়া - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরক্ষণীয়া ص؟ ক্ষণেক পরে যখন সে কথঞ্চিৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া তাহাকে ধরিয়া তুলিতে গেল, তখন জ্ঞানদা জোর করিয়া পায়ের উপর মুখ চাপিয়া কঁদিতে কঁাদিতে কহিল, বাবার মরণকালে তুমি নিজের মুখে তঁাকে একটা সান্তনা দিয়ে যাও—আমার অদৃষ্ট পরে যাই থাকি-এ সময় আমার মতন আমার ভাবনাটাকেও যেন তিনি এইখানেই ফেলে রেখে যেতে পারেন--আর তোমার কাছে আমি কখনও কিছু চাইব না।-বলিয়া তেমনি করিয়াই মাথা খুড়িয়া কঁাদিতে লাগিল। তাহার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দুর্ভাগ্য পিতা অত্যন্ত অসময়ে অকালে মরিতেছে-আজ আর তাহার কাণ্ডজ্ঞান ছিল না- এত লোকের সম্মুখে কি করিতেছে, কি বলিতেছে, কিছুই ভাবিয়া দেখিল নাক্রমাগত একভাবে মাথা খুড়িতে লাগিল। কিন্তু অতুল সংযমী লোক । জ্ঞানদার এই ব্যবহারে অন্তরে যত ক্লেশই অনুভব করুক, বাহিরে এতগুলি কৌতুহলী চক্ষের উপর কঠিন হইয়া উঠিল। জোর করিয়া পা ছাড়াইয়া লইয়া মৃদু তিরস্কারের স্বরে কহিল, ছিঃ, শান্ত হও, কান্নাকাটি ক’রো না-আমার যা বলবার তা আমি বলব বই কি । বলিয়া মুমূর্ষুর শয্যার একাংশে গিয়া উপবেশন করিল। দুর্গামণি স্বামীর শিয়রে বসিয়া ছিলেন, অতুলের মুখের পানে চাহিয়া নিঃশব্দে কঁদিতে লাগিলেন । প্রতিবেশী নীলকণ্ঠ চাটুয্যে দ্বারের উপরে দাডাইয়া ছিলেন ; অতুলের বিলম্ব দেখিয়া কহিলেন, প্রিয়নাথের এখনো একটু জ্ঞান আছে বাবা, যা বলবে, এই বেলা বেশ চেচিয়ে বল—তা হলেই বুঝতে পারবে। বলা বাহুল্য, বৃদ্ধের এই প্রস্তাব আরও দুই-একজন তৎক্ষণাৎ অনুমোদন করিল। জনতা দেখিয়া অতুল প্রথমেই ক্রুদ্ধ হইয়াছিল; তাহার উপর ইহাদের এই নিতান্ত অশোভন কৌতুহলে সে মনে মনে আগুন হইয়া কহিল, আপনারা নিরর্থক ভিড় করে থেকে ত কোন উপকার করতে