পাতা:অরক্ষণীয়া - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tR অরক্ষণীয়া মায়ের অবস্থা দেখিয়া ভয়ে চমকাইয়া উঠিল । তঁহার কোটির প্রবিষ্ট রক্তশূন্য চােখ দুটি আজ ফুলিয়া রাঙা হইয়া উঠিয়াছে। মেয়েকে দেখিবামাত্রই তাহার ক্রন্দনের বেগ একেবারে সহস্ৰমুখী হইয়া উঠিল। ইঙ্গিতে কাছে ডাকিয়া মেয়ের বুকে মুখ রাখিয়া মা আজ ছোট্ট মেয়েটির মতই ফোপাইয়া ফোপাইয়া কঁাদিতে লাগিলেন । বহুক্ষণে কান্না যখন থামিল, তখন মেয়ে কহিল, আমাকে কি তুমি চেনো না মা যে, কেউ আমাকে তোমার কাছ-ছাড়া করতে পারে ? এ ত কাকার বাড়ি নয় মা, এ আমার বাবার বাড়ি । তিনি খেতে না দেন, তখন ত আর লজা থাকবে না-যা করে হোক তখন তোমাকে আমি খাওয়াতে পারব মা !-বলিয়া মেয়ে আজ মা হইয়া মাকে মেয়ের মত কোলে করিয়া বসিয়া রহিল। খানিক পরে মা শ্রান্ত-দেহে ঘুমাইয়া পড়িলেন। কিন্তু মেয়ে গভীর রাত্রি পর্যন্ত জাগিয়া থাকিয়াও স্থির করিতে পারিল না, তাহার এই ‘যা-হোক'টা তখন কি হইবে! সে-দুদিনে মায়ের খাওয়া-পরাটা সে কেমন করিয়া কোথা হইতে সংগ্রহ করিবে ! জ্ঞানদাকে বিদায় করার প্রস্তাবটা ছোটবৌ শুনিতে পাইয়া স্বামীকে নির্জনে ডাকিয়া কহিল, তোমার কি ভীমরতি হয়েচে যে, ভাজের পরামর্শে এই অসময়ে মায়ের কাছ থেকে মেয়েকে দূর করবার কথা বলে এলে ? কসাই,-যাদের জবাই করাই ব্যবসা, তাদেরও তোমাদের চেয়ে দয়া-মায়া আছে । যাই হােক, কাজটা নাকি একেবারেই অসম্ভব, তাই অনাথ চুপ করিয়া গেল ; না হইলে এ-সকল ব্যাপারে সে স্ত্রীর বাধ্য, এতবড় দোষারোপ তাহার অতিবড় শত্রুরাও তাহার প্রতি করিতে পারিত না । কিন্তু দুৰ্গা হয়ত এই আসন্নকালেও মেয়ে লইয়া আর একবার হরিপালে যাইতে পারিতেন, কিন্তু সেখানে সেই যে পাত্র, যে নিজের পাঁচ-ছয়টি সন্তানের জননীকে অন্তঃসত্ত্ব অবস্থায় লাথি মারিয়া হত্য করিয়াছে, তাহার কথা মনে হইলেই তঁহার হৃৎকম্প উপস্থিত হইত।